ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা

১০ বছরে দ্বিগুণ শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ০৩:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৫০ বার পড়া হয়েছে

ছবি: সংগৃহিত

দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বছরে বছরে বাড়ছে। তাতেও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া কমছে না। বরং গত ১০ বছরে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, মানের দিক দিয়ে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। এ ছাড়া বিদেশে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তি ও খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগসহ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করছে।

দেশের প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক মেয়াদে বেশির ভাগ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে দেশে ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ইউজিসির তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই চান উন্নত জীবন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা এখনো তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারছি না। এতে তরুণেরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এর বাইরে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, দেশে একধরনের অনিশ্চয়তা, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া দেশ ছাড়তে চাওয়ার অন্যতম কারণ।

ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য গেছেন ৫৫টি দেশে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮।

আর ২০১৩ সালে বিদেশে গিয়েছিলেন ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, ১০ বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করেন এ-সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ফরিদুল হক বলেন, ‘বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। আমার ধারণা, গত বছর (২০২৩ সাল) এই সংখ্যা ছিল ১ লাখের বেশি।’

ইউনেসকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি, ৮ হাজার ৫২৪ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য (৬ হাজার ৫৮৬ জন), আর তৃতীয় কানাডা (৫ হাজার ৮৩৫ জন)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ মাহমুদুল হাসান নকীব স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে বিদেশে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরে এ দেশে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট চাকরির ব্যবস্থা। দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিকের শিক্ষার্থীরা একই কাতারে একই চাকরির দিকে ছুটছেন। এখানে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নিজের জীবনে হতাশা আনতে চাই না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী মুবাশ্বিরা তাসনিম বলেন, ‘দেশে সবাই ভালো চাকরি বলতে বোঝেন সরকারি চাকরি। কিন্তু এর বাইরেও চাকরি আছে, সেটা সমাজ মানতে চায় না। তাই বিদেশে ক্যারিয়ার গড়তে চান।’

ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে গেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থী বৃদ্ধির চিত্র পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের ব্যালান্স অব পেমেন্টস উপবিভাগের প্রতিবেদনেও। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিদেশে উচ্চশিক্ষা বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো টাকার পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় কোনো র‍্যাঙ্কিং নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অবশ্য সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় র‍্যাঙ্কিং করার সুপারিশ করেছে। আর আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে।

২০২৩ সালের টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। তবে প্রথম ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়নি। র‍্যাঙ্কিংয়ের ৮০১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে আছে বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলো হলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। অন্যদিকে, ১০০১ থেকে ১,২০০তম অবস্থানের মধ্যে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া, র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২০১ থেকে ১৫০০-এর মধ্যে রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এর আগের বছরের র‍্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য ৬০১ থেকে ৮০০-এর মধ্যে অবস্থান ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির। ১৩টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ১০৪টি দেশের ১ হাজার ৭৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এই র‍্যাঙ্কিং করা হয়।

অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান মনে করেন, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। সহজে চাকরিতে ঢোকার সুযোগ এবং উন্নত জীবনব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, উন্নত দেশে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম উচ্চশিক্ষা। অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ যাচ্ছেন। এর সঙ্গে আর্থসামাজিক ব্যবস্থা, নগরায়ণ, উন্নত ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান জড়িত। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার কারণ শুধু মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নয়।

ফিরে আসার ব্যবস্থা করা উচিৎ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন মনে করেন, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া বাড়ার কারণ প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা। তিনি বলেন, প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের আকর্ষণ করতে পারছে না। এর ফল হিসেবে তাঁরা বিদেশে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য তরুণেরা বিদেশ যাবেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাঁরা যেন ফিরে আসেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যদি সেই ব্যবস্থা করতে না পারি তাহলে সে দায় পুরো রাষ্ট্র ও  সমাজের।’

নিউজটি শেয়ার করুন

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা

১০ বছরে দ্বিগুণ শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন

আপডেট সময় ০৩:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বছরে বছরে বাড়ছে। তাতেও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া কমছে না। বরং গত ১০ বছরে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, মানের দিক দিয়ে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। এ ছাড়া বিদেশে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তি ও খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগসহ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করছে।

দেশের প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক মেয়াদে বেশির ভাগ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে দেশে ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ইউজিসির তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই চান উন্নত জীবন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা এখনো তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারছি না। এতে তরুণেরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এর বাইরে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, দেশে একধরনের অনিশ্চয়তা, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া দেশ ছাড়তে চাওয়ার অন্যতম কারণ।

ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য গেছেন ৫৫টি দেশে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮।

আর ২০১৩ সালে বিদেশে গিয়েছিলেন ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, ১০ বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করেন এ-সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ফরিদুল হক বলেন, ‘বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। আমার ধারণা, গত বছর (২০২৩ সাল) এই সংখ্যা ছিল ১ লাখের বেশি।’

ইউনেসকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি, ৮ হাজার ৫২৪ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য (৬ হাজার ৫৮৬ জন), আর তৃতীয় কানাডা (৫ হাজার ৮৩৫ জন)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ মাহমুদুল হাসান নকীব স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে বিদেশে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরে এ দেশে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট চাকরির ব্যবস্থা। দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিকের শিক্ষার্থীরা একই কাতারে একই চাকরির দিকে ছুটছেন। এখানে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নিজের জীবনে হতাশা আনতে চাই না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী মুবাশ্বিরা তাসনিম বলেন, ‘দেশে সবাই ভালো চাকরি বলতে বোঝেন সরকারি চাকরি। কিন্তু এর বাইরেও চাকরি আছে, সেটা সমাজ মানতে চায় না। তাই বিদেশে ক্যারিয়ার গড়তে চান।’

ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে গেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থী বৃদ্ধির চিত্র পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের ব্যালান্স অব পেমেন্টস উপবিভাগের প্রতিবেদনেও। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিদেশে উচ্চশিক্ষা বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো টাকার পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় কোনো র‍্যাঙ্কিং নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অবশ্য সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় র‍্যাঙ্কিং করার সুপারিশ করেছে। আর আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে।

২০২৩ সালের টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। তবে প্রথম ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়নি। র‍্যাঙ্কিংয়ের ৮০১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে আছে বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলো হলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। অন্যদিকে, ১০০১ থেকে ১,২০০তম অবস্থানের মধ্যে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া, র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২০১ থেকে ১৫০০-এর মধ্যে রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এর আগের বছরের র‍্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য ৬০১ থেকে ৮০০-এর মধ্যে অবস্থান ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির। ১৩টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ১০৪টি দেশের ১ হাজার ৭৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এই র‍্যাঙ্কিং করা হয়।

অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান মনে করেন, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। সহজে চাকরিতে ঢোকার সুযোগ এবং উন্নত জীবনব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, উন্নত দেশে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম উচ্চশিক্ষা। অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ যাচ্ছেন। এর সঙ্গে আর্থসামাজিক ব্যবস্থা, নগরায়ণ, উন্নত ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান জড়িত। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার কারণ শুধু মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নয়।

ফিরে আসার ব্যবস্থা করা উচিৎ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন মনে করেন, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া বাড়ার কারণ প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা। তিনি বলেন, প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের আকর্ষণ করতে পারছে না। এর ফল হিসেবে তাঁরা বিদেশে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য তরুণেরা বিদেশ যাবেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাঁরা যেন ফিরে আসেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যদি সেই ব্যবস্থা করতে না পারি তাহলে সে দায় পুরো রাষ্ট্র ও  সমাজের।’