ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘শিবির সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়

জাবিতে আন্দোলনকারীদের মারধর, প্রভোস্টের পদত্যাগ

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:-
  • আপডেট সময় ০২:৫৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে আটকে হেনস্তা ও ফোন তল্লাশি করায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান ফটক ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন কোটাবিরোধী সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এসময় আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।

রোববার (১৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন হলের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

পরে রাত ৩টায় হল থেকে বেরিয়ে স্লোগান দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীরাও পাল্টা ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট নাজমুল হাসান তালুকদার।

ঘটনার সূত্রপাত, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তুমি কে আমি কে?, রাজাকার, রাজাকার স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হলে এমন স্লোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেসেঞ্জার গ্রুপে প্রস্তাব করেন ৪৯তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী৷ পরে হলের ১২৪ নম্বর কক্ষ থেকে স্লোগান পুরো হলে ছড়িয়ে পড়ে৷ এ সময় শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিকাল ব্লক থেকে ৪৮তম ব্যাচের সিনিয়ররা এসে কক্ষের সবাইকে ডেকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যান।

এরপর উক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে স্লোগান দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। এ সময় ‘শিবির সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়। এরই মধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারকে ডেকে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরে হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ক্ষমা চাইলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমাদের আমাদের সবাইকে রাজাকার বলা হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আহ্বান করি। এরমধ্যেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী স্লোগান দেওয়ায় তাদের আটকে রেখে মোবাইল তল্লাশি করা হয়েছে- এমন খবর পেয়ে আমরা হলের সামনে আসি। এরপর হল প্রভোস্টের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ছাত্রলীগকে উসকে দেয়। এসময় ছাত্রলীগ আক্রমণাত্মক স্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা পাল্টা ধাওয়া দিই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগকে উসকে দেয়। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে। আমরাও ছাত্রলীগকে প্রতিহত করেছি। হল প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে এ হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, আজ যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য মো. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এত রাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। মৌখিকভাবে পদত্যাগের বিষয়টি আমি জেনেছি। পরে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দিলে প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘শিবির সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়

জাবিতে আন্দোলনকারীদের মারধর, প্রভোস্টের পদত্যাগ

আপডেট সময় ০২:৫৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে আটকে হেনস্তা ও ফোন তল্লাশি করায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান ফটক ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন কোটাবিরোধী সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এসময় আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।

রোববার (১৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন হলের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

পরে রাত ৩টায় হল থেকে বেরিয়ে স্লোগান দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীরাও পাল্টা ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট নাজমুল হাসান তালুকদার।

ঘটনার সূত্রপাত, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তুমি কে আমি কে?, রাজাকার, রাজাকার স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হলে এমন স্লোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেসেঞ্জার গ্রুপে প্রস্তাব করেন ৪৯তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী৷ পরে হলের ১২৪ নম্বর কক্ষ থেকে স্লোগান পুরো হলে ছড়িয়ে পড়ে৷ এ সময় শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিকাল ব্লক থেকে ৪৮তম ব্যাচের সিনিয়ররা এসে কক্ষের সবাইকে ডেকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যান।

এরপর উক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে স্লোগান দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। এ সময় ‘শিবির সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়। এরই মধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারকে ডেকে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরে হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ক্ষমা চাইলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমাদের আমাদের সবাইকে রাজাকার বলা হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আহ্বান করি। এরমধ্যেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী স্লোগান দেওয়ায় তাদের আটকে রেখে মোবাইল তল্লাশি করা হয়েছে- এমন খবর পেয়ে আমরা হলের সামনে আসি। এরপর হল প্রভোস্টের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ছাত্রলীগকে উসকে দেয়। এসময় ছাত্রলীগ আক্রমণাত্মক স্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা পাল্টা ধাওয়া দিই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগকে উসকে দেয়। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে। আমরাও ছাত্রলীগকে প্রতিহত করেছি। হল প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে এ হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, আজ যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য মো. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এত রাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। মৌখিকভাবে পদত্যাগের বিষয়টি আমি জেনেছি। পরে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দিলে প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করবে।