ঢাকা ১১:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শপথ নিলেন নবনিযুক্ত ২৩ বিচারপতি

৩০ বিচারপতির পদত্যাগ যেকোনো দিন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:০৯:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৬২ বার পড়া হয়েছে

সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত ২৩ বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১১টায় তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর আগে মঙ্গলবার রাতে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাদের নিয়োগ দেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো: গোলাম রাব্বানী এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন মঙ্গলবার রাতে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৮ অনুচ্ছেদ-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নবর্ণিত (ক)-(ব) ক্রমিকে উল্লেখকৃত ২৩ জন ব্যক্তিকে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগদান করেছেন।

তারা হলেন–, মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, মো: মনসুর আলম, সৈয়দ জাহেদ মনসুর, কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, মো: যাবিদ হোসেন, মুবিনা আসাফ, কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মো: আবদুল মান্নান, তামান্না রহমান, মো: শফিউল আলম মাহমুদ, মো: হামিদুর রহমান, নাসরিন আক্তার, সাথিকা হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, মো: তৌফিক ইনাম, ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, শেখ তাহসিন আলী, ফয়েজ আহমেদ, মো: সগীর হোসেন, শিকদার মাহমুদুর রাজী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল আজিজ আহমেদ।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর গঠিত সরকার আমলে হাইকোর্ট বিভাগে এটিই প্রথম নিয়োগ। বিচারপতি নিয়োগের দীর্ঘ প্রতীক্ষার সরকার তার মেয়াদের ২ মাসের মাথায় নিয়োগ দিলেন বিচারপতি। এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনে বিচারপতি স্বল্পতা দূর হলো।

এদিকে সুপ্রিমকোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত অন্তত ৩০ বিচারপতি পদত্যাগ করতে পারেন যে কোনো সময়। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় লেজুড়বৃত্তি এবং দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় গত ৫ আগস্টের পর থেকে পদত্যাগের করার আহ্বান ও অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সর্বশষ ‘সাধারণ আইনজীবী’দের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বহুমাত্রিক দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।

অন্যদিকে নীতিমালা প্রণয়ন না করে বিচারপতি নিয়োগ প্রদানের সমালোচনা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। তিনি বলেছেন, নীতিমালা না করে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিৎ হয়নি। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ প্রদানের আগে নীতিমালা করা উচিৎ ছিল। বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা তৈরির আগে হাইকোর্টে ২৩ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিৎ হয়নি। ব্যারিস্টার খোকন বলেন, সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারত। যে ২৩ জন বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন,এদের অনেককেই চিনি। যারা সুপ্রিম কোর্টে ভালো প্রাকটিস করেন। আবার অনেককে চিনি না। এর মধ্যে দুই একজন এমনও আছেন যারা ৩ বছরে মাত্র একটি মামলা করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন আগামী সপ্তায় : আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিমকোর্টের অনেক বিচারপতি ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তাদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সুপ্রিমকোর্টের নিজেদেরই ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন বিষয়ে ড.আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে ট্রাইব্যুনালের জন্য বলা হতো বিচারপতি সংকট। হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। ছুটি শেষ হলে দুই বা তিন দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, বিগত ১৫ বছরের চেয়ে এবার বিচারপতি নিয়োগ ভালো হয়েছে। তুলনা করলে আপনারা নিজেরাই তা বুঝতে পারবেন।

শেখ হাসিনা কোথায় আছেন-জানেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় আছেন, এখন সেটা নিয়ে ভাবছি না। তারা যে অপরাধ করেছেন, তার বিচার নিয়ে কাজ করছি। বিচারের কোনো পর্যায়ে গিয়ে যদি শেখ হাসিনার উপস্থিতির প্রয়োজন হয় তখন তার খোঁজ নেবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

শপথ নিলেন নবনিযুক্ত ২৩ বিচারপতি

৩০ বিচারপতির পদত্যাগ যেকোনো দিন

আপডেট সময় ০৪:০৯:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত ২৩ বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১১টায় তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর আগে মঙ্গলবার রাতে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাদের নিয়োগ দেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো: গোলাম রাব্বানী এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন মঙ্গলবার রাতে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৮ অনুচ্ছেদ-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নবর্ণিত (ক)-(ব) ক্রমিকে উল্লেখকৃত ২৩ জন ব্যক্তিকে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগদান করেছেন।

তারা হলেন–, মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, মো: মনসুর আলম, সৈয়দ জাহেদ মনসুর, কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, মো: যাবিদ হোসেন, মুবিনা আসাফ, কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মো: আবদুল মান্নান, তামান্না রহমান, মো: শফিউল আলম মাহমুদ, মো: হামিদুর রহমান, নাসরিন আক্তার, সাথিকা হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, মো: তৌফিক ইনাম, ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, শেখ তাহসিন আলী, ফয়েজ আহমেদ, মো: সগীর হোসেন, শিকদার মাহমুদুর রাজী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল আজিজ আহমেদ।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর গঠিত সরকার আমলে হাইকোর্ট বিভাগে এটিই প্রথম নিয়োগ। বিচারপতি নিয়োগের দীর্ঘ প্রতীক্ষার সরকার তার মেয়াদের ২ মাসের মাথায় নিয়োগ দিলেন বিচারপতি। এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনে বিচারপতি স্বল্পতা দূর হলো।

এদিকে সুপ্রিমকোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত অন্তত ৩০ বিচারপতি পদত্যাগ করতে পারেন যে কোনো সময়। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় লেজুড়বৃত্তি এবং দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় গত ৫ আগস্টের পর থেকে পদত্যাগের করার আহ্বান ও অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সর্বশষ ‘সাধারণ আইনজীবী’দের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বহুমাত্রিক দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।

অন্যদিকে নীতিমালা প্রণয়ন না করে বিচারপতি নিয়োগ প্রদানের সমালোচনা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। তিনি বলেছেন, নীতিমালা না করে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিৎ হয়নি। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ প্রদানের আগে নীতিমালা করা উচিৎ ছিল। বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা তৈরির আগে হাইকোর্টে ২৩ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিৎ হয়নি। ব্যারিস্টার খোকন বলেন, সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারত। যে ২৩ জন বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন,এদের অনেককেই চিনি। যারা সুপ্রিম কোর্টে ভালো প্রাকটিস করেন। আবার অনেককে চিনি না। এর মধ্যে দুই একজন এমনও আছেন যারা ৩ বছরে মাত্র একটি মামলা করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন আগামী সপ্তায় : আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিমকোর্টের অনেক বিচারপতি ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তাদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সুপ্রিমকোর্টের নিজেদেরই ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন বিষয়ে ড.আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে ট্রাইব্যুনালের জন্য বলা হতো বিচারপতি সংকট। হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। ছুটি শেষ হলে দুই বা তিন দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, বিগত ১৫ বছরের চেয়ে এবার বিচারপতি নিয়োগ ভালো হয়েছে। তুলনা করলে আপনারা নিজেরাই তা বুঝতে পারবেন।

শেখ হাসিনা কোথায় আছেন-জানেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় আছেন, এখন সেটা নিয়ে ভাবছি না। তারা যে অপরাধ করেছেন, তার বিচার নিয়ে কাজ করছি। বিচারের কোনো পর্যায়ে গিয়ে যদি শেখ হাসিনার উপস্থিতির প্রয়োজন হয় তখন তার খোঁজ নেবো।