ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আরও এক যুবকের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৫৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে
আগ্নেয়াস্ত্র হাত টহল দিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা
আগ্নেয়াস্ত্র হাত টহল দিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা

মুন্সিগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রায়হান খাঁন (২২) নামে আরও এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুইজনে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়। নিহত রায়হান ইউনিয়নটির চরডুমুরিয়া এলাকার খানবাড়ির রুস্তম খাঁনের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইপক্ষে সংঘর্ষে একই ইউনিয়নের প্রাণ গেল তিনজনের।

এর আগে গতকাল সোমবার ভোরে প্রতিপক্ষের হামলায় আরিফ মীর (৪০) রায়হান খাঁন (২২) ও ইমরান খাঁন (২২) নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। সে সময় ঘটনাস্থলেই মারা যায় আরিফ মীর। পরে আহত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ রায়হান ও ইমরান খানকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

এর আগে গত ২ নভেম্বর দুইপক্ষের বিরোধে স্থানীয় কৃষকলীগ নেতার ছেলে তুহিন দেওয়ান (২২) নামে এক তরুণকে নিজ বাড়িতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইপক্ষে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে।

নিহতের এক স্বজন ফাতেমা আক্তার জানান, গতকাল সোমবার ভোরে ওয়াহিদ রায়হান, আতিক মল্লিক ও রহিম মোল্লাদের সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, শাহ কামাল ও শাহ আলম, শাকিল, হোসেন মিয়াসহ স্থানীয় বিএনপি নেতা জিন্নত মীরদের একটি দল দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে চর ডুমুরিয়া এলাকায় অতর্কিত হামলা চালায়। এদিন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আরিফ মীর। নিজ বাড়িতে স্ত্রীও সন্তানদের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এছাড়া একই দিনে রায়হান খাঁন ও ইমরান খাঁন গুরুতর আহত হয়।

জানা যায়, মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিবাদমান দুপক্ষের একটির নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ রায়হান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক। অপরপক্ষের নেতৃত্বে আছেন সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উজির আহমেদ ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আওলাদ হোসেন। নিহত রায়হান উজির-আওলাদের সমর্থক ছিলেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বসবাসকারী সে দলের নেতারা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী বড় নেতারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আধিপত্যের লড়াইয়ে সামনে আসেন বিএনপির নেতারা। তখন থেকে শুরু হয় বিএনপির নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি।

গত ৫ সেপ্টেম্বর দুইপক্ষের দ্বন্দ্বে আটজন গুলিবিদ্ধ হয় মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় এ দুইপক্ষের লোকজন হাতাহাতি ও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) ফিরোজ কবির জানান, রায়হানের মৃত্যুর খবর কিছুক্ষণ আগে পেয়েছি। মুন্সিগঞ্জ থেকে গতকাল চিকিৎসা না নিয়ে সরাসরি ঢাকায় চলে গিয়েছিল। তবে দুজন নিহতের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

পুলিশ সুপার আরও জানান, মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে যৌথভাবে বিশেষ অভিযান চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ঘটনাস্থল থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহেদ ও শাকিল ঢার্ল নামের দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর আধিপত্য নিয়ে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে তুহিন দেওয়ান নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। একটি হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে ৯ দিনের মধ্যে আরও ২টি হত্যার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে পৃথক ঘটনায় গত ৯ দিনের মধ্যে এই ইউনিয়নে মোট তিনজন নিহত হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আরও এক যুবকের মৃত্যু

আপডেট সময় ০৭:৫৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
আগ্নেয়াস্ত্র হাত টহল দিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা
আগ্নেয়াস্ত্র হাত টহল দিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা

মুন্সিগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রায়হান খাঁন (২২) নামে আরও এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুইজনে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়। নিহত রায়হান ইউনিয়নটির চরডুমুরিয়া এলাকার খানবাড়ির রুস্তম খাঁনের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইপক্ষে সংঘর্ষে একই ইউনিয়নের প্রাণ গেল তিনজনের।

এর আগে গতকাল সোমবার ভোরে প্রতিপক্ষের হামলায় আরিফ মীর (৪০) রায়হান খাঁন (২২) ও ইমরান খাঁন (২২) নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। সে সময় ঘটনাস্থলেই মারা যায় আরিফ মীর। পরে আহত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ রায়হান ও ইমরান খানকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

এর আগে গত ২ নভেম্বর দুইপক্ষের বিরোধে স্থানীয় কৃষকলীগ নেতার ছেলে তুহিন দেওয়ান (২২) নামে এক তরুণকে নিজ বাড়িতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইপক্ষে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে।

নিহতের এক স্বজন ফাতেমা আক্তার জানান, গতকাল সোমবার ভোরে ওয়াহিদ রায়হান, আতিক মল্লিক ও রহিম মোল্লাদের সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, শাহ কামাল ও শাহ আলম, শাকিল, হোসেন মিয়াসহ স্থানীয় বিএনপি নেতা জিন্নত মীরদের একটি দল দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে চর ডুমুরিয়া এলাকায় অতর্কিত হামলা চালায়। এদিন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আরিফ মীর। নিজ বাড়িতে স্ত্রীও সন্তানদের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এছাড়া একই দিনে রায়হান খাঁন ও ইমরান খাঁন গুরুতর আহত হয়।

জানা যায়, মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিবাদমান দুপক্ষের একটির নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ রায়হান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক। অপরপক্ষের নেতৃত্বে আছেন সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উজির আহমেদ ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আওলাদ হোসেন। নিহত রায়হান উজির-আওলাদের সমর্থক ছিলেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বসবাসকারী সে দলের নেতারা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী বড় নেতারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আধিপত্যের লড়াইয়ে সামনে আসেন বিএনপির নেতারা। তখন থেকে শুরু হয় বিএনপির নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি।

গত ৫ সেপ্টেম্বর দুইপক্ষের দ্বন্দ্বে আটজন গুলিবিদ্ধ হয় মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় এ দুইপক্ষের লোকজন হাতাহাতি ও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) ফিরোজ কবির জানান, রায়হানের মৃত্যুর খবর কিছুক্ষণ আগে পেয়েছি। মুন্সিগঞ্জ থেকে গতকাল চিকিৎসা না নিয়ে সরাসরি ঢাকায় চলে গিয়েছিল। তবে দুজন নিহতের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

পুলিশ সুপার আরও জানান, মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে যৌথভাবে বিশেষ অভিযান চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ঘটনাস্থল থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহেদ ও শাকিল ঢার্ল নামের দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর আধিপত্য নিয়ে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে তুহিন দেওয়ান নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। একটি হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে ৯ দিনের মধ্যে আরও ২টি হত্যার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে পৃথক ঘটনায় গত ৯ দিনের মধ্যে এই ইউনিয়নে মোট তিনজন নিহত হয়েছে।