উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. আলমগীরের বাড়ি থেকে এসব চাল উদ্ধার করে র্যাব
ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে ১১১ বস্তা সরকারী চাল, মামলা না হওয়ায় চাঞ্চল্য
- আপডেট সময় ০৪:১৬:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩
- / ২০৯ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখাঁ চৌধুরীপাড়ায় এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি থেকে সরকারি দুস্থ মহিলা সহায়তা (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের ১১১ বস্তা (তিন হাজার ৩৩০ কেজি) চাল জব্দ করা হয়েছে।
রোববার মধ্যরাতে তিন ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে এসব চাল জব্দ করে র্যাব-১৫। তবে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কোনো মামলা না হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্টে পরিণত হয়েছে।
র্যাব-১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) আবু সালাম চৌধুরী জানান, সরকারি চাল বিক্রির গোপন খবর পেয়ে রোববার মধ্যরাতে অভিযানে এসব চাল জব্দ করা হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমদ জব্দনামা তৈরি করে খাদ্যগুদামে চালগুলো জমা দেন।
অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত ১টার দিকে মোজাহের মিয়া ও তার ছেলে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. আলমগীরের বাড়ি থেকে এসব চাল উদ্ধার করে র্যাব। অবশ্য পরিত্যক্ত জায়গা থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রেস রিলিজে উল্লেখ করে র্যাব।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে আরিফ নামে এক যুবকের কাছ থেকে এসব সরকারি চাল কিনেছেন তারা। আরিফ হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ছেলে ও নিজের বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মোজাহের মিয়া। তিনি প্রথমে উপরকারভোগীদের কাছ থেকে এসব চাল ক্রয় করেছেন বলে দাবি করলেও একপর্যায়ে তার ছেলে সিরাজ এসব বলতে শিখিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন। আরিফসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে এসব চাল ক্রয় করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা মো. আলমগীরকে কল দেওয়ার পর তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। আরেক অভিযুক্ত আরিফ মোবাইল বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত সিরাজকেও পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ নেতা হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল হক বলেন, গত নির্বাচনে আমি বর্তমান চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসের সমর্থন দিয়ে জনগণের কাছে ভোট ভিক্ষা করে নির্বাচিত হতে সহযোগিতা করেছি কিন্তু হাজারও দুস্থ মহিলার সহায়তা (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের চাল নিয়ে নয়ছয় করেছে; যা এখন দুদক তদন্ত করছে।
হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের পাঁচ হাজার দুস্থ নারীর জন্য বরাদ্দ করা চাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হরিলুট চলে আসছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারি চাল বরাদ্দে চেয়ারম্যানের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া দেননি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা দিলেও জবাব দেননি।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত চাল উদ্ধারের বিষয়ে উখিয়া থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শেখ মোহাম্মদ আলি।
এদিকে চাল উদ্ধার করলেও রহস্যজনক কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমদ বলেন, অভিযান করেছে র্যাব তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে র্যাবকে। আমি অভিযান শেষে ওখানে গিয়েছি। এখন র্যাব কেন মামলা করতে চাচ্ছে না সেটা আমি জানি না। আমি শুধু চালগুলো জমা রেখেছি।
একই কথা বলেছেন ইউএনও ইমরান হোসাইন সজীব। তিনি বলেন, যেহেতু র্যাব অভিযান করেছে তাদের মামলা করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে জড়িত কাউকে তিনি রক্ষা করতে চাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন।
চিহ্নিত ব্যক্তির বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের পরও তাদের প্রেস রিলিজে এড়িয়ে যাওয়া এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে তাৎক্ষণিক চাল উদ্ধারের অভিযানটা পরিচালনা করি। ওই সময় কাউকে আটক করতে পারিনি। চালগুলো নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত করে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে গেলে রাজনীতিক জনপ্রতিনিধিদের নামও উঠে আসতে পারে। উপজেলা প্রশাসনের ওই বক্তব্যের বিষয়টি অবগত করা হলে একপর্যায়ে মামলা করা হবে বলে জানান র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক।