ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে এই নেতার

গুলশানে ছাত্রলীগ সভাপতির রাজকীয় জীবন

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ১১:১৫:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৩১৯ বার পড়া হয়েছে

গুলশান থানা ছাত্রলীগ সভাপতি হেলাল

দৃশ্যমান কোনো আয় নেই। তবে তুলনামূলক একটি ভালো পদে আছেন তিনি– রাজধানীর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি। এই পদটিই তাঁর কাছে আলাদিনের চেরাগ হয়ে ধরা দিয়েছে। এখন তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেন। থাকেন নিজস্ব অভিজাত ফ্ল্যাটে, চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। ঘুরতে যান উন্নত দেশে। স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার পরও সম্পদের গরমে আরও একটি বিয়ে করেছেন।

মোস্তাফা হোসেন হেলালের এই উত্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও বিস্মিত। চার বছর ধরে রাজধানীর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ ধরে রেখেছেন তিনি। তাঁর নামে চাঁদাবাজি ছাড়াও রয়েছে নানা অভিযোগ। তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হতাশ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, সরকারি তিতুমীর কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১০-১১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন হেলাল। তিনি কীভাবে এখনও ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তা রহস্যে ঘেরা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বয়স ২৯ পেরোলে সংগঠনের পদে থাকা যায় না। গণমাধ্যমের হাতে আসা হেলালের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯৮৯ সালের ২ মার্চ। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই দায়িত্ব পাওয়ার সময়ই তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। বর্তমানে বয়স ৩৪ বছর সাত মাস।

ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর হেলাল গুলশান-১-এর নাভানা টাওয়ারের ১৯ তলায় একটি স্পা সেন্টারে বেশি সময় কাটাতেন। পরে তিনি ওই স্পা সেন্টারের মালিককে বিয়ে করেন। গুলশান এলাকায় ২৫টি স্পা সেন্টার থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে হেলালের বিরুদ্ধে।

কয়েকটি স্পা সেন্টারের মালিক জানান, হেলালকে প্রতি মাসে চাঁদা না দিলে সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবাই ভয়ে চাঁদা দেন। এ ছাড়া হেলাল ব্যবসায়ীদের টাকা তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে তদবির বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করেন। এভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তাঁর ৪২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে গত জানুয়ারিতে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।

হেলাল ভাটারা এলাকায় একটি নিজস্ব বিলাসবহুল ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। জানাজানি হয়ে গেলে গত ঈদের পর তিনি ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছেন ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক। হেলাল চলাফেরা করেন নোহা মডেলের একটি গাড়িতে। হেলালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় তিনি ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন।

মোহাম্মদপুর এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ বলেন, ডেলকো গ্রুপ নামে একটি কোম্পানির কাছে বরিশালের দুই ব্যবসায়ী ৮০ লাখ টাকা পান। তাদের ৯টি কাভার্ডভ্যান চলত ওই কোম্পানিতে। অনেক দিন আগের সেই টাকা ছাত্রলীগের সভাপতি হেলাল তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে তিনি নিজেই ভয়ভীতি দেখিয়ে ডেলকো থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। কিন্তু দুই ব্যবসায়ীকে কোনো টাকা দেননি।

গুলশান ১ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, হেলাল টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাঁর আয়ের উৎস স্পা ব্যবসা আর অন্যের টাকা তুলে দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি।

হেলালের বিরুদ্ধে মর্জিমাফিক সংগঠন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ এনে কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দেন তিনি। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, কোনো নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার থানা কমিটির নেই। অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের ভাষ্য, যেদিন তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেদিনও তারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন নেতা বলেন, তারা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও হেলালের চাঁদাবাজি, অন্যদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অন্যায় কাজে সহযোগিতা না করায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি নেতাকর্মীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও তিনি দুর্ব্যবহার করেন।

বয়স ও বিয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি দেওয়ার সময় আমার বয়স ঠিক ছিল। তখন বিবাহিতও ছিলাম না। কমিটি দেওয়ার আগে বিয়ের বিষয়টি দেখা হয়।

হেলাল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদের অনুসারী। এ বিষয়ে সাগর বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ বলেন, হেলালের বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে এবং সন্তান থাকার অভিযোগ আমিও শুনেছি। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হেলালের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, এই কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা নতুন কমিটি দেওয়ার জন্য মহানগর উত্তর ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দিয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

৪২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে এই নেতার

গুলশানে ছাত্রলীগ সভাপতির রাজকীয় জীবন

আপডেট সময় ১১:১৫:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

দৃশ্যমান কোনো আয় নেই। তবে তুলনামূলক একটি ভালো পদে আছেন তিনি– রাজধানীর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি। এই পদটিই তাঁর কাছে আলাদিনের চেরাগ হয়ে ধরা দিয়েছে। এখন তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেন। থাকেন নিজস্ব অভিজাত ফ্ল্যাটে, চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। ঘুরতে যান উন্নত দেশে। স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার পরও সম্পদের গরমে আরও একটি বিয়ে করেছেন।

মোস্তাফা হোসেন হেলালের এই উত্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও বিস্মিত। চার বছর ধরে রাজধানীর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ ধরে রেখেছেন তিনি। তাঁর নামে চাঁদাবাজি ছাড়াও রয়েছে নানা অভিযোগ। তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হতাশ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, সরকারি তিতুমীর কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১০-১১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন হেলাল। তিনি কীভাবে এখনও ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তা রহস্যে ঘেরা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বয়স ২৯ পেরোলে সংগঠনের পদে থাকা যায় না। গণমাধ্যমের হাতে আসা হেলালের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯৮৯ সালের ২ মার্চ। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই দায়িত্ব পাওয়ার সময়ই তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। বর্তমানে বয়স ৩৪ বছর সাত মাস।

ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর হেলাল গুলশান-১-এর নাভানা টাওয়ারের ১৯ তলায় একটি স্পা সেন্টারে বেশি সময় কাটাতেন। পরে তিনি ওই স্পা সেন্টারের মালিককে বিয়ে করেন। গুলশান এলাকায় ২৫টি স্পা সেন্টার থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে হেলালের বিরুদ্ধে।

কয়েকটি স্পা সেন্টারের মালিক জানান, হেলালকে প্রতি মাসে চাঁদা না দিলে সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবাই ভয়ে চাঁদা দেন। এ ছাড়া হেলাল ব্যবসায়ীদের টাকা তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে তদবির বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করেন। এভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তাঁর ৪২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে গত জানুয়ারিতে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।

হেলাল ভাটারা এলাকায় একটি নিজস্ব বিলাসবহুল ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। জানাজানি হয়ে গেলে গত ঈদের পর তিনি ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছেন ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক। হেলাল চলাফেরা করেন নোহা মডেলের একটি গাড়িতে। হেলালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় তিনি ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন।

মোহাম্মদপুর এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ বলেন, ডেলকো গ্রুপ নামে একটি কোম্পানির কাছে বরিশালের দুই ব্যবসায়ী ৮০ লাখ টাকা পান। তাদের ৯টি কাভার্ডভ্যান চলত ওই কোম্পানিতে। অনেক দিন আগের সেই টাকা ছাত্রলীগের সভাপতি হেলাল তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে তিনি নিজেই ভয়ভীতি দেখিয়ে ডেলকো থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। কিন্তু দুই ব্যবসায়ীকে কোনো টাকা দেননি।

গুলশান ১ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, হেলাল টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাঁর আয়ের উৎস স্পা ব্যবসা আর অন্যের টাকা তুলে দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি।

হেলালের বিরুদ্ধে মর্জিমাফিক সংগঠন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ এনে কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দেন তিনি। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, কোনো নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার থানা কমিটির নেই। অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের ভাষ্য, যেদিন তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেদিনও তারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন নেতা বলেন, তারা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও হেলালের চাঁদাবাজি, অন্যদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অন্যায় কাজে সহযোগিতা না করায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি নেতাকর্মীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও তিনি দুর্ব্যবহার করেন।

বয়স ও বিয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি দেওয়ার সময় আমার বয়স ঠিক ছিল। তখন বিবাহিতও ছিলাম না। কমিটি দেওয়ার আগে বিয়ের বিষয়টি দেখা হয়।

হেলাল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদের অনুসারী। এ বিষয়ে সাগর বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ বলেন, হেলালের বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে এবং সন্তান থাকার অভিযোগ আমিও শুনেছি। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হেলালের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, এই কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা নতুন কমিটি দেওয়ার জন্য মহানগর উত্তর ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দিয়েছি।