ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগকারীদের ৭৭ শতাংশই আ.লীগ সংশ্লিষ্ট
- আপডেট সময় ০৭:১০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪
- / ২৯৫ বার পড়া হয়েছে
দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ করে থাকেন রাজনীতিবিদেরা। যার মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগকারী হলেন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদ।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) ‘অনন্ত দুর্দশা: ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে অভিযুক্তদের অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে অভিযোগকারী ৮৪৬ জনের পেশা শনাক্ত করে দেখা যায়, অভিযোগকারীদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ২৫২ জন। রাজনীতিবিদ ৩৩৩ জন, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ২৫৯ জন, যা মোট অভিযোগকারীর ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি জানান, জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রীর উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা সাত হাজার একটি। তবে সিজিএসের গবেষণায় অক্টোবর ২০১৮ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দায়েরকৃত এক হাজার ৪১০টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এসব মামলার তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, প্রতিটি মামলায় গড় আসামি ৩ দশমিক ১২ জন। তাহলে সাত হাজার একটি মামলার মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত ২১ হাজার ৮৬৭ জন। প্রতিটি মামলায় গড়ে ১ দশমিক ০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মোট হিসাব দাঁড়ায় কমপক্ষে ৭ হাজার ৫৪২ জন।
সিজিএসের গবেষণায় ডিএসএ-তে অভিযুক্ত এক হাজার ৪৮৬ জনের পেশা শনাক্ত করে দেখা যায়, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকেরাই এই আইনে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। যার মধ্যে শীর্ষে আছেন রাজনীতিবিদ ৪৬৪ জন (৩১.২২ শতাংশ)। আর সাংবাদিক ৪৪২ জন (২৯.৭৪ শতাংশ)। এরপরে রয়েছে শিক্ষার্থী ১৩৫ জন (৯.০৮ শতাংশ) ও শিক্ষক ৫৯ জন (৩.৯৭ শতাংশ)। পেশা অনুযায়ী মোট গ্রেপ্তার ৫৬৩ জন। এদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ১৪১ জন, সাংবাদিক ৯৫ জন, শিক্ষার্থী ১০০ জন, শিক্ষক ৪২ জন, যার মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষক ১৭ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিএসএতে প্রধানমন্ত্রীর মানহানির জন্য মামলা হয়েছে ১৯০টি, যার মধ্যে অভিযুক্তের সংখ্যা ৪৬৪ জন, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৬১ জন। এর মধ্যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ৩১টি মামলা করা হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক কর্তৃক মামলা হয় ১৫৯টি।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে নতুনভাবে এসেছে। এটা আমাদের বন্দি করে ফেলছে। বাংলাদেশ এখন শৃঙখলিত বাংলাদেশ। ৭ তারিখে নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের পর কর্তৃত্ববাদি সরকারের দরকার এ রকম একটা আইন যার মাধ্যমে সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি সম্প্রসারণ করা সম্ভব।’
আলোচক আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনগুলো সামগ্রিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আইনের কাজ। সরকারকে রক্ষা করার অথবা সরকারি দলকে রক্ষা করার কোনো আইন মানুষের উপকারে আসে না। গণতান্ত্রিক দেশে সার্বভৌম দেশে এমন আইন চলতে পারে না।’
আলোচকেরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার সুরক্ষা আইন নামে নতুনভাবে এসেছে। দুটোর মধ্যে বড় কোনো পার্থক্য নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেহেতু বাতিল হয়েছে তাই এই আইনে অভিযুক্ত সবাইকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তারা।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যে আইন দেশে নেই, সেই আইনের অধীনে মামলা কীভাবে চলে। এই মামলা থেকে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে৷ আইনে আছে, রাজনৈতিক নেতার সমালোচনা করা যাবে না। দেবতার যদি সমালোচনা করা যায়, ধর্মবিশ্বাসের যদি বিরোধিতা করা যায়, তাহলে রাজনৈতিক নেতার কেন সমালোচনা করা যাবে না।’
ওয়েবিনারে ডিএসএ মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা, মামলাগুলোর তথ্য জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করা, সব মামলার সত্যতা খুঁজে বের করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন এবং
যারা অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত, বিচার এবং দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।