ঢাকা ১১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন ছিল একপক্ষীয় পাতানো

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ১১:০৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, এটি দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

এর ফলে গণতান্ত্রিক অবনমনের অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনী কৌশল ও অভিনবত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেস্ট কেস হিসেবে বিবেচিত হবে। সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচনের ৫০টি আসনের ওপর চালানো গবেষণায় টিআইবি দেখতে পেয়েছে, ৫১ শতাংশ কেন্দ্রে বুথ দখল, জালভোট প্রদান ও প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে।

সেইসঙ্গে, এসব আসনে ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ কেন্দ্রে ভোটারদেরকে জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং ভোট গণনায় জালিয়াতি করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ কেন্দ্রে।

সংস্থাটির কার্যালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ২০২৩ সালের জুন থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিআইবি।

দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি নির্বাচনী আসন বাছাই করে প্রত্যেক আসনে প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ওপর তথ্য সংগ্রহ এবং সরাসরি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণা পরিচালনা করেছেন টিআইবি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মাহ্‌ফুজুল হক, রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মওলা ও ডাটা এনালিস্ট সাজেদুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে। ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে, যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, বা হলেও টিকবে না।

তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অন্যতম উপাদানসমূহ, তথা অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আইনগত সীমারেখার নামে কখনো অপারগ হয়ে, কখনো কৌশলে, একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনও অনুরূপভাবে একই এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে বা লিপ্ত থেকেছে।

অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের স্বতন্ত্র ও অন্য দলের সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের যে পাতানো খেলা সংঘটিত হয়েছে, তাতেও ব্যাপক আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসুস্থ ও সহিংস প্রতিযোগিতা হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বাইরে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনস্বার্থের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংসদে ব্যবসায়ী আধিপত্যের মাত্রাও একচেটিয়া পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ব্যাপকতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও নীতি দখলের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে।

প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, ৮৫.৭ শতাংশ আসনে সব দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, ৭৫.৫ শতাংশ আসনে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, ৬১.২ শতাংশ আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাধা প্রদান করা হয়েছে, ৪৯ শতাংশ আসনে প্রতিপক্ষ ভোটারদের হুমকি বা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং ভোট ক্রয় করা হয়েছে ৩৮.৮ শতাংশ আসনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটের দিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৬.৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। পরবর্তী এক ঘণ্টায় আরও ১৫.৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণায় ভোট প্রদানের ঘোষিত হার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে ১৩টি আসনে ৪২ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করে। এর মধ্যে ৫টি আসনে জাতীয় পার্টি এবং ৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করে। নির্বাচনের আগের দিন রাতে ১৪ জেলায় ২১টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। নির্বাচনের দিন ৬টি জেলায় সহিংসতা হয় এবং একজন নিহত হয়। ৯টি আসনের ২১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। একটি আসনের একটি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ফলাফল স্থগিত করা হয় এবং উক্ত কেন্দ্রে পরবর্তীতে পুনরায় ভোট গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগের ৪ জন, আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র ১৫ জন, নৌকা প্রতীকে ভোট করা শরিক দলের ২ জন ও জাতীয় পার্টির (জাপা) ২৫ জন প্রার্থী কর্তৃক নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করলেও বেশির ভাগ আসনেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। এবারের নির্বাচনে ২৪১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সারা দেশে অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছিল না। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকির মাধ্যমে অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। স্বল্প ভোটার আসা ও ডামি লাইন তৈরি, বিভিন্ন আসনে অন্য প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেয়া, ভোটের আগেই ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্যে সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ, জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাপান, রাশিয়া, চীন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।

প্রার্থীদের ব্যয় প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে নির্ধারিত ব্যয়সীমার বেশি ব্যয় করেছেন ৬৫.৭৭ (৯৮) শতাংশ প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা (গড়ে ১১.৪৫ গুণ বেশি)। বিজয়ী প্রার্থীরা গড়ে ৩ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৮ টাকা ব্যয় করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা ব্যয় করেছে এক প্রার্থী এবং সর্বনিম্ন ১৬ লাখ ৪৫ হাজার। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে মোট ১৪৯ জন প্রার্থীর গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৫ টাকা ব্যয় করেছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ব্যয় ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা। সার্বিকভাবে তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকে নির্বাচন পর্যন্ত প্রার্থীদের গড় ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৭ টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা এবং সর্বনিম্ন ব্যয় করেছে ৭০ হাজার টাকা- যা নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্ধারিত ব্যয়সীমার ৬ গুণ বেশি। নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘনের ধারা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

টিআইবি জানায়, ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী আনসার ভিডিপি’র সদস্যসহ নির্বাচন গ্রহণ সংশ্লিষ্টদের পরিবারের সদস্যদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক নির্দেশ প্রদান করা হয়। সাধারণ ভোটারসহ প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সরকারি সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বন্ধের হুমকি প্রদান করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের সভায় না এলে, ভোট কেন্দ্রে না গেলে এবং নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট না দিলে নির্বাচনের পর সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের ভাতা, ভাতার কার্ড এবং সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। নৌকায় ভোট না দিলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সংযোগ বন্ধ করাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা এবং সিটি কাউন্সিল কর্মকর্তা কর্তৃক জনগণকে বিবিধ সেবা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়।

সংস্থাটি জানায়, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে এবং নির্দিষ্ট প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী করতে বিবিধ বক্তব্য প্রদান; পুলিশ কর্তৃক সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ভোটকেন্দ্রে ভোটার হাজির করানোর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রচারণা ও ভোট চাওয়াসহ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়া কয়েকজন মন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী সংবাদ প্রেরণ করেছে। যদিও অপরাধের জন্য কেউ শাস্তি পায়নি। কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি চাকরিজীবীদের বদলির সুযোগের ঢালাও ব্যবহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন-বিটিভিকে একচেটিয়া ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দলের প্রচার-প্রচারণা ও সভা-সমাবেশের খবর প্রচার করা হয়েছে। ৫ই ডিসেম্বর থেকে ৫ই জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত বিটিভি’র রাত ৮টার খবরে নির্বাচন সম্পর্কিত সংবাদে মোট সময় ব্যয়িত হয়েছে ৪৯৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ড এবং এটি বাবদ অর্থ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং কমিশনের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার সক্ষমতা সংক্রান্ত খবর বেশি প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমগুলোও সার্বিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের সহায়ক অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ জন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ প্রার্থী পূর্বে কোনো জাতীয় নির্বাচন করেনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ আসনে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, অনিয়ম প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত শতভাগ প্রার্থী কোনো না কোনোভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে হয়তো কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না, তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।

শেষের এক ঘণ্টায় বেশি ভোট পড়া নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে, সেটা কতোটুকু গ্রহণযোগ্য, তার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। পক্ষে-বিপক্ষে বলার কোনো সুযোগ নেই। এটি বিতর্কিত আছে এখনো এবং আমার ধারণা, এটি বিতর্কিতই থেকে যাবে। তবে এটা উল্লেখযোগ্য যে, এই হারটাকে যদি যথার্থ অনুমান করে নিই, যদি এটাই সঠিক ধারণা করা হয়, তাহলেও ৬০ শতাংশ মানুষ ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচন ছিল একপক্ষীয় পাতানো

আপডেট সময় ১১:০৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, এটি দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

এর ফলে গণতান্ত্রিক অবনমনের অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনী কৌশল ও অভিনবত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেস্ট কেস হিসেবে বিবেচিত হবে। সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচনের ৫০টি আসনের ওপর চালানো গবেষণায় টিআইবি দেখতে পেয়েছে, ৫১ শতাংশ কেন্দ্রে বুথ দখল, জালভোট প্রদান ও প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে।

সেইসঙ্গে, এসব আসনে ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ কেন্দ্রে ভোটারদেরকে জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং ভোট গণনায় জালিয়াতি করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ কেন্দ্রে।

সংস্থাটির কার্যালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ২০২৩ সালের জুন থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিআইবি।

দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি নির্বাচনী আসন বাছাই করে প্রত্যেক আসনে প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ওপর তথ্য সংগ্রহ এবং সরাসরি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণা পরিচালনা করেছেন টিআইবি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মাহ্‌ফুজুল হক, রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মওলা ও ডাটা এনালিস্ট সাজেদুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে। ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে, যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, বা হলেও টিকবে না।

তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অন্যতম উপাদানসমূহ, তথা অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আইনগত সীমারেখার নামে কখনো অপারগ হয়ে, কখনো কৌশলে, একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনও অনুরূপভাবে একই এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে বা লিপ্ত থেকেছে।

অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের স্বতন্ত্র ও অন্য দলের সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের যে পাতানো খেলা সংঘটিত হয়েছে, তাতেও ব্যাপক আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসুস্থ ও সহিংস প্রতিযোগিতা হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বাইরে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনস্বার্থের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংসদে ব্যবসায়ী আধিপত্যের মাত্রাও একচেটিয়া পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ব্যাপকতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও নীতি দখলের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে।

প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, ৮৫.৭ শতাংশ আসনে সব দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, ৭৫.৫ শতাংশ আসনে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, ৬১.২ শতাংশ আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাধা প্রদান করা হয়েছে, ৪৯ শতাংশ আসনে প্রতিপক্ষ ভোটারদের হুমকি বা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং ভোট ক্রয় করা হয়েছে ৩৮.৮ শতাংশ আসনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটের দিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৬.৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। পরবর্তী এক ঘণ্টায় আরও ১৫.৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণায় ভোট প্রদানের ঘোষিত হার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে ১৩টি আসনে ৪২ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করে। এর মধ্যে ৫টি আসনে জাতীয় পার্টি এবং ৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করে। নির্বাচনের আগের দিন রাতে ১৪ জেলায় ২১টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। নির্বাচনের দিন ৬টি জেলায় সহিংসতা হয় এবং একজন নিহত হয়। ৯টি আসনের ২১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। একটি আসনের একটি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ফলাফল স্থগিত করা হয় এবং উক্ত কেন্দ্রে পরবর্তীতে পুনরায় ভোট গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগের ৪ জন, আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র ১৫ জন, নৌকা প্রতীকে ভোট করা শরিক দলের ২ জন ও জাতীয় পার্টির (জাপা) ২৫ জন প্রার্থী কর্তৃক নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করলেও বেশির ভাগ আসনেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। এবারের নির্বাচনে ২৪১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সারা দেশে অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছিল না। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকির মাধ্যমে অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। স্বল্প ভোটার আসা ও ডামি লাইন তৈরি, বিভিন্ন আসনে অন্য প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেয়া, ভোটের আগেই ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্যে সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ, জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাপান, রাশিয়া, চীন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।

প্রার্থীদের ব্যয় প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে নির্ধারিত ব্যয়সীমার বেশি ব্যয় করেছেন ৬৫.৭৭ (৯৮) শতাংশ প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা (গড়ে ১১.৪৫ গুণ বেশি)। বিজয়ী প্রার্থীরা গড়ে ৩ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৮ টাকা ব্যয় করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা ব্যয় করেছে এক প্রার্থী এবং সর্বনিম্ন ১৬ লাখ ৪৫ হাজার। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে মোট ১৪৯ জন প্রার্থীর গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৫ টাকা ব্যয় করেছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ব্যয় ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা। সার্বিকভাবে তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকে নির্বাচন পর্যন্ত প্রার্থীদের গড় ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৭ টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা এবং সর্বনিম্ন ব্যয় করেছে ৭০ হাজার টাকা- যা নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্ধারিত ব্যয়সীমার ৬ গুণ বেশি। নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘনের ধারা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

টিআইবি জানায়, ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী আনসার ভিডিপি’র সদস্যসহ নির্বাচন গ্রহণ সংশ্লিষ্টদের পরিবারের সদস্যদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক নির্দেশ প্রদান করা হয়। সাধারণ ভোটারসহ প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সরকারি সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বন্ধের হুমকি প্রদান করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের সভায় না এলে, ভোট কেন্দ্রে না গেলে এবং নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট না দিলে নির্বাচনের পর সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের ভাতা, ভাতার কার্ড এবং সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। নৌকায় ভোট না দিলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সংযোগ বন্ধ করাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা এবং সিটি কাউন্সিল কর্মকর্তা কর্তৃক জনগণকে বিবিধ সেবা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়।

সংস্থাটি জানায়, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে এবং নির্দিষ্ট প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী করতে বিবিধ বক্তব্য প্রদান; পুলিশ কর্তৃক সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ভোটকেন্দ্রে ভোটার হাজির করানোর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রচারণা ও ভোট চাওয়াসহ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়া কয়েকজন মন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী সংবাদ প্রেরণ করেছে। যদিও অপরাধের জন্য কেউ শাস্তি পায়নি। কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি চাকরিজীবীদের বদলির সুযোগের ঢালাও ব্যবহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন-বিটিভিকে একচেটিয়া ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দলের প্রচার-প্রচারণা ও সভা-সমাবেশের খবর প্রচার করা হয়েছে। ৫ই ডিসেম্বর থেকে ৫ই জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত বিটিভি’র রাত ৮টার খবরে নির্বাচন সম্পর্কিত সংবাদে মোট সময় ব্যয়িত হয়েছে ৪৯৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ড এবং এটি বাবদ অর্থ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং কমিশনের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার সক্ষমতা সংক্রান্ত খবর বেশি প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমগুলোও সার্বিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের সহায়ক অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ জন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ প্রার্থী পূর্বে কোনো জাতীয় নির্বাচন করেনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ আসনে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, অনিয়ম প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত শতভাগ প্রার্থী কোনো না কোনোভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে হয়তো কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না, তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।

শেষের এক ঘণ্টায় বেশি ভোট পড়া নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে, সেটা কতোটুকু গ্রহণযোগ্য, তার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। পক্ষে-বিপক্ষে বলার কোনো সুযোগ নেই। এটি বিতর্কিত আছে এখনো এবং আমার ধারণা, এটি বিতর্কিতই থেকে যাবে। তবে এটা উল্লেখযোগ্য যে, এই হারটাকে যদি যথার্থ অনুমান করে নিই, যদি এটাই সঠিক ধারণা করা হয়, তাহলেও ৬০ শতাংশ মানুষ ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে।