মুইজ্জুর হুমকির পরে মালদ্বীপ থেকে সেনা সরাচ্ছে ভারত
- আপডেট সময় ০৩:৩৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১৬৮ বার পড়া হয়েছে
মালদ্বীপ থেকে দ্রুত সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হয়েছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু অনুরোধের প্রেক্ষাপটে ভারত তার সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে সব ভারতীয় সেনাসদস্যের প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে শুক্রবার ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ১৪ জানুয়ারি মালেতে দুই দেশের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কোর গ্রুপের প্রথম বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে ভারতকে সেনাসদস্যদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। ওই সময় মালদ্বীপ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, দুই পক্ষ দ্রুত সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে, তবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে আরো আলোচনা করা হবে।
ভারত শুক্রবার ভারত মহাসাগরে তিনটি বিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক কথাবার্তার মাধ্যমে একটা কাজের পরিস্থিতি তৈরির ব্যাপারে রাজি হয়েছে।
মালদ্বীপের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুপক্ষই একটা বিষয়ে রাজি হয়েছে যে ভারত সরকার ১০ মার্চ ২০২৪-এর মধ্যে তিনটি বিমানক্ষেত্রের মধ্যে যেকোনো একটি থেকে সেনাসদস্যদের সরিয়ে নেবে। এরপর ১০ মের মধ্যে পরবর্তী দুটি বিমান ক্ষেত্র থেকেও সেনাসদস্যদের সরিয়ে নেয়া হবে। মালদ্বীপের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতেই বলা হচ্ছে মুইজ্জুর দাবি মেনে নিচ্ছে ভারত। ১৫ মার্চের মধ্যে মালদ্বীপ থেকে ভারত সমস্ত সেনাসদস্য সরিয়ে নেবে।
ভারতীয় মিডিয়া জানায়,, মুইজ্জু সরকার নানাভাবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িতে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে মালদ্বীপ সরকার।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, মালদ্বীপে বর্তমানে ভারতের ৭৫ জন সেনাসদস্য রয়েছেন। দুটি এএলএইচ হেলিকপ্টার রয়েছে। একটা ডোরনিয়ার বিমান রয়েছে। তবে এই সেনাসদস্যদের সরানো নিয়ে একাধিক অপসন দিয়েছিল ভারত। বলা হয়েছিল, সেনাসদস্যদের সরিয়ে অসামরিক লোকজনকে রাখা যেতে পারে। এমনকি অবসরপ্রাপ্তদের রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।
তবে মলদ্বীপের পক্ষ থেকে আগে জানানো হয়েছিল, ভারতের সিভিলিয়ানরা বিমান চালানোর জন্য থাকতে পারেন। কিন্তু সেনা রাখা যাবে না।
তবে আপাতত একটা কাজ চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরির উপর জোর দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে ফের মিটিংয়ে বসার ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে। অন্যদিকে মালদ্বীপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা, সুরক্ষা-সংক্রান্ত বোঝাপড়া, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যাপারে পরস্পরের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা হবে।
এদিকে গত মাসে দুবাইয়ে কপ-২৮ বৈঠকের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুইজ্জুর মধ্যে বৈঠকের পরে কোর গ্রুপটি গঠন করা হয়েছিল। মুইজ্জু তার দেশকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর জের ধরে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক যথেষ্ট চাপের মধ্যে পড়েছে।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্লাটফর্মকে কেন্দ্র করে প্রচার চালানো মুইজ্জু মালদ্বীপে মোতায়েন ৭৫ জনেরও বেশি সেনা সদস্যকে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি বিমান পরিচালনার জন্য প্রত্যাহারের জন্য নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তুরস্কের কাছ থেকে গম কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি মালদ্বীপ সরকার মেডিকেল ইভাকুয়েশন পরিষেবার জন্য শ্রীলঙ্কার সহায়তা চেয়েছে। মুইজ্জু ব্যক্তিগতভাবে চীনের কাছে মালদ্বীপে আরো পর্যটক পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন, যেখানে গত দুই বছর ধরে ভ্রমণকারীদের প্রধান উৎস দেশ ভারত।
যদিও ১৪ জানুয়ারি কোর গ্রুপের বৈঠকের পর মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে উভয় পক্ষ ভারতীয় সেনাকর্মীদের দ্রুত প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ‘মানবিক পরিষেবা সরবরাহকারী ভারতীয় বিমান চলাচল প্ল্যাটফর্মগুলোর অব্যাহত পরিচালনা সক্ষম করার জন্য পারস্পরিক কার্যকর সমাধান’ খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মালদ্বীপের পাবলিক পলিসি সেক্রেটারি আবদুল্লাহ নাজিম পরে ব্যাখ্যা করেন যে সরকারের অবস্থান হচ্ছে বিমান পরিচালনার জন্য অসামরিক কর্মীরা মালদ্বীপে থাকতে পারবে, কিন্তু সামরিক বাহিনীর সদস্যদের চলে যেতে হবে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস