গত দুই বছরে পারিশ্রমিক হিসেবে গৃহকর্মীর পরিবারকে দেওয়া হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা
দ্যা ডেইলি ষ্টারের সম্পাদকের বাসায় গৃহকর্মীর মৃত্যু, বিচারের দাবীতে মানববন্ধন
- আপডেট সময় ১০:৩৬:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ২০৫ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে অবস্থিত ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক বাস ভবনের নয়তলা থেকে পড়ে প্রীতি (১৫) নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রীতির গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার মিত্তিঙ্গা গ্রামে। বাবার নাম লোকেশ উড়ান। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মিরতিঙ্গা চা-বাগানের বাসিন্দা প্রীতি। সে ছিল চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত তার পড়াশোনা। অভাবের কারণে এই বয়সেই ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজে দেওয়া তাকে। সেখান থেকে তিনদিন আগে প্রীতি ফিরেছে লাশ হয়ে।
প্রীতির পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এর বিচার চান। প্রীতির মা নমিতা উরাং বলেন, দুই বছর আগে ডেইলি স্টারের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মিন্টু দেশোয়ারা ১৫ বছর বয়সি প্রীতিকে দেখে তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। প্রীতিকে ঢাকায় একটি ভালো চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব করেন মিন্টু। প্রীতির মা-বাবা সেই প্রস্তাবে রাজি হন। পরিবারের সচ্ছলতা আনতে মিন্টুর মাধ্যমে ঢাকা পাঠানো হয় প্রীতিকে।
নমিতা জানান, ভালো কাজের কথা বলে তাকে ঢাকায় নিয়ে দেওয়া হয় গৃহকর্মীর কাজ। ঢাকার মোহাম্মদপুরে দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার গৃহকর্মী হয় প্রীতি। চা-বাগানের বাইরে চা-শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক না থাকায় ভালো কিছুর আশায় পরিবারটি সহজে রাজি হয়ে যায়। গত দুই বছরে তার পরিবারকে পারিশ্রমিক হিসেবে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং বলেন, ‘গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে হঠাৎ করে সাংবাদিক মিন্টু আমাদের শ্রীমঙ্গলে একটি মিটিংয়ে নিয়ে যাবেন বলে জানান। শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পর অন্য একটি গাড়িতে করে আমাদের মিন্টু ঢাকায় নিয়ে যান প্রীতি অসুস্থ বলে। কিন্তু গিয়ে দেখি আমাদের মেয়েটি আর নেই।’
প্রীতিকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এর বিচার চেয়েছে পরিবার ও এলাকাবাসী। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকালে মিরতিংগা চা-বাগানে শ্রমিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল, মিরতিংগা চা-বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মন্টু অলমিক প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানান। মানববন্ধনে চা-বাগানের শ্রমিকসহ স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।
চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল বলেন, ‘শুনেছি প্রীতির উপর আগে থেকেই মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। সেই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় প্রীতি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। চা-শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রীতি হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি নবম তলা থেকে পড়ে প্রীতির মৃত্যু বলে খবর প্রচারিত হয়। মোহাম্মদপুরের ওই বাড়িরই একটি বাসায় থাকেন আশফাকুল হক। মৃত্যুর পর স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে ‘মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। এ ঘটনায় বুধবার সকালে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং। মামলায় সাংবাদিক আশফাকুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করা হয়। পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায়। আদালত তাদের কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এ বিষয়ে সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’