ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফতারে বরই খাবে, সেহরিতে খাবে কী ?

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ০৪:৫০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
  • / ১৬৮ বার পড়া হয়েছে

রমজান মাস সমাগত। মুসলিম বিশ্ব সিয়াম-সাধনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এ মাসটি ঘিরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় পণ্যমূল্য নিয়ে। রমজান সামনে রেখে বিশেষ কিছু পণ্যের দাম বাড়ে। এবারও রমজানে অধিকতর চাহিদার ইফতারসামগ্রী ও ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে হররোজ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রমজানকেন্দ্রিক বাংলাদেশের মানুষের বাড়তি পাওয়া রেসিপি। কীসের পরিবর্তে কী খেলে চলে বা খাওয়া যেতে পারে, তা বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানেই বেশি পাওয়া যায়। বেগুনি বানাতে বেগুনের পরিবর্তে কুমড়া বা পেপের ব্যবহার, তেল ছাড়া রান্নার উপকারিতা, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কৃতিত্ব, মাংসের পরিবর্তে কাঁঠালের কাবাব তৈরি ইত্যাকার রেসিপি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার পাওয়া গেল ইফতারে খেজুর ও আপেলের পরিবর্তে বরই ও পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ৪ মার্চ রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ইফতারে খেজুর লাগবে কেন? আপেল লাগে কেন? আঙুর লাগে কেন? আর কিছু নেই আমাদের। ইফতারে বরই খান, পেয়ারা খান, আমাদের যা আছে সেগুলো ব্যবহার করুন। ইফতারের প্লেট সেভাবে সাজান।’

দেশে শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট বা এ সেক্টরের খোঁজখবর যারা রাখেন তারা ছাড়া অন্য কারও কাছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে, তা নিয়ে তেমন আগ্রহ কখনোই দেখা যায়নি। গত ১৫ বছরের সব শিল্পমন্ত্রীর নামও হয়তো বেশিরভাগ নাগরিক বলতে পারবেন না। ইফতারের প্লেট সাজানোর পরামর্শক হিসেবে এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নূরুল মজিদ সাহেব বেশ আলোচনায় আসতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও খেজুর বা বরই, আপেল কিংবা পেয়ারা কোনোটাই শিল্পে উৎপাদন হয় না। তবুও তার এ পরামর্শের কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রথমত—ইফতারে দেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ তো খারাপ কিছু নয়। দেশি বরইর বাজার এখন বেশ চাঙ্গা। খেজুরের তুলনায় কম হলেও পুষ্টিগুণও মন্দ নয়। কুলচাষিরা চুটিয়ে ব্যবসা করছেন বলেই খবর আসছে। বছরখানেক আগেও সিজনে যে বরই ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এবার ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। কোনো কোনো জাতের বরইয়ের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত। অর্থাৎ মানুষ বরই খাচ্ছে বলেই তো চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। মন্ত্রীর পরামর্শের পর আশা করা যায় তার দলের কোটি রোজাদার এবার খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতারের প্লেট সাজাবেন। তাতে একদিকে বরইচাষিরা আরও লাভবান হবেন। চাহিদা ও দাম আরও বাড়বে।

দ্বিতীয়ত—ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে যুক্ত ইফতারে অনেকটা অপরিহার্য অনুষঙ্গ খেজুরের পরিবর্তে বরই খাওয়ার পরামর্শ রোজদার মানুষের সঙ্গে এক ধরনের পরিহাস। খেজুর দিয়ে ইফতার সুন্নত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) খেজুর দিয়ে ইফতারের সূচনা করতেন। রাসুল (স.) ভালোবাসা ও তাকে অনুকরণের মাধ্যমে সুন্নত পালনের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা ইফতারের প্লেটে সর্বাগ্রে খেজুর নিশ্চিত করেন। এটা বাদ দেওয়ার পরামর্শ রোজাদার মানুষের আবেগ-অনুভূতির প্রতি এক ধরনের তাচ্ছিল্যের শামিল।

তৃতীয়ত—মন্ত্রীরা গত মাসখানেক ধরেই বলে আসছিলেন যে, রমজানের কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়বে না। শুল্ক পুনর্বিন্যাস করে বলা হয়েছিল পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। খেজুর, ছোলা, চিনিসহ রমজানে অধিক চাহিদার পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। খেজুরে অস্বাভাবিক উচ্চহারে শুল্ক আরোপের অভিযোগ আসছে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের কাছ থেকে। ইফতারের প্লেট বরই দিয়ে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে প্রকারান্তরে খেজুরের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন মন্ত্রী।

বাজারে বহুরকমের খেজুর রয়েছে। প্রায় সব পদের খেজুরের দামই এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। বিশ্ববাজারে খেজুরের দামে এতটা উল্লম্ফন ঘটেছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি। শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইফতারের প্রায় অপরিহার্য উপাদান খেজুর বাদ দেওয়ার কোনো দূরভিসন্ধি কাজ করেছে কি না, তাও সন্দেহ করছেন অনেক আলেম। মন্ত্রীর বক্তব্য এ সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করেছে। সর্বত্র রাষ্ট্রীয় ব্যয় বল্গাহীন হলেও কৃচ্ছ্রের নামে ইসলামী সাংস্কৃতির অংশ ইফতার আয়োজনকে নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত করাও একই সূত্রে গাঁথা কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ মন্ত্রীর কাছে আরও একটি প্রশ্ন রাখতে পারে। আর সেটি হলো—ইফতারের প্লেট না হয় বরই ও পেয়ারা দিয়ে সাজানো গেল, কিন্তু সেহরির প্লেট কী দিয়ে সাজাবে? প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য এক বছর আগের তুলনায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কোনো কোনোটি বেড়েছে শতভাগ বা তারও অধিক। ভর মৌসুমেও প্রতিটি সবজির দাম এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

এই যখন চিত্র তখন সরকারের মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকরা শুধু ইফতারের খেজুর বা আঙুরের বিকল্প দিয়ে দায় সারবেন কীভাবে? ওপরের বর্ণিত খাদ্যপণ্যগুলো ছাড়া কোনো মানুষের জীবনধারণ কি সম্ভব? রমজান কিংবা রমজানের বাইরে মানুষ পাতে কী তুলবে, কীভাবে তুলবে তাও বলতে হবে শাসকশ্রেণিকে।

শুধু যে নিত্যপণ্যের মূল্য লাফিয়ে বাড়ছে তা নয়, সেবার মূল্য বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। বিদ্যুতের মূল্য গত এক বছরে চার দফায় বেড়েছে। চলতি বছর আরও তিন দফা বাড়ানোর পূর্বাভাস দিয়ে রাখা হয়েছে। গ্যাসের মূল্য পাঁচ বছর আগের ৮০০ টাকার স্থলে (আবাসিক ডাবল বার্নার) এখন ১০৮০ টাকা। ফের বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। বলা হচ্ছে, ১৫০০ টাকা করা হবে। এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য এক বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। একই সময়ে ডিজেলের মূল্য লিটার ৬৫ থেকে বেড়ে ১০৯ টাকা হয়েছে।

কুল খাওয়াতে ব্যাকুল মন্ত্রী মহোদয় ইফতারের প্লেট সাজানোর পরামর্শের পাশাপাশি আশা করা যায় মাছ, মাংস, শাকসবজি, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, তেল, মরিচ, আটা, মুরগির বিকল্প কী হবে সে পরামর্শও দেবেন। রোজাদার মানুষ তো শুধু ইফতার করবেন না, সাহরিও খেতে হবে। সাহরির খাবারের বিকল্পগুলো খোলাসা করলে আশা করা যায় মানুষ কৃতার্থ ও প্রীত হবে! আবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের বিকল্পও প্রস্তাব করা উচিত। দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে বসে বেফাঁস কথা বলে সম্ভবত এ দেশেই শুধু পার পাওয়া যায়। সভ্য জগতে জবাবদিহি করতে হয়, মুখে লাগাম টানা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ইফতারে বরই খাবে, সেহরিতে খাবে কী ?

আপডেট সময় ০৪:৫০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

রমজান মাস সমাগত। মুসলিম বিশ্ব সিয়াম-সাধনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এ মাসটি ঘিরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় পণ্যমূল্য নিয়ে। রমজান সামনে রেখে বিশেষ কিছু পণ্যের দাম বাড়ে। এবারও রমজানে অধিকতর চাহিদার ইফতারসামগ্রী ও ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে হররোজ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রমজানকেন্দ্রিক বাংলাদেশের মানুষের বাড়তি পাওয়া রেসিপি। কীসের পরিবর্তে কী খেলে চলে বা খাওয়া যেতে পারে, তা বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানেই বেশি পাওয়া যায়। বেগুনি বানাতে বেগুনের পরিবর্তে কুমড়া বা পেপের ব্যবহার, তেল ছাড়া রান্নার উপকারিতা, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কৃতিত্ব, মাংসের পরিবর্তে কাঁঠালের কাবাব তৈরি ইত্যাকার রেসিপি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার পাওয়া গেল ইফতারে খেজুর ও আপেলের পরিবর্তে বরই ও পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ৪ মার্চ রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ইফতারে খেজুর লাগবে কেন? আপেল লাগে কেন? আঙুর লাগে কেন? আর কিছু নেই আমাদের। ইফতারে বরই খান, পেয়ারা খান, আমাদের যা আছে সেগুলো ব্যবহার করুন। ইফতারের প্লেট সেভাবে সাজান।’

দেশে শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট বা এ সেক্টরের খোঁজখবর যারা রাখেন তারা ছাড়া অন্য কারও কাছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে, তা নিয়ে তেমন আগ্রহ কখনোই দেখা যায়নি। গত ১৫ বছরের সব শিল্পমন্ত্রীর নামও হয়তো বেশিরভাগ নাগরিক বলতে পারবেন না। ইফতারের প্লেট সাজানোর পরামর্শক হিসেবে এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নূরুল মজিদ সাহেব বেশ আলোচনায় আসতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও খেজুর বা বরই, আপেল কিংবা পেয়ারা কোনোটাই শিল্পে উৎপাদন হয় না। তবুও তার এ পরামর্শের কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রথমত—ইফতারে দেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ তো খারাপ কিছু নয়। দেশি বরইর বাজার এখন বেশ চাঙ্গা। খেজুরের তুলনায় কম হলেও পুষ্টিগুণও মন্দ নয়। কুলচাষিরা চুটিয়ে ব্যবসা করছেন বলেই খবর আসছে। বছরখানেক আগেও সিজনে যে বরই ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এবার ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। কোনো কোনো জাতের বরইয়ের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত। অর্থাৎ মানুষ বরই খাচ্ছে বলেই তো চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। মন্ত্রীর পরামর্শের পর আশা করা যায় তার দলের কোটি রোজাদার এবার খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতারের প্লেট সাজাবেন। তাতে একদিকে বরইচাষিরা আরও লাভবান হবেন। চাহিদা ও দাম আরও বাড়বে।

দ্বিতীয়ত—ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে যুক্ত ইফতারে অনেকটা অপরিহার্য অনুষঙ্গ খেজুরের পরিবর্তে বরই খাওয়ার পরামর্শ রোজদার মানুষের সঙ্গে এক ধরনের পরিহাস। খেজুর দিয়ে ইফতার সুন্নত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) খেজুর দিয়ে ইফতারের সূচনা করতেন। রাসুল (স.) ভালোবাসা ও তাকে অনুকরণের মাধ্যমে সুন্নত পালনের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা ইফতারের প্লেটে সর্বাগ্রে খেজুর নিশ্চিত করেন। এটা বাদ দেওয়ার পরামর্শ রোজাদার মানুষের আবেগ-অনুভূতির প্রতি এক ধরনের তাচ্ছিল্যের শামিল।

তৃতীয়ত—মন্ত্রীরা গত মাসখানেক ধরেই বলে আসছিলেন যে, রমজানের কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়বে না। শুল্ক পুনর্বিন্যাস করে বলা হয়েছিল পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। খেজুর, ছোলা, চিনিসহ রমজানে অধিক চাহিদার পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। খেজুরে অস্বাভাবিক উচ্চহারে শুল্ক আরোপের অভিযোগ আসছে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের কাছ থেকে। ইফতারের প্লেট বরই দিয়ে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে প্রকারান্তরে খেজুরের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন মন্ত্রী।

বাজারে বহুরকমের খেজুর রয়েছে। প্রায় সব পদের খেজুরের দামই এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। বিশ্ববাজারে খেজুরের দামে এতটা উল্লম্ফন ঘটেছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি। শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইফতারের প্রায় অপরিহার্য উপাদান খেজুর বাদ দেওয়ার কোনো দূরভিসন্ধি কাজ করেছে কি না, তাও সন্দেহ করছেন অনেক আলেম। মন্ত্রীর বক্তব্য এ সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করেছে। সর্বত্র রাষ্ট্রীয় ব্যয় বল্গাহীন হলেও কৃচ্ছ্রের নামে ইসলামী সাংস্কৃতির অংশ ইফতার আয়োজনকে নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত করাও একই সূত্রে গাঁথা কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ মন্ত্রীর কাছে আরও একটি প্রশ্ন রাখতে পারে। আর সেটি হলো—ইফতারের প্লেট না হয় বরই ও পেয়ারা দিয়ে সাজানো গেল, কিন্তু সেহরির প্লেট কী দিয়ে সাজাবে? প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য এক বছর আগের তুলনায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কোনো কোনোটি বেড়েছে শতভাগ বা তারও অধিক। ভর মৌসুমেও প্রতিটি সবজির দাম এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

এই যখন চিত্র তখন সরকারের মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকরা শুধু ইফতারের খেজুর বা আঙুরের বিকল্প দিয়ে দায় সারবেন কীভাবে? ওপরের বর্ণিত খাদ্যপণ্যগুলো ছাড়া কোনো মানুষের জীবনধারণ কি সম্ভব? রমজান কিংবা রমজানের বাইরে মানুষ পাতে কী তুলবে, কীভাবে তুলবে তাও বলতে হবে শাসকশ্রেণিকে।

শুধু যে নিত্যপণ্যের মূল্য লাফিয়ে বাড়ছে তা নয়, সেবার মূল্য বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। বিদ্যুতের মূল্য গত এক বছরে চার দফায় বেড়েছে। চলতি বছর আরও তিন দফা বাড়ানোর পূর্বাভাস দিয়ে রাখা হয়েছে। গ্যাসের মূল্য পাঁচ বছর আগের ৮০০ টাকার স্থলে (আবাসিক ডাবল বার্নার) এখন ১০৮০ টাকা। ফের বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। বলা হচ্ছে, ১৫০০ টাকা করা হবে। এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য এক বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। একই সময়ে ডিজেলের মূল্য লিটার ৬৫ থেকে বেড়ে ১০৯ টাকা হয়েছে।

কুল খাওয়াতে ব্যাকুল মন্ত্রী মহোদয় ইফতারের প্লেট সাজানোর পরামর্শের পাশাপাশি আশা করা যায় মাছ, মাংস, শাকসবজি, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, তেল, মরিচ, আটা, মুরগির বিকল্প কী হবে সে পরামর্শও দেবেন। রোজাদার মানুষ তো শুধু ইফতার করবেন না, সাহরিও খেতে হবে। সাহরির খাবারের বিকল্পগুলো খোলাসা করলে আশা করা যায় মানুষ কৃতার্থ ও প্রীত হবে! আবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের বিকল্পও প্রস্তাব করা উচিত। দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে বসে বেফাঁস কথা বলে সম্ভবত এ দেশেই শুধু পার পাওয়া যায়। সভ্য জগতে জবাবদিহি করতে হয়, মুখে লাগাম টানা হয়।