ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মেয়র পদের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ

কুমিল্লা সিটিতে ভোট আজ, নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:৩৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • / ১৮২ বার পড়া হয়েছে

বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান শেষে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ শনিবার। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে ঘিরে একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, আবার অন্য দিকে বিরাজ করছে শঙ্কা। ভোটাররা বলছেন- শনিবার সবমিলিয়ে উৎসব আর শঙ্কার ভোটই দেখতে পারে কুমিল্লা নগরবাসী।

এদিকে, ভোট অনুষ্ঠান সুষ্ঠু করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলেছেন- এই নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। কোথাও কোনো প্রকার অপতৎপরতার চেষ্টা করা হলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। প্রয়োজনে ভোট স্থগিত করার মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরের মধ্যেই কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠ থেকে ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে পৌঁছে গেছে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম।

দলীয় প্রতীকবিহীন এই নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার সঙ্গে প্রার্থী হিসাবে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা। চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই অভিযোগ করেছেন- গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রে না যেতে তাদের কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রচারণা শেষ হলে ওইদিন রাতে এই তৎপরতা আরো বেড়ে গেছে।
যার কারণে ভোটের দিনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে চার প্রার্থীর মধ্যে কেবলমাত্র ভোটের দিন কোনো শঙ্কা দেখছেন না বাস প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা।

চারদিকে ভোট উৎসবের অপেক্ষা দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়ে ডা. তাহসীন বাহার সূচনা বলেন, শুরু থেকেই এ নির্বাচনের যথেষ্ঠ উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে। পুরো নগরীতে এখন ভোট উৎসবের আমেজ।

সেখানে কিছু মানুষ ভিত্তিহীন কথা বলে নির্বাচনকে ও ভোটের পরিবেশকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। এই নির্বাচন নিয়ে কুমিল্লার মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা নেই। চারদিকে এখন ভোট উৎসবের অপেক্ষা।

তিনি আরো বলেন, আমি নগর পিতা-নগর মাতা আমি বুঝি না; আমি নগরকন্যা হয়ে কুমিল্লার মানুষের সেবা করতে চাই। আশা করছি বাবার মতোই সকলে আমার পাশে থাকবেন। বাস হলো কুমিল্লা নগরীর উন্নয়নের প্রতীক। নগরবাসী সেই বাসের যাত্রী আর আমি সেই বাসের চালক। ইনশাআল্লাহ- ৯ মার্চ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্মার্ট কুমিল্লা উপহার দেব।

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু এনিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো এই সিটি নির্বাচনের ভোটে লড়ছেন। এর মধ্যে প্রথম দুইবারের মেয়র তিনি। এর আগে পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২২ সালের নির্বাচনের মতো এবারও সাক্কুর প্রতীক টেবিলঘড়ি। শনিবারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কুসিকের মেয়র হিসেবে হ্যাট্ট্রিক করতে চান সাক্কু।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ততই বাড়ছে। কারণ বৃহস্পতিবার প্রচারণা শেষ হওয়ার পর থেকেই ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে আমার নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে বাস প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন। তাঁরা হুমকি দিয়ে বলছে-

ভোটের দিন কেন্দ্রে গেলে এলাকা ছাড়া করবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হুমকি দেওয়ার অনেক সিসিটিভি ফুটেজও এরই মধ্যে আমরা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছি। এখন দেখার অপেক্ষা ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী থাকে।

তিনি বলেন, তারা মানুষের গণজোয়ারকে নিয়ন্ত্রিত করে নিজস্ব ভোট দিয়ে জিততে চায়। এজন্য ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। তবে এসব করে লাভ হবে না; কারণ জনগণের শক্তি হলো বড় শক্তি। মানুষ এসব হুমকিতে পাত্তা না দিয়ে দলে দলে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে।

সাক্কু বলেন, হয়তো এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আমি কুমিল্লার মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি। আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে। সেই কাজগুলো শেষ করার জন্য আরেকবার মেয়র হতে চাই। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রচারণার শুরু থেকেই এ নির্বাচনে নিজের পছন্দের ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ছুটছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। ২০২২ সালের ১৫ জুন প্রথমবারের মতো মেয়র পদে লড়ে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি।

কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তন চায় উল্লেখ করে কায়সার বলেন, মানুষকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। চারদিকে এখন ঘোড়া মার্কার গণজোয়ার। এ অবস্থা দেখে বাস প্রতীকের লোকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এজন্য আমার নেতাকর্মী ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দিচ্ছে। কুমিল্লার মানুষের কণ্ঠে একটাই কথা- তাঁরা পরিবর্তন চায়। ভোটাররা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন- যেহেতু পরিবর্তনের স্লোগান আমিই তুলেছি, এজন্য তাঁরা আমার সঙ্গেই থাকবেন।

নির্বাচন হলে ঘোড়া মার্কার বিজয় সময়ের ব্যাপার, ইনশাআল্লাহ। কারণ চারদিকে এখন পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে।

এ নির্বাচনে থাকা অপর প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি ও জিএস নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের প্রতীক হাতি। ২০১২ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনেও তানিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তানিমও নেতাকর্মী ও ভোটারদের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, বাস প্রতীকের প্রার্থীর বাবা মেয়ের নিশ্চিত পরাজয় দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এজন্য এখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন যেন কেন্দ্রে ভোটাররা না আসেন। ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ এবার কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়নি। সেখানে সরকারের লক্ষ্য যাতে পূরণ না হয়- এজন্য সরকারের লোক দাবি করা ওই ব্যক্তিইতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে ভোটারদের বোঝাতে চাইছেন যে, কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিয়ে কোনো লাভ হবে, নির্দিষ্ট ব্যক্তিই বিজয়ী হবেন। এমপি বাহারের কারণে কুমিল্লার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে আমি আশা করি ৯ তারিখের নির্বাচনে উনার প্রার্থীকে পরাজিত করার মাধ্যমে কুমিল্লার মানুষ তাকে উপযুক্ত জবাব দেবেন।

তানিম বলেন, কুমিল্লা দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে সংকট রয়েছে। আগামীর কুমিল্লাকে সাজাতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আমি সেই পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করতেই প্রার্থী হয়েছি। হাতি প্রতীক এখন কুমিল্লার মানুষের মুক্তির প্রতীক। আমি কুমিল্লা নগরীর ভোটারদের বলব- আমাকে একটিবার সুযোগ দিন।

আমি স্বপ্নবাজ মানুষ; আপনাদের নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। আমি সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। ইনশাআল্লাহ এবার জনগণের ভোটে আমি বিজয়ী হবো।

১০৫ কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম, নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা :

এদিকে, শনিবার (৯ মার্চ) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ইভিএমসসহ সকল নির্বাচনি সরঞ্জাম। শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরের মধ্যেই কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠ থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের এসব নির্বাচনি সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

এ সময় নির্বাচনের নির্বাচনের সাবির্ক বিষয়ে কথা বলেছেন মো. ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন উপলক্ষে পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে শুক্রবার রাত থেকেই। ভোটের দিন পুরো নগরীতে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোনো কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হলে ৫ মিনিটের মধ্যেই যেন সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়- সেভাবেই নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এক কথায় বলতে গেলে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যা যা প্রদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার সবই নিয়েছি আমরা। প্রচারণা শেষ হওয়ার পর থেকে শুধু কেন্দ্র নয়, পুরো কুমিল্লাকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ফল ঘোষণার পর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি

দেওয়ার কিছু অভিযোগ এসেছে- আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কুসিকের মেয়র পদের উপনির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৪ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন। ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্র এবং ৬৪০টি ভোটকক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৪০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, এক হাজার ২৮০ জন পোলিং এজেন্ট।

আচরণবিধি প্রতিপালনে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন, প্রতি তিন ওয়ার্ডে থাকবেন একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ১০৫ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ প্লাটুনে ৪৫০ জন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাব ২৭ টিমে ৯৩৯ জন, পুলিশের ২৭ মোবাইল টিমে ১৩৩৯ জন এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোট নয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। এ ছাড়াও দুটি থানার দুটি টিম রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফারহাদ হোসেন আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে গতবারের মতো নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা লাগানো না হলেও ১০৫ কেন্দ্রের মধ্যে ২২টি ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা আছে। এগুলো শুক্রবার দুপুর ১২টার পর থেকে সচল রাখা হয়েছে। ভোটার দিনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের শঙ্কা থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পুরো সিটি এলাকা থাকবে নিরাপত্তার চাদরে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে পুলিশ ছিল, এখানে থাকবে পাঁচজন করে। পুলিশ ৫ জন, আনসার ১২ জন। সব মিলিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১৭ জনের বেশি ফোর্স থাকবেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। আমি শঙ্কাও কিছু দেখছি না। কোথাও কোনো সমস্যা হলে ৫ মিনিটের মধ্যে অতিরিক্ত ফোস ও ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে পৌঁছে যাবে। এরপরও কেউ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেব।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কুমিল্লাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও। কোনো বিশৃঙ্খলা হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোট হবে সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর। ভোটের দিন কাউকে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মাঠে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে

নিউজটি শেয়ার করুন

মেয়র পদের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ

কুমিল্লা সিটিতে ভোট আজ, নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

আপডেট সময় ০৮:৩৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান শেষে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ শনিবার। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে ঘিরে একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, আবার অন্য দিকে বিরাজ করছে শঙ্কা। ভোটাররা বলছেন- শনিবার সবমিলিয়ে উৎসব আর শঙ্কার ভোটই দেখতে পারে কুমিল্লা নগরবাসী।

এদিকে, ভোট অনুষ্ঠান সুষ্ঠু করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলেছেন- এই নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। কোথাও কোনো প্রকার অপতৎপরতার চেষ্টা করা হলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। প্রয়োজনে ভোট স্থগিত করার মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরের মধ্যেই কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠ থেকে ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে পৌঁছে গেছে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম।

দলীয় প্রতীকবিহীন এই নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার সঙ্গে প্রার্থী হিসাবে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা। চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই অভিযোগ করেছেন- গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রে না যেতে তাদের কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রচারণা শেষ হলে ওইদিন রাতে এই তৎপরতা আরো বেড়ে গেছে।
যার কারণে ভোটের দিনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে চার প্রার্থীর মধ্যে কেবলমাত্র ভোটের দিন কোনো শঙ্কা দেখছেন না বাস প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা।

চারদিকে ভোট উৎসবের অপেক্ষা দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়ে ডা. তাহসীন বাহার সূচনা বলেন, শুরু থেকেই এ নির্বাচনের যথেষ্ঠ উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে। পুরো নগরীতে এখন ভোট উৎসবের আমেজ।

সেখানে কিছু মানুষ ভিত্তিহীন কথা বলে নির্বাচনকে ও ভোটের পরিবেশকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। এই নির্বাচন নিয়ে কুমিল্লার মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা নেই। চারদিকে এখন ভোট উৎসবের অপেক্ষা।

তিনি আরো বলেন, আমি নগর পিতা-নগর মাতা আমি বুঝি না; আমি নগরকন্যা হয়ে কুমিল্লার মানুষের সেবা করতে চাই। আশা করছি বাবার মতোই সকলে আমার পাশে থাকবেন। বাস হলো কুমিল্লা নগরীর উন্নয়নের প্রতীক। নগরবাসী সেই বাসের যাত্রী আর আমি সেই বাসের চালক। ইনশাআল্লাহ- ৯ মার্চ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্মার্ট কুমিল্লা উপহার দেব।

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু এনিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো এই সিটি নির্বাচনের ভোটে লড়ছেন। এর মধ্যে প্রথম দুইবারের মেয়র তিনি। এর আগে পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২২ সালের নির্বাচনের মতো এবারও সাক্কুর প্রতীক টেবিলঘড়ি। শনিবারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কুসিকের মেয়র হিসেবে হ্যাট্ট্রিক করতে চান সাক্কু।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ততই বাড়ছে। কারণ বৃহস্পতিবার প্রচারণা শেষ হওয়ার পর থেকেই ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে আমার নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে বাস প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন। তাঁরা হুমকি দিয়ে বলছে-

ভোটের দিন কেন্দ্রে গেলে এলাকা ছাড়া করবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হুমকি দেওয়ার অনেক সিসিটিভি ফুটেজও এরই মধ্যে আমরা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছি। এখন দেখার অপেক্ষা ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী থাকে।

তিনি বলেন, তারা মানুষের গণজোয়ারকে নিয়ন্ত্রিত করে নিজস্ব ভোট দিয়ে জিততে চায়। এজন্য ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। তবে এসব করে লাভ হবে না; কারণ জনগণের শক্তি হলো বড় শক্তি। মানুষ এসব হুমকিতে পাত্তা না দিয়ে দলে দলে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে।

সাক্কু বলেন, হয়তো এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আমি কুমিল্লার মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি। আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে। সেই কাজগুলো শেষ করার জন্য আরেকবার মেয়র হতে চাই। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রচারণার শুরু থেকেই এ নির্বাচনে নিজের পছন্দের ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ছুটছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। ২০২২ সালের ১৫ জুন প্রথমবারের মতো মেয়র পদে লড়ে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি।

কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তন চায় উল্লেখ করে কায়সার বলেন, মানুষকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। চারদিকে এখন ঘোড়া মার্কার গণজোয়ার। এ অবস্থা দেখে বাস প্রতীকের লোকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এজন্য আমার নেতাকর্মী ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দিচ্ছে। কুমিল্লার মানুষের কণ্ঠে একটাই কথা- তাঁরা পরিবর্তন চায়। ভোটাররা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন- যেহেতু পরিবর্তনের স্লোগান আমিই তুলেছি, এজন্য তাঁরা আমার সঙ্গেই থাকবেন।

নির্বাচন হলে ঘোড়া মার্কার বিজয় সময়ের ব্যাপার, ইনশাআল্লাহ। কারণ চারদিকে এখন পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে।

এ নির্বাচনে থাকা অপর প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি ও জিএস নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের প্রতীক হাতি। ২০১২ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনেও তানিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তানিমও নেতাকর্মী ও ভোটারদের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, বাস প্রতীকের প্রার্থীর বাবা মেয়ের নিশ্চিত পরাজয় দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এজন্য এখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন যেন কেন্দ্রে ভোটাররা না আসেন। ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ এবার কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়নি। সেখানে সরকারের লক্ষ্য যাতে পূরণ না হয়- এজন্য সরকারের লোক দাবি করা ওই ব্যক্তিইতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে ভোটারদের বোঝাতে চাইছেন যে, কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিয়ে কোনো লাভ হবে, নির্দিষ্ট ব্যক্তিই বিজয়ী হবেন। এমপি বাহারের কারণে কুমিল্লার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে আমি আশা করি ৯ তারিখের নির্বাচনে উনার প্রার্থীকে পরাজিত করার মাধ্যমে কুমিল্লার মানুষ তাকে উপযুক্ত জবাব দেবেন।

তানিম বলেন, কুমিল্লা দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে সংকট রয়েছে। আগামীর কুমিল্লাকে সাজাতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আমি সেই পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করতেই প্রার্থী হয়েছি। হাতি প্রতীক এখন কুমিল্লার মানুষের মুক্তির প্রতীক। আমি কুমিল্লা নগরীর ভোটারদের বলব- আমাকে একটিবার সুযোগ দিন।

আমি স্বপ্নবাজ মানুষ; আপনাদের নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। আমি সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। ইনশাআল্লাহ এবার জনগণের ভোটে আমি বিজয়ী হবো।

১০৫ কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম, নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা :

এদিকে, শনিবার (৯ মার্চ) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ইভিএমসসহ সকল নির্বাচনি সরঞ্জাম। শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরের মধ্যেই কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠ থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের এসব নির্বাচনি সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

এ সময় নির্বাচনের নির্বাচনের সাবির্ক বিষয়ে কথা বলেছেন মো. ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন উপলক্ষে পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে শুক্রবার রাত থেকেই। ভোটের দিন পুরো নগরীতে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোনো কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হলে ৫ মিনিটের মধ্যেই যেন সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়- সেভাবেই নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এক কথায় বলতে গেলে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যা যা প্রদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার সবই নিয়েছি আমরা। প্রচারণা শেষ হওয়ার পর থেকে শুধু কেন্দ্র নয়, পুরো কুমিল্লাকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ফল ঘোষণার পর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি

দেওয়ার কিছু অভিযোগ এসেছে- আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কুসিকের মেয়র পদের উপনির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৪ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন। ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্র এবং ৬৪০টি ভোটকক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৪০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, এক হাজার ২৮০ জন পোলিং এজেন্ট।

আচরণবিধি প্রতিপালনে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন, প্রতি তিন ওয়ার্ডে থাকবেন একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ১০৫ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ প্লাটুনে ৪৫০ জন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাব ২৭ টিমে ৯৩৯ জন, পুলিশের ২৭ মোবাইল টিমে ১৩৩৯ জন এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোট নয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। এ ছাড়াও দুটি থানার দুটি টিম রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফারহাদ হোসেন আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে গতবারের মতো নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা লাগানো না হলেও ১০৫ কেন্দ্রের মধ্যে ২২টি ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা আছে। এগুলো শুক্রবার দুপুর ১২টার পর থেকে সচল রাখা হয়েছে। ভোটার দিনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের শঙ্কা থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পুরো সিটি এলাকা থাকবে নিরাপত্তার চাদরে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে পুলিশ ছিল, এখানে থাকবে পাঁচজন করে। পুলিশ ৫ জন, আনসার ১২ জন। সব মিলিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১৭ জনের বেশি ফোর্স থাকবেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। আমি শঙ্কাও কিছু দেখছি না। কোথাও কোনো সমস্যা হলে ৫ মিনিটের মধ্যে অতিরিক্ত ফোস ও ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে পৌঁছে যাবে। এরপরও কেউ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেব।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কুমিল্লাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও। কোনো বিশৃঙ্খলা হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোট হবে সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর। ভোটের দিন কাউকে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মাঠে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে