অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
অগ্নিকান্ডের শেষ কোথায়?
- আপডেট সময় ০৪:৪৫:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
- / ২৪৯ বার পড়া হয়েছে
অগ্নিকাণ্ড যেন থামছেই না। সম্প্রতি রাজধানীর বেইলী রোডসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটে পর পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গতকাল রবিবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও বাইরে পাঁচটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি সুপারবোর্ড কারখানায় এবং পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রামে দুইটি পাটের গুদাম ও একটি তেলের মিলে আগুন লাগে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, বেইলী রোডের পর যেন ঘনঘন আগুন ও ট্রেনে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। এসবের নেপথ্যে কারো হাত আছে কিনা, ঘটনাগুলো নাশকতা কিনা—এমন প্রশ্নও উঠেছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও এসবের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ, ঘনঘন আগুন লাগা কোনো নাশকতা কিনা, তৃতীয় পক্ষ করছে কিনা কিংবা কারখানার মালিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিচ্ছে কিনা। কোনো কোনো কারখানার মালিক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এ জন্য অনেক সময় তারা নিজেরাই নিজেদের কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়, যাতে ঋণের টাকা আর দেওয়া না লাগে। অপরদিকে বিমার টাকা পাওয়ার জন্যও নিজেরা কারখানায় আগুন লাগাতে পারে। ইতিমধ্যে ঢাকার বাইরে দুটি কারখানায় পরপর আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এমন তথ্য পেয়েছেন। উল্লিখিত এই তিনটি বিষয় মাথায় নিয়ে রহস্য উদঘাটন করার জন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মঠে নেমেছে।
র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, বারবার আগুন লাগার ঘটনা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। রহস্য উদঘাটনের জন্য র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বারবার আগুন লাগার রহস্য উদঘাটনের জন্য গত কয়েক দিন ধরে আমরা মাঠে কাজ করছি।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আগুন লাগার ঘটনা সেহরির আগে-পরে প্রায় একই সময়ে ঘটছে। ডেমরার কাপড়ের গোডাউনে আগুন সেহরির একটু আগে লাগে। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে একটি গোডাউনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে সেহরির সময়। গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে ভোরে আগুন লাগে। এগুলো রহস্যজনক। এর আগে বেশ কয়েকটি আগুন একই সময়ে হয়েছে। তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করা উচিত।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের গত পাঁচ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে কম অগ্নিকাণ্ড ঘটে বরিশাল বিভাগে। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনদের মতে, অসচেতনতাই অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ। তাছাড়া দ্রুত নগরায়ণ হলেও সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে না নগরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। দিন দিন সুউচ্চ ভবনে শহর ভরে উঠলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা উপেক্ষিত। চুলা আর শর্ট সার্কিটের আগুনের বিষয়ে সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেন তারা। তারা বলেন, এসব ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই মূল্যবান জীবনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থসম্পদও রক্ষা করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, সম্প্রতি রাজধানী ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নানা প্রশ্নের ও রহস্যের সৃষ্টি করছে। ভবন নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা, ভবনে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণের নিশ্চয়তা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার ঘাটতি রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভবন মালিকদের অবহেলা ও উদাসীনতা। তবে একের পর এক অগ্নি দুর্ঘটনার ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে বেশ কিছু বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ, বিতর্ক চলে তখন পরিস্থিতি অস্থির করে কোনো দল রাজনৈতিক অবস্থা নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করতে ও আন্দোলন কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি করতে এবং সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তৈরির লক্ষ্যে যখন সক্রিয় হয় তখন বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ড বা অগ্নিসন্ত্রাস বেড়ে যায়। বর্তমান দুর্ঘটনাগুলো অগ্নিকাণ্ড নাকি অগ্নিসন্ত্রাস তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। নাগরিকদের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের একটি যোগসূত্র লক্ষণীয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।