দেশে ১৬ লাখের বেশি পরিবারের নিজস্ব ঘরবাড়ি নেই
- আপডেট সময় ১২:৪৫:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
- / ১৮৪ বার পড়া হয়েছে
দেশের ১৬ লাখেরও বেশি পরিবারের নিজস্ব কোনো ঘরবাড়ি নেই। অর্থাৎ বসবাসের জন্য দেশের কোথাও কোনো বাসগৃহ নেই তাদের। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে অথবা বিনা ভাড়ায় বা অন্য কোনোভাবে কারও বাসায় বসবাস করে। তবে দেশে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা দিন দিন কমছে। নিজস্ব বাসগৃহ না থাকা মানুষের বসবাস সবচেয়ে বেশি সিলেট ও ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস) প্রতিবেদনে নিজস্ব বাসগৃহ না থাকার এ চিত্র উঠে এসেছে।
সম্প্রতি এসভিআরএসের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিবিএস। এতে বলা হয়েছে, দেশের মোট পরিবারের মধ্যে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ পরিবারের বসবাসের জন্য দেশে নিজস্ব কোনো বাসগৃহ নেই। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে মোট খানা বা পরিবারের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ২১৭। সেই হিসাবে, নিজস্ব বাসগৃহ নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩২০টি। সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, প্রতিটি পরিবারের গড় সদস্যের সংখ্যা ৪ দশমিক ১৯ জন। সেই হিসাবে ৬৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৭ জন অন্যের বাসায় ভাড়া বা বিনা ভাড়ায় থাকে।
বিবিএস বলছে, বসবাসের জন্য নিজস্ব ঘরবাড়ি না থাকলেও তাদের
গৃহহীন বলা যাবে না। কারণ তারা সাধারণত বাসা ভাড়া নিয়ে অথবা বিনা ভাড়ায় অন্যের বাড়িতে থাকেন। এ বিষয়ে এসভিআরএসের প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, যেসব পরিবারের নিজস্ব কোনো বাসগৃহ নেই দেশে প্রতিবেদনে তাদের সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। তাদের গৃহহীন বলা যাবে না। কারণ তারা আশ্রয়হীন নয়। নিজস্ব মালিকানার বাসগৃহ না থাকলেও তাদের বসবাসের ব্যবস্থা আছে।
এসভিআরএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে নিজস্ব বাসগৃহ নেই এমন পরিবার ছিল ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই হার আরও একটু কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৬ দশমিক ০৮ শতাংশ পরিবারের বসবাসের জন্য নিজস্ব মালিকানাধীন বাসগৃহ আছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৯৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৯৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় এক শতাংশ পরিবারের বাসগৃহের মালিকানা বেড়েছে। ২০২১ সালে তুলনায় ২০২৩ সালে প্রায় তিন লাখ পরিবার নিজস্ব বাসগৃহের মালিক হয়েছে।
নিজস্ব বাসগৃহ নেই এমন পরিবার বেশি শহরে। কারণ গ্রামে গৃহহীন মানুষ তেমন একটা চোখে পড়ে না। নিজেদের না থাকলেও অন্যের বা আত্মীয়ের জমিতে বা নদীপাড়ের খাসজমিতে মানুষ ঘর বাঁধে। উপকূল অঞ্চলে বেড়িবাঁধের ওপরও বহু মানুষ ঘর বেঁধে বাস করে। যেসব মানুষের এসব বিকল্পের কোনোটিই নেই, তারা চলে আসে শহরে।
দেশের কোথাও নিজস্ব কোনো বাসগৃহ নেই এমন পরিবার বেশি সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের ৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারের নিজস্ব মালিকানার বসবাসের ঘর নেই। এর পরে আছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগের ৭ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারের কোনো নিজস্ব ঘরবাড়ি নেই।
অন্যদিকে, নিজস্ব মালিকানার বাসগৃহ নেই এমন পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগের মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের নিজস্ব বাসগৃহ নেই। বাসগৃহহীন পরিবারের বসবাসের দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ। এই দুই বিভাগের ২ শতাংশ পরিবারের নিজস্ব কোনো বাসগৃহ নেই।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দারিদ্র্যের সঙ্গে গৃহহীন পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে। নদীভাঙন প্রতিবছর বহু মানুষকে গৃহহীন করে। বিভিন্ন সময়ে দেশের অনেক জমি নদীতে বিলীন হয়। এর মধ্যে একটি বড় অংশই বসতভিটা। গ্রামে অনেক পরিবারের শুধু বসতভিটাটুকুই থাকে। সেই ভিটা নদীতে হারালে অনেক মানুষের পক্ষে জমি কিনে নতুন ঘর তৈরি করা সম্ভব হয় না। তারা প্রথমে আশপাশের শহরে আশ্রয় নেয়। সবচেয়ে বেশি আসে ঢাকায়।
এদিকে গ্রামে বসতভিটা হারানো এবং গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর এবং বসবাসের জন্য বাসগৃহ না থাকায় দেশে সাবলেটের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২১ সালে সাবলেট বাসাভাড়া নেওয়া পরিবারের সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
সাবলেট ভাড়া প্রদানকারী পরিবারও বেড়েছে। ২০২১ সালে এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। এ অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমেছে একক খানায় (পরিবার) বসবাসকারীর সংখ্যা। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৯৭ দশমিক ১ শতাংশ, পরের বছর সেটি কমে হয় ৯৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে আরও কমে হয়েছে ৯৫ শতাংশ।