নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ
ইজরাইলে ইরানের হামলা: কূটনৈতিক বিজয় বাইডেনের
- আপডেট সময় ১০:৪৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
- / ৪১১ বার পড়া হয়েছে
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন যদি অনেক ইসরায়েলিকে হত্যা করত, তাহলে এখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আগুন জ্বলত। এমন আশঙ্কা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। আরব মিত্রদের সহায়তায় ইসরায়েলি ও মার্কিন বাহিনী ইরানের বেশির ভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করেছে। এটিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলকে রক্ষার ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করে বাইডেন প্রশাসনের এ বিজয় অবশ্য কতদিন স্থায়ী হবে– তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ ইসরায়েল এ হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেল আবিবকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে ইরানের মাটিতে বড় ধরনের ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সাইবার আক্রমণ বা একটি সূক্ষ্ম কিন্তু সীমিত সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা বেশি। এটি পুনরায় হামলা চালানোর প্ররোচনা থেকে ইরানকে বিরত এবং ইসরায়েলকে সন্তুষ্ট করতে পারে। অন্যদিকে ইরানের মাটিতে আরও ব্যাপক আক্রমণ তেহরানকে পাল্টা আক্রমণ চালাতে প্ররোচিত করতে পারে। এমনটি হলে হঠাৎ করে সংঘর্ষটি একটি স্থায়ী ও ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।
জনস হপকিন্স স্কুল ফর অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষক ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক নীতি উপদেষ্টা লরা ব্লুমেনফেল্ড বলেন, এই সপ্তাহান্তে আমরা বাইডেনকে তাঁর সেরা অবস্থায় দেখেছি। ইউরোপীয় ও আরব আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্য বিমান প্রতিরক্ষা জোটের এ পদক্ষেপ অ্যাকশন মুভি ট্রেলারের মতো দেখা গেছে। তবে বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী অনিবার্যভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। সেটি নিয়ে সন্দেহ নেই, তবে প্রশ্ন হলো কখন এবং কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলের সফল প্রতিরক্ষা ছিল বাইডেন প্রশাসনের ১০ দিনের জোরালো কূটনীতি ও সামরিক সমন্বয় এবং পুরো অঞ্চলে একাধিক প্রশাসনের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে তৈরি করা নিরাপত্তা সম্পর্কের ফল। কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধের পর ইরান প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে, তা স্পষ্ট হওয়ার পর মার্কিন কর্মকর্তারা তা প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে ছুটে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নামানোর একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। ওই অঞ্চলে ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে মিলে আরব মিত্রদের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ও ট্র্যাকিং তথ্য ভাগাভাগি এবং তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতির ব্যবস্থা করেন। এমনকি গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র সমালোচক জর্ডান তার আকাশসীমা দিয়ে ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে যাওয়া ইরানি ড্রোনগুলো ভূপাতিত করে। ইরাকে থাকা আমেরিকান প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা একটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ভূপাতিত করে। তবে বাইডেনের এ সাফল্যের মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় হাজার হাজার নারী-শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে বাইডেনসহ সামষ্টিক ব্যর্থতাকে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিছু বিশ্লেষক।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ শিবলি তেলহামি বলেন, ইরানি হামলা ঠেকিয়ে সাফল্য উদযাপন করলেও বাইডেন গাজার সংকট থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই বৃহত্তর কৌশলগত ব্যর্থতা থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। সেখানকার ব্যর্থতার ক্ষতি অপূরণীয়।
তবুও ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট পলিসির পরিচালক নাটান শ্যাস মনে করেন, আপাতত একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়াতে এটি ছোট ব্যাপার নয়। বাইডেন বাহবা পাওয়ার যোগ্য।