ফরিদপুরের হত্যার ভিডিও ফাঁস : যাদের উপস্থিতি দেখা গেল
- আপডেট সময় ১১:১৭:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
- / ৪৭৩ বার পড়া হয়েছে
ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে গত বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় দুই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা ও অন্যদের আহত করার ঘটনায় একাধিক ভিডিও ফাঁস হয়েছে। আর এতে ওই সময় হত্যায় কারা কিভাবে অংশ নিয়েছে তাও দেখা গেছে।
রোববার বিকেলে ফাঁস হওয়া ওই একাধিক ভিডিওর একটিতে দেখা গেছে পিটিয়ে হত্যায় সরাসরি কারা অংশ নেয়। সেখানে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের বাইরে উন্মত্ত জনতার চিৎকার-চেচামেচি আর ভেতরে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে শ্রমিকদের পেটাচ্ছে।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে হতাহত করার দৃশ্য। সেখানে পঞ্চপল্লীর উজ্জ্বল, সুফল, সুকুমার, রাজকুমার, মাধব, সাধন, বিকাশ, সুজিত, মানিকসহ আরো কয়েকজনকে পেটিয়ে হত্যার দৃশ্যে অংশ নিতে দেখা যায়।
জানা গেছে, এদের কয়েকজনকে পুলিশ এরইমধ্যে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। তবে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আটককৃতদের নাম-পরিচয় জানায়নি।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের পিঠমোড়া করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ভিডিওতে সেখানে স্থানীয় ইউপি মেম্বার অজিত মেম্বারের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনকে দেখা যায় যেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের এভাবে না পিটিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন। তবে অনুরোধে সাড়া না দিলে তিনি মধুখালী থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে প্রথমে মধুখালী থানার এসআই ননী গোপাল ও একজন কনস্টেবল ছুটে যান ঘটনাস্থলে। হামলাকারীরা দুই পুলিশকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফিরিয়ে দেয়। এরপর মধুখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মামনূন রশীদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন সেখানে গেলে তাদের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনসহ ইউএনও এবং ওসিকে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
অবশ্য এ ভিডিওর ব্যাপারে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তে ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তারা কয়েকজনকে আটক করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়েও তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন। খুব শিগগিরই তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে বাঁশ, লাঠি, পেরেক দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে আপন দুই ভাইকে হত্যা এবং আরো পাঁচজনকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার (ইউএনও) মামনুন আহমেদ ও ওসি মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে হতাহতদের উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও বন্দী করে রাখা হয়। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব প্রায় ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। দুর্বৃত্তরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। এ ঘটনার পরে মন্দিরে আগুন, নির্মাণ শ্রমিক হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে থানায়। এ ঘটনার পর ধর্মমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক নিহতদের বাড়িতে যান এবং পঞ্চপল্লীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার পর জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, এটি কোনেনা গণপিটুনি নয়। পরিকল্পিত হত্যা। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত চলছে।