ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
- আপডেট সময় ১১:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
- / ৩০২ বার পড়া হয়েছে
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। এর মধ্যে চার জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা। অন্যজন উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে বেশি সম্পদের মালিক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন। তার ধারেকাছেও নেই উপজেলার অন্য প্রার্থীরা। তবে মামলার দিক থেকে এগিয়ে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান তুষার।
অপরদিকে, সিংগাইর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা তিন জন। এর মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগের নেতা। দুজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও একজনের নামে মামলা নেই।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দুই উপজেলায় অনেক প্রার্থীর বার্ষিক আয়ের কোনও উৎসই নেই।
হরিরামপুর
হরিরামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেওয়ান সাইদুর রহমান তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার কোনও আয় নেই। তবে হাতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে আরও পাঁচ লাখ। ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ডসহ স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৫ তোলা স্বর্ণ। সাইদুরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা থাকলেও একটি নিষ্পত্তি হয়েছে। আরেকটি বিচারাধীন। তিনি বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক।
আরেক প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন হলফনামায় ব্যবসা খাত থেকে ২২ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৬ টাকা আয় দেখিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সহসভাপতির ব্যাংকে জমা আছে ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা। এছাড়া শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আছে আড়াই লাখ টাকার বেশি। হাতে নগদ আছে এক লাখ টাকা। এছাড়া উপহার হিসেবে পাওয়া স্বর্ণের পরিমাণ ৩০ ভরি। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই।
যুবদল নেতা মো. জাহিদুর রহমান তুষার ব্যবসা খাত থেকে বছরে তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। হাতে নগদ আছে এক লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২২ ভরি স্বর্ণ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি মামলা। সবগুলো আদালতে বিচারাধীন।
অপর প্রার্থী আজিম খান সদ্য পদত্যাগী ভাইস চেয়ারম্যান। হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, বছরে আয়ের খাত নেই। বছরে শুধু সম্মানী ভাতা তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা পেতেন। হাতে নগদ টাকা আছে ২০ হাজার। ব্যাংকে জমা আছে আট লাখ ৩০ হাজার। এছাড়া স্ত্রীর নামে স্বর্ণ আছে ১৫ ভরি। ২ শতাংশ অকৃষি জমি, পৈতৃক একটি দালান ও ২০ লাখ টাকার অ্যাপার্টমেন্ট আছে।
সামছুল ইসলাম নামের আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামায় দেখা গেছে, বছরে কৃষিখাত থেকে আয় ১৮ হাজার টাকা, ব্যবসা খাত থেকে আয় তিন লাখ ৬২ হাজার। এছাড়া ব্যাংকে জমা আছে এক লাখ টাকা। হাতে নগদ আছে আরও এক লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে তিন ভরি স্বর্ণ। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই।
সিংগাইর
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের নামে একটি মামলা ছিল। সেটি থেকে খালাস পেয়েছেন। ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫৬ টাকা। নগদ আছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ২০ ভরি স্বর্ণ। হলফনামায় তার নামে কৃষিজমি ২০৬ শতাংশ। স্থানীয় ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ আছে।
আরেক প্রার্থী আব্দুল মাজেদ খানের নামে মামলা ছিল, সেটি থেকে খালাস পেয়েছেন। কৃষিখাত থেকে বছরে আয় ৩৩ হাজার ৮১৪ টাকা। সম্মানী ভাতা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৪০ হাজার ও এক লাখ ৮৬ হাজার ১০৮ টাকা। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে অব্যাহতি নিয়ে উপজেলা নির্বাচন করছেন। হাতে নগদ আছ এক লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে উপহার হিসেবে ৫০ ভরি স্বর্ণ আছে। এছাড়া স্থানীয় সিংগাইর কৃষি ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে।
এই উপজেলায় আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। কৃষিখাত থেকে বছরে আয় ৫০ হাজার। ব্যবসা থেকে বছরে আয় হয় তিন লাখ টাকা। তার হাতে নগদ আছে দুই লাখ টাকা। স্থানীয় জনতা ব্যাংকে এক কোটি টাকা ঋণ থাকলেও নেই কোনও স্বর্ণালঙ্কার।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার ছাত্ররাজনীতি এখন শেষের দিকে। কিছু একটা তো করতে হবে। যেহেতু চাকরি করলাম না। এজন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। ট্রেড লাইসেন্স আছে। আমদানি-রফতানির ব্যবসা করছি। ব্যবসায়িক আয় হলফনামায় উল্লেখ করেছি। হলফনামায় সম্পদের সঠিক বিবরণ দিয়েছি। এতে কোনও অসংগতি নেই।’