ঢাকা ১২:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্রলীগ নেতার জন্য ‘প্রক্সিদাতা’ খুঁজতে ঢাবিতে এসে ধরা

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ০৩:৩৫:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
  • / ৯৭ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজার জন্য ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী খুঁজতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এসে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন কাউছার আলী নামে এক যুবক।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাউছার আলীকে ধরে ঢাবির এক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে যান। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজেই তার প্রশ্ন ফাঁস ও প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে অনেক প্রমাণ দেখান। এরপর রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিমের সহযোগিতায় শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, কাউছার আলীর বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কুয়াতপুর এলাকায়। এছাড়া, তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি পড়ালেখা শেষ করেন।

তার স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন গ্রেডের চাকরির পরীক্ষায় প্রার্থীদের হয়ে ‘প্রক্সি’ দেন তিনি। পাশাপাশি কোনো চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রক্সি হিসেবে দক্ষ কাউকে খুঁজে দিতে মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হন তিনি। শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছাড়াও রেলওয়ের বিভিন্ন পদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও পল্লি বিদ্যুৎ সমিতিসহ বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি ও তার সহযোগীরা ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী সরবরাহ করে আসছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করার কাজও তিনি করেন। তার মোবাইল ফোনে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন দেখে এই তথ্যের প্রমাণ মেলে, তিনি নিজে তা স্বীকারও করেছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে সরকারি চাকরির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন।

কাউছার জানান, পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি ২০ হাজার টাকা করে নেন। নিজে পরীক্ষা না দিতে পারলে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দিয়ে মাধ্যম হিসেবে থাকেন। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর পাস করলে চাকরিভেদে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে নিয়ে থাকেন তিনি। আজকের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রক্সিদাতা সরবরাহ করতে এমন চুক্তিই হয়েছিলো জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক রেজার সঙ্গে। এই ছাত্রলীগ নেতার প্রক্সিদাতা খুঁজতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসে আসা। এর প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার মামাকে নিয়ে ‘রবিন’ নামে এক প্রক্সিদাতার সঙ্গে দেখা করতে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন কাউছার আলী। এই ‘রবিন’ নামটি ব্যবহার করে ঢাবির ওই শিক্ষার্থী কৌশলে ক্যাম্পাসে এনে সহপাঠীদের নিয়ে পাকড়াও করে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে পাঠান।

কাউছারকে যখন সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে আসা হয় তখন ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান সম্পাদক পল্লব রানা পারভেজও ছিলেন। পল্লব এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে সন্ধ্যায় একাত্তর হলের পিয়ার সাকিব (যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, একাত্তর হল) নামে আমার এক বন্ধু কল দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে বলে। সে বলে যে, সেখানে এক প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যকে ধরা হয়েছে। তার হলের কোন এক বড় ভাই আমাদেরকে নিয়ে সেখানে যেতে বলেছেন। সেই বড় ভাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। পরে সেখানে বায়েজিদ (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, একাত্তর হল) ও আমি গিয়ে যখন কাউছার নামে ওই লোকের ফোনটা চেক করলাম তখন তার ফোনে ৫০০ এর বেশি এডমিট কার্ড পেলাম। তখন আসলে বোঝার বাকি রইল না যে, সে প্রক্সি বা প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্য। পরে আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সাংবাদিক সমিতিতে তাকে নিয়ে আসা হয়।

প্রক্সি চক্রে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন কাওছার। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের শিক্ষার্থী আলী আব্বাস ও ইফরাত হোসাইন, বিজয় একাত্তর হলের সোলাইমান ও ইকবাল হোসাইন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর রাকিব ও হাসান রয়েছেন। কাউছারের ভাষ্যমতে, ঢাবি ও জবির এই শিক্ষার্থীরা কাওসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দেন এবং প্রক্সিদাতা ব্যবস্থা করে দেন।

এদের মধ্যকার সোলাইমানের সঙ্গে তার যোগাযোগ বহুদিনের। কিন্তু কিছুদিন আগে কাওসারের স্ত্রীর চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সিদাতা ব্যবস্থা করার শর্তে সোলাইমান তার কাছ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে আর কথা রাখেননি। এজন্য কাউছার সোলাইমানকে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোলাইমান রবিনের ছদ্মবেশ ধারণ করে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে কৌশলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এনে মারধর করে ধরিয়ে দেন বলে জানান কাউছার।

কাউছার জানান, তার সঙ্গে প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ভুগোল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শিমুল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আবু জর গিফারি, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের রায়হান, বাংলা বিভাগের আজিজুল, আকাশ (কাউছারের চাচাতো ভাই), আমিনুল ইসলাম, বাবুল মিয়া এবং সাইফুলও জড়িত রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে থাকা অবস্থায় কাউছার আলীর সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যেই জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজাকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, তিনি তার চক্রের অন্যান্য যে সদস্যদের নাম বলেছেন তাদের সঙ্গেও তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, গত রাতে শিক্ষার্থীরা প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের যে সদস্যকে ধরেছে তাকে আমরা রাতেই শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছিলাম। সে এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। তার দেয়া বিভিন্ন তথ্য আমরা খতিয়ে দেখছি। সকল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আটককৃত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীদের নাম এসেছে, তাদের তথ্য স্ব স্ব হলের প্রভোস্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ছাত্রলীগ নেতার জন্য ‘প্রক্সিদাতা’ খুঁজতে ঢাবিতে এসে ধরা

আপডেট সময় ০৩:৩৫:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজার জন্য ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী খুঁজতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এসে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন কাউছার আলী নামে এক যুবক।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাউছার আলীকে ধরে ঢাবির এক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে যান। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজেই তার প্রশ্ন ফাঁস ও প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে অনেক প্রমাণ দেখান। এরপর রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিমের সহযোগিতায় শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, কাউছার আলীর বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কুয়াতপুর এলাকায়। এছাড়া, তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি পড়ালেখা শেষ করেন।

তার স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন গ্রেডের চাকরির পরীক্ষায় প্রার্থীদের হয়ে ‘প্রক্সি’ দেন তিনি। পাশাপাশি কোনো চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রক্সি হিসেবে দক্ষ কাউকে খুঁজে দিতে মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হন তিনি। শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছাড়াও রেলওয়ের বিভিন্ন পদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও পল্লি বিদ্যুৎ সমিতিসহ বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি ও তার সহযোগীরা ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী সরবরাহ করে আসছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করার কাজও তিনি করেন। তার মোবাইল ফোনে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন দেখে এই তথ্যের প্রমাণ মেলে, তিনি নিজে তা স্বীকারও করেছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে সরকারি চাকরির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন।

কাউছার জানান, পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি ২০ হাজার টাকা করে নেন। নিজে পরীক্ষা না দিতে পারলে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দিয়ে মাধ্যম হিসেবে থাকেন। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর পাস করলে চাকরিভেদে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে নিয়ে থাকেন তিনি। আজকের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রক্সিদাতা সরবরাহ করতে এমন চুক্তিই হয়েছিলো জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক রেজার সঙ্গে। এই ছাত্রলীগ নেতার প্রক্সিদাতা খুঁজতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসে আসা। এর প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার মামাকে নিয়ে ‘রবিন’ নামে এক প্রক্সিদাতার সঙ্গে দেখা করতে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন কাউছার আলী। এই ‘রবিন’ নামটি ব্যবহার করে ঢাবির ওই শিক্ষার্থী কৌশলে ক্যাম্পাসে এনে সহপাঠীদের নিয়ে পাকড়াও করে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে পাঠান।

কাউছারকে যখন সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে আসা হয় তখন ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান সম্পাদক পল্লব রানা পারভেজও ছিলেন। পল্লব এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে সন্ধ্যায় একাত্তর হলের পিয়ার সাকিব (যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, একাত্তর হল) নামে আমার এক বন্ধু কল দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে বলে। সে বলে যে, সেখানে এক প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যকে ধরা হয়েছে। তার হলের কোন এক বড় ভাই আমাদেরকে নিয়ে সেখানে যেতে বলেছেন। সেই বড় ভাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। পরে সেখানে বায়েজিদ (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, একাত্তর হল) ও আমি গিয়ে যখন কাউছার নামে ওই লোকের ফোনটা চেক করলাম তখন তার ফোনে ৫০০ এর বেশি এডমিট কার্ড পেলাম। তখন আসলে বোঝার বাকি রইল না যে, সে প্রক্সি বা প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্য। পরে আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সাংবাদিক সমিতিতে তাকে নিয়ে আসা হয়।

প্রক্সি চক্রে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন কাওছার। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের শিক্ষার্থী আলী আব্বাস ও ইফরাত হোসাইন, বিজয় একাত্তর হলের সোলাইমান ও ইকবাল হোসাইন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর রাকিব ও হাসান রয়েছেন। কাউছারের ভাষ্যমতে, ঢাবি ও জবির এই শিক্ষার্থীরা কাওসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দেন এবং প্রক্সিদাতা ব্যবস্থা করে দেন।

এদের মধ্যকার সোলাইমানের সঙ্গে তার যোগাযোগ বহুদিনের। কিন্তু কিছুদিন আগে কাওসারের স্ত্রীর চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সিদাতা ব্যবস্থা করার শর্তে সোলাইমান তার কাছ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে আর কথা রাখেননি। এজন্য কাউছার সোলাইমানকে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোলাইমান রবিনের ছদ্মবেশ ধারণ করে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে কৌশলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এনে মারধর করে ধরিয়ে দেন বলে জানান কাউছার।

কাউছার জানান, তার সঙ্গে প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ভুগোল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শিমুল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আবু জর গিফারি, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের রায়হান, বাংলা বিভাগের আজিজুল, আকাশ (কাউছারের চাচাতো ভাই), আমিনুল ইসলাম, বাবুল মিয়া এবং সাইফুলও জড়িত রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে থাকা অবস্থায় কাউছার আলীর সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যেই জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজাকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, তিনি তার চক্রের অন্যান্য যে সদস্যদের নাম বলেছেন তাদের সঙ্গেও তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, গত রাতে শিক্ষার্থীরা প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের যে সদস্যকে ধরেছে তাকে আমরা রাতেই শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছিলাম। সে এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। তার দেয়া বিভিন্ন তথ্য আমরা খতিয়ে দেখছি। সকল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আটককৃত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীদের নাম এসেছে, তাদের তথ্য স্ব স্ব হলের প্রভোস্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।