ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আতিক-আরাফাতের ট্রাস্টি বোর্ড ‘বিতাড়িত’ করে মানারাত ইউনিভার্সিটি ‘পুনরুদ্ধার’

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ১১:১৯:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৯০ বার পড়া হয়েছে

মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সদ্য সাবেক এমপি আরাফাতুল ইসলামসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনোনিত ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের ‘বিতাড়িত করে’ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ‘পুনরুদ্ধার’ করেছেন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক আদেশে ট্রাস্টি বোর্ডের আগের সদস্যদের বাদ দিয়ে ওই বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর প্রতিষ্ঠাতারা মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ফিরেছেন। তারা সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফজলুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন।

শনিবার (১০ আগস্ট) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া ক্যাম্পাসের সেমিনার হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আতিক-আরাফাতের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ‘অবৈধ দখল মুক্ত’ ঘোষণা করা হয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও পাবলিক রিলেশনস্ ও স্টুডেন্টস্ অ্যাফেয়ারস্ শাখার সহকারী পরিচালক রফিকুল আমিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ট্রাস্টি বোর্ড মনোনয়ন দিয়েছিল তারা নন, এর আগে প্রতিষ্ঠাতাদের সমন্বয়ে যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজরা ছিলেন তারা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর আগের সরকারের চাপিয়ে দেয়া ট্রাস্টি বোর্ডকে বিতাড়িত করে আগের সদস্যরা নিজেদের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ঘোষণা করেছেন। তারা বলতে চাচ্ছেন তারা মানারাত পুনরুদ্ধার করেছেন। একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

এদিকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের মতবিনিময় সভা নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফজলুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

এতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, এনামুল হক চৌধুরী, মানারাত ইনস্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. উমার আলী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মাহবুব-উল-আলম, মানারাত ট্রাস্টের সেক্রেটারি সাবেক যুগ্ম-সচিব মো. শাহ্ আলম বকশী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ট্রাস্টের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে ইউনিভার্সিটিকে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। সব ধরণের সংকট কাটিয়ে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যাগুলো শনাক্ত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে বলে ঘোষণা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো ‘আ সেন্টার অব একাডেমিক অ্যান্ড মোরাল এক্সিলেন্স’ স্লোগান ধারণ করে শিক্ষকদের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, আমরা মানারাত ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন মানুষ দেখলেই বুঝতে পারে তারা আমাদের ছাত্র।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট একটি রেজিস্ট্রিকৃত ট্রাস্ট উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ সভায় বলেন, একটি রেজিস্ট্রিকৃত প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করার কোন ক্ষমতা কোন কর্তৃপক্ষের নেই। যারা এখানে এসেছিলেন তারা অবৈধভাবে এসেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ দখল মুক্ত হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা বুঝে নিয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল উল্লেখ করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সাবেক সচিব  মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরকে যার যার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার আহ্বান জানান।

সমস্ত বিভেদ-বিভক্তি ভুলে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদেরকে এগিয়ে আসার  আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. এম উমার আলী বলেন, মহান আল্লাহ এ প্রতিষ্ঠানকে আবার আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যে মিশন ভিশন নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একযোগে করতে হবে। এ জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সব সদস্যরাও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেষ্ট রয়েছেন।

এনামুল হক চৌধুরী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এখানকার জমি আমাদেরই হাতে কেনা, এর দালান-কোঠা সবই আমাদের হাতেই তৈরি। এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এখন সে অনুযায়ী কাজ করবো ইনশা-আল্লাহ।

এর আগে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছিলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে। ওই আদেশে আগের কমিটির সবাইকে বাদ দেয়া হয়েছিলো। কেবল পদাধিকার বলে উপাচার্যকে রাখা হয়েছিল বোর্ড অব ট্রাস্টিজে।

অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, সাবেক সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, হাসুমনির পাঠশালার সভাপতি সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন ও সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিহির কান্তি ঘোষাল।

ওই আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৬ (১০) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করায় এই আইনের ৩৫ (৭) ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছিল, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্তে দেখা যায়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫ (৭) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা এর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আচার্য প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আতিক-আরাফাতের ট্রাস্টি বোর্ড ‘বিতাড়িত’ করে মানারাত ইউনিভার্সিটি ‘পুনরুদ্ধার’

আপডেট সময় ১১:১৯:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪

মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সদ্য সাবেক এমপি আরাফাতুল ইসলামসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনোনিত ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের ‘বিতাড়িত করে’ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ‘পুনরুদ্ধার’ করেছেন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক আদেশে ট্রাস্টি বোর্ডের আগের সদস্যদের বাদ দিয়ে ওই বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর প্রতিষ্ঠাতারা মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ফিরেছেন। তারা সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফজলুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন।

শনিবার (১০ আগস্ট) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া ক্যাম্পাসের সেমিনার হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আতিক-আরাফাতের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ‘অবৈধ দখল মুক্ত’ ঘোষণা করা হয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও পাবলিক রিলেশনস্ ও স্টুডেন্টস্ অ্যাফেয়ারস্ শাখার সহকারী পরিচালক রফিকুল আমিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ট্রাস্টি বোর্ড মনোনয়ন দিয়েছিল তারা নন, এর আগে প্রতিষ্ঠাতাদের সমন্বয়ে যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজরা ছিলেন তারা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর আগের সরকারের চাপিয়ে দেয়া ট্রাস্টি বোর্ডকে বিতাড়িত করে আগের সদস্যরা নিজেদের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ঘোষণা করেছেন। তারা বলতে চাচ্ছেন তারা মানারাত পুনরুদ্ধার করেছেন। একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

এদিকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের মতবিনিময় সভা নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফজলুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

এতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, এনামুল হক চৌধুরী, মানারাত ইনস্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. উমার আলী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মাহবুব-উল-আলম, মানারাত ট্রাস্টের সেক্রেটারি সাবেক যুগ্ম-সচিব মো. শাহ্ আলম বকশী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ট্রাস্টের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে ইউনিভার্সিটিকে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। সব ধরণের সংকট কাটিয়ে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যাগুলো শনাক্ত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে বলে ঘোষণা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো ‘আ সেন্টার অব একাডেমিক অ্যান্ড মোরাল এক্সিলেন্স’ স্লোগান ধারণ করে শিক্ষকদের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, আমরা মানারাত ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন মানুষ দেখলেই বুঝতে পারে তারা আমাদের ছাত্র।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট একটি রেজিস্ট্রিকৃত ট্রাস্ট উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ সভায় বলেন, একটি রেজিস্ট্রিকৃত প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করার কোন ক্ষমতা কোন কর্তৃপক্ষের নেই। যারা এখানে এসেছিলেন তারা অবৈধভাবে এসেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ দখল মুক্ত হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা বুঝে নিয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল উল্লেখ করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সাবেক সচিব  মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরকে যার যার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার আহ্বান জানান।

সমস্ত বিভেদ-বিভক্তি ভুলে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদেরকে এগিয়ে আসার  আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. এম উমার আলী বলেন, মহান আল্লাহ এ প্রতিষ্ঠানকে আবার আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যে মিশন ভিশন নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একযোগে করতে হবে। এ জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সব সদস্যরাও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেষ্ট রয়েছেন।

এনামুল হক চৌধুরী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এখানকার জমি আমাদেরই হাতে কেনা, এর দালান-কোঠা সবই আমাদের হাতেই তৈরি। এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এখন সে অনুযায়ী কাজ করবো ইনশা-আল্লাহ।

এর আগে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছিলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে। ওই আদেশে আগের কমিটির সবাইকে বাদ দেয়া হয়েছিলো। কেবল পদাধিকার বলে উপাচার্যকে রাখা হয়েছিল বোর্ড অব ট্রাস্টিজে।

অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, সাবেক সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, হাসুমনির পাঠশালার সভাপতি সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন ও সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিহির কান্তি ঘোষাল।

ওই আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৬ (১০) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করায় এই আইনের ৩৫ (৭) ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছিল, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্তে দেখা যায়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫ (৭) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা এর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আচার্য প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।