ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকক পোস্টের প্রতিবেদন/ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণজাগরণ থেকে শিক্ষা!

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫০:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

একটি গণজাগরণ যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এই আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। যদিও যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমাগত দমনের শাসন দ্বারা উসকে দেয়া হয়েছিল। ভিন্নমত দমনে জনগণের অসন্তোষের অন্তর্নিহিত কারণ উপেক্ষা করা হয়েছিল। সমাজের সর্বস্তরে নানা বৈষম্য জনগণকে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করেছে। জনরোষে এক সময় দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে স্বৈরশাসক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ব্যাংকক পোস্ট।

এতে বলা হয়, জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীর জন্য বরাদ্দকৃত কোটার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালেও একই দাবিতে আন্দোলন করেন তারা। সেসময় শেখ হাসিনা সমস্ত কোটা বিলুপ্ত করেছিলেন। তবে এ বছরের জুনে হাইকোর্ট কোটাকে পুনর্বহাল করে।

মূলত এ থেকেই আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের তোপে এক মাস পরে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রেখে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে এই রায়ের আগেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেননা শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বিতর্কিত একটি মন্তব্য করেন। এছাড়া কোটা সংস্কারের দাবিতে নামা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। যারফলে শিক্ষার্থীরা তখন হাসিনার পতনের দাবি করে। এরপর থেকেই গোটা দেশ উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং পরিস্থিতির অবনমন হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে। এতে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হন। যাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষার্থী। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন আরও প্রকট হতে থাকলে দেশ থেকে পালিয়ে গত ৫ই আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে লৌহমানবী বলা হয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা তিনি। একসময় তিনি দেশের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজনীতির ময়দানে বেশ সক্রিয় হয়েছিলেন। তার আমলে বাংলাদেশ বেশ কিছুটা অর্থনৈতিক সাফল্যও পেয়েছে। তৈরি পোশাক খাত তার আমলে খানিকটা উন্নতির পথ দেখেছে। গত দুই দশকে দেশের দারিদ্রতা কমিয়ে ২০১৯ সালে জিডিপি-তে ভারতকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতিতে আগের নেতাদের তুলনায় এত ভালো করার পরও কেন এমন লজ্জাজনক পতনের সম্মুখীন হলেন শেখ হাসিনা। এর উত্তর কঠিন নয়। তিনি ছিলেন একজন স্বৈরশাসক। তিনি ভিন্নমত দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগে বিশ্বাসী ছিলেন। তার হাত থেকে আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী কেউই রক্ষা পায়নি। এদের যারাই তার সমালোচনা করেছেন তাদেরকেই হয়ত গুম নয়তো খুন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তার এই উদ্ধত আচরণের মাত্রা আরও প্রকটাকার ধারণ করেছিল। শেখ হাসিনার এমন করুণ পরিণতিতে বিশ্বের শিক্ষা হচ্ছে শত উন্নয়ন করেও জনগণের স্বাধীনতাকে হরণ করলে তার পতন নিশ্চিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্যাংকক পোস্টের প্রতিবেদন/ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণজাগরণ থেকে শিক্ষা!

আপডেট সময় ১১:৫০:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

একটি গণজাগরণ যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এই আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। যদিও যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমাগত দমনের শাসন দ্বারা উসকে দেয়া হয়েছিল। ভিন্নমত দমনে জনগণের অসন্তোষের অন্তর্নিহিত কারণ উপেক্ষা করা হয়েছিল। সমাজের সর্বস্তরে নানা বৈষম্য জনগণকে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করেছে। জনরোষে এক সময় দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে স্বৈরশাসক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ব্যাংকক পোস্ট।

এতে বলা হয়, জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীর জন্য বরাদ্দকৃত কোটার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালেও একই দাবিতে আন্দোলন করেন তারা। সেসময় শেখ হাসিনা সমস্ত কোটা বিলুপ্ত করেছিলেন। তবে এ বছরের জুনে হাইকোর্ট কোটাকে পুনর্বহাল করে।

মূলত এ থেকেই আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের তোপে এক মাস পরে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রেখে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে এই রায়ের আগেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেননা শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বিতর্কিত একটি মন্তব্য করেন। এছাড়া কোটা সংস্কারের দাবিতে নামা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। যারফলে শিক্ষার্থীরা তখন হাসিনার পতনের দাবি করে। এরপর থেকেই গোটা দেশ উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং পরিস্থিতির অবনমন হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে। এতে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হন। যাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষার্থী। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন আরও প্রকট হতে থাকলে দেশ থেকে পালিয়ে গত ৫ই আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে লৌহমানবী বলা হয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা তিনি। একসময় তিনি দেশের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজনীতির ময়দানে বেশ সক্রিয় হয়েছিলেন। তার আমলে বাংলাদেশ বেশ কিছুটা অর্থনৈতিক সাফল্যও পেয়েছে। তৈরি পোশাক খাত তার আমলে খানিকটা উন্নতির পথ দেখেছে। গত দুই দশকে দেশের দারিদ্রতা কমিয়ে ২০১৯ সালে জিডিপি-তে ভারতকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতিতে আগের নেতাদের তুলনায় এত ভালো করার পরও কেন এমন লজ্জাজনক পতনের সম্মুখীন হলেন শেখ হাসিনা। এর উত্তর কঠিন নয়। তিনি ছিলেন একজন স্বৈরশাসক। তিনি ভিন্নমত দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগে বিশ্বাসী ছিলেন। তার হাত থেকে আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী কেউই রক্ষা পায়নি। এদের যারাই তার সমালোচনা করেছেন তাদেরকেই হয়ত গুম নয়তো খুন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তার এই উদ্ধত আচরণের মাত্রা আরও প্রকটাকার ধারণ করেছিল। শেখ হাসিনার এমন করুণ পরিণতিতে বিশ্বের শিক্ষা হচ্ছে শত উন্নয়ন করেও জনগণের স্বাধীনতাকে হরণ করলে তার পতন নিশ্চিত।