‘আমাকে মোয়া বানানো হচ্ছে’
- আপডেট সময় ০৩:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
- / ১১৪ বার পড়া হয়েছে
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার (সাবেক ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের অবস্থান নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। শোনা যাচ্ছে, তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
সাবেক ডিবি প্রধান হারুন সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভিতে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাকে মোয়া বানানো হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে এবং বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
হারুন জানান, অন্তর্বর্তী সরকার যখন সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেয়, তখন তিনিও ৮ আগস্ট ডিএমপি কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করেন। কমিশনার তাকে যোগ দিতে নিষেধ করেন এবং নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেন।
তার কিছুদিন পর তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও কমিশনারের সঙ্গে তাকে হুকুমের আসামি করা হয়। হারুন বলেন, ‘আমি তো ডিবিতে কাজ করি। আমার কাজ হলো মামলা তদন্ত করা। অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে আমি মারামারিতে জড়িত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
তিনি আরও জানান, বিষয়টি জানার পর তাকে চাকরিতে যোগ দিতে নিষেধ করা হয় এবং অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে হারুন মনে করেন, তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে।
৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হারুনের গণপিটুনির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তিনি এসবকে গুজব বলে অভিহিত করেছেন এবং জানান, “এগুলো বলার পিছনে যারা রয়েছেন, তারা টাকা-পয়সা কামানোর জন্য এসব করেন।”
সাবেক ডিবি প্রধান হারুন আরও বলেন, অন্তবর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা যখন বললেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জয়েন করেননি আপনারা তাদের ধরে নিয়ে আসেন। আমি তখন আরো অবাক হলাম। আমি যদি চাকরিতে জয়েন না করি তাহলে প্রসিডিং করবে। আর যোগ দিলে আমাকে দিয়ে জোর করে চাকরি করাবেন। এটা শোনার পরে আমার মনে হলো রিস্ক। মানে আমার লাইফ ঝুঁকির মধ্যে। এখন মানুষকে ধরে যেভাবে পেটানো, ডিম মারা হচ্ছে। যদি আমাকে…। আগে তো বাঁচতে হবে। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে একটু চুপ আছি।
পুলিশ সদর দপ্তরের দেয়াল টপকে পালাতে গিয়ে ব্যথা পাওয়ার বিষয়ে সাবেক ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি পুলিশ সদর দপ্তরে যাইনি।’
সাবেক সরকারপ্রধান (শেখ হাসিনা) সবাইকে বিপদে ফেলে চলে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি ছোট মানুষ। আমি ডিএমপির প্রধানও না, পুলিশের প্রধান না। আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাকে মোয়া বানানো হচ্ছে। আমি কেন আলোচিত-এর একটাই কারণ যেখানে অপরাধ হয়েছে সেখানে আমি মানুষকে সেবা দিয়েছি। মানুষ যখন যে সমস্যায় পড়েছে তারা থানায় না গিয়ে ডিবিতে আসত। ডিবিতে আমার চাকরিজীবনে মানুষের উপকার করেছি। কারো ক্ষতি করিনি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অনেক বড় বড় কাজ করেছি, তবে পুরস্কার পাইনি। আমি আমার বিবেকের তাড়নায় কাজ করেছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুর সময়ে এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকা এসেছিলাম ছুটি নিয়ে। জুলাইয়ের ১৫ তারিখ দেশে ফিরি। দেশে যাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোর কমিটির বাসায় একটা মিটিং হয়। নিয়মিত সেই মিটিং হতো। মিটিংয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি, বিজিবি প্রধান ছিল। এছাড়াও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও এনটিএমসির প্রধান।
সে সময় প্রতিদিন কোর কমিটির মিটিং হচ্ছিল। একদিন মিটিংয়ে আমাকে ডাকা হলো। আমার কাছে গ্রেফতারের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। তখন আমি বলি আমার কাছে কেউ গ্রেফতার নেই। তবে র্যাব নুরুকে গ্রেফতার করে আমার কাছে দিয়েছে, নজরুল ইসলাম খানকে দিয়েছে। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে তিনজন সমন্বয়ক আছে। তাদেরকে এসবি পাহারা দিচ্ছিলো। আমাকে বলা হলো- তাদের নিরাপত্তার জন্য ডিবিতে আনার জন্য। তখন বলি আমি তাদের কিভাবে নেবো?
সে সময় তারা বলে এতকিছু বুঝার দরকার নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো আপনি নিয়ে রাখেন। আমাকে কমিশনারসহ কোর কমিটির সবাই এ কথা বলেছে। এরপর আমি ডিবির রমনা বিভাগের ডিসি হুমায়ুনকে সমন্বয়ক তিনজনকে নিয়ে আসতে বলি। হুমায়ুন তাদের নিতে আসে। তাদের মোবাইল আগেই ডিজিএফআই নিয়ে গেছিলো
পরবর্তী সময়ে রাত ২টা-তিনটার দিকে আমাকে ডিজিএফআইয়ের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন দিয়ে বলে সারজিসসহ আরও দুইজনকে ডিবি গেইটে আনা হয়েছে। আপনার কোনো এক কর্মকর্তাকে বলেন রিসিভ করতে। পরে আমি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেনশাহ মাহমুদকে ফোন দিয়ে বলি রিসিভ করতে। পরে তাদের সাইবারের একজন এডিসি রিসিভ করে।
পরের দিন ডিজিএফআই প্রধান আমাকে ফোন দিয়ে বলেন একটি মেয়ে (নুসরাত তাবাসসুম) খুব উৎপাত করছে তাকেও তুলে আনতে হবে। আমি মিরপুরের ডিসি মানস কুমার পোদ্দারকে বলি তাকে আনতে। এরপর আমাকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ সময় পুলিশ হাসপাতালে পরিদর্শনে যাওয়ার পরে আমাকে কাজের আপডেট জানতে চান এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। আমি বিস্তারিত তাকে পাঠাই। আগে তাদের বিভিন্ন সংস্থা মারধর করেছে। কিন্তু আমি তাদের (সমন্বয়ক) স্বজনদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি। আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আমি ভাতও খেয়েছি। ওই মেয়েটার মাকে এনে তার সঙ্গে রাখা হয়েছে।
এরআগে আরেকটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিলো আইন সচিবের সঙ্গে আমার কথার। আমি আইন সচিবকে বলি আমি তাদের ধরি নাই। কিন্তু আমাকে কালার করা হচ্ছে। তখন কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় আসছিলো তাদের ডিবিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমি তো কোনো কুলই পাচ্ছি না। সাধারণ মানুষ জানতেছে তাদের আমি আটকে রেখেছি। আমি হারুন তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ কথা বলিনি। ভিপি নুরের সঙ্গেও দুজন সমন্বয়কের কথা বলিয়ে দিয়েছি। তারা যাওয়ার পরে কিন্তু এখন পর্যন্ত বলে নাই হারুন তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমার ক্ষতিটা হলো মানুষ জানলো হারুন তাদের ধরে নিয়েছে।
সরকারের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে আপনি অনুতপ্ত কি না জানতে চাইলে ডিবির সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, আমি লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করিনি। আমি সরকারি চাকরি করি। আমার সঙ্গে কোনো দিন শেখ হাসিনার দেখা হয় নাই। ১৫ বছরের ক্ষমতাকালীন সময়ে কোনো দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যাইনি। আমার সঙ্গে কথা হয় নাই। আমাকে বলা হচ্ছে হুকুমদাতা। আমি হুকুমদাতা কিভাবে হলাম। আমি তো ডিএমপি কমিশনারের অধীনে কাজ করেছি। আমি যা করেছি ন্যায়বোধ থেকে করেছি। অন্যায় করিনি। ন্যায়বোধ দিয়ে কাজ করায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েছি। কিন্তু মানুষ আমার কাজের প্রশংসা করেছে। আমাকে ভুল বুঝার অবকাশ নাই।
দেশবাসী কেন আপনাকে ঘৃণা করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ১২ বছর চাকরি করেছি। আমার কোনো অন্যায় থাকলে আপনারা আমাকে ছাড়তেন? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এখন আমি একটু অড পজিশনে পড়ে গিয়েছি, এখন যদি বলে হারুন খুব খারাপ… তাহলে আমি কী খারাপটা করেছি বলেন। আমি কার ক্ষতি করেছি? আমার কাছে যারা-যেসকল আসামিরা ছিল… এমনও বড় বড় বিএনপি নেতারা আমার কাছে গিয়েছিল.. তারা আমাকে বলতো আমার ফ্যামিলি প্রবলেম আছে, আমার ফ্যামিলি প্রবলেম সলভ করে দিও। এসব বিষয়ে আমি আরেকদিন কথা বলবো।