সদ্যঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা পদ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্রদল গোপনে কাজ করতো বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।
সৃষ্ট বিতর্কের প্রেক্ষিতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫ নভেম্বর দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেছে। আগামী ২ (দুই) দিনের মধ্যে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জহির রায়হান আহমেদ ও এ বি এম ইজাজুল কবির রুয়েলের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিতে কেন্দ্রীয় সংসদ বরাবরে লিখিত আকারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২৪২ সদস্যের এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদ্রুপকারী এক নারী শিক্ষার্থীও এছাড়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাও রয়েছে কমিটিতে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ত্যাগী কর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়নি, নতুনদের নিয়ে পকেট কমিটি করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সদ্য কমিটিতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী মাহাদী ইসলাম নিয়ন। তিনি শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদের অনুসারী ছিলেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার বিভিন্ন ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন মো: বজলুর রহমান বিজয় যিনি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া কাজী শাকিব মিয়া ও সাইফুল ইসলাম রিমন, সদস্য পদ পাওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন ও রায়হান হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগে গোপনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্রুপ করার অভিযোগ থাকা সৈয়দা সুকাইনা নাফিসা তরঙ্গ পেয়েছেন জেন্ডার ন্যায্যতা ও সমতা বিষয়ক সম্পাদকের পদ। ৫ আগস্ট -এর পর খালেদা জিয়ার একটা ভিডিও বার্তা নিজ টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে তিনি লিখেন, ‘ওমা একি জাইগা উঠছে দেখি’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন ‘মাদার্স অব বার্বী গার্লস’। নি
জেদের ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ততা লুকাতে এমন পোস্ট করতেন বলে মনে করছেন অনেকে।
অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্টের আগে ঢাবি ছাত্রদলের মিছিল-মিটিং তেমন ছিল না। মিছিল করলেও লোক ২৫ থেকে ৩০ জনের বেশি খুঁজে পাওয়া যেতো না। ২৪২ সদস্যের কমিটির অনেকেই অপরিচিত। যাদের কখনোই আন্দোলন-সংগ্রামে দেখা যায়নি। তবে তারা ছাত্রদলের সাথে গোপনে সম্পৃক্ত থেকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে কাজ করতেন বলে মনে করছেন নেটিজেনরা। তবে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে আগে থেকে সরাসরি দলের হয়ে কাজ করা পদবঞ্ছিত অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ‘কমিটিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা আগে ছাত্রলীগের মধু খেয়েছেন এখন ছাত্রদলের মধু খাচ্ছেন। এমন অন্তত ১০০ জন পদ পেয়েছেন যাদের বিগত সময়ে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এত এত অপরিচিতদের নিয়ে কমিটি গঠন কেন? সংগঠনে যদি তারা গোপনে সংযুক্তও থাকেন তবুও যাদের হাতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রক্ত লেগে আছে তাদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাবি সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি আমরা। বিষয়টি আমরা দেখছি। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তবে তার আগে আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। আমরা অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছি। এসব অভিযোগের সত্যতা মিললে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত এবং ইতোমধ্যে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তক্রমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’