ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউএনও কার্যালয়ে ঢুকে ৩ ইউপি সদস্যকে মারধর করলেন বিএনপি নেতারা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঢুকে তিন ইউপি সদস্যের ওপর হামলা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহত ইউপি সদস্যরা হলেন- নলচিড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আহাদুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল হোসেন হীরা ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মামুন খলিফা। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন হীরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ১১ ইউপি সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। স্থানীয় সরকার (ইউপি) আইন অনুযায়ী তদন্তে নিযুক্ত হন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ইউএনও কার্যালয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। সেই উপলক্ষে আমিসহ দুই ইউপি সদস্য বিকেল ৩টার দিকে কার্যালয়ের একটি কক্ষে অপেক্ষা করছিলাম।

হীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘সাক্ষ্যদানে বাধা দিতেই চেয়ারম্যান হাফিজ মৃধা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের উসকিয়ে দিয়ে সহিংসতা তৈরির পরিকল্পনা করেন। এরপর বিএনপি নেতা আবু বকর গাজী ও ফুয়াদ হোসেন এ্যানীর নেতৃত্বে ২০-৩০ জন নেতাকর্মী আমাদের কক্ষে ঢুকে অতর্কিত হামলা করে। একইসাথে কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।’

তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা বলেন, ‘আমি কোনো হামলার সাথে জড়িত না। কারা মারধর করেছে, সেটা আমি পরিষদে বসে শুনেছি। এ অনাস্থা একটি পরিকল্পিত নাটক। যাতে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা যায়। অনাস্থা আনা হলেও আমি পরিষদের কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ীই পরিচালনা করে আসছি।’

অন্যদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ফুয়াদ হোসেন এ্যানী বলেন, ‘আমরা দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে উপজেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হীরাকে দেখে কয়েকজন যুবক ধাওয়া করে। সে সময় পড়ে গিয়ে হয়তো হাত-পা কেটে গেছে। যদি সত্যিকারের মারধর হতো তাহলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতো। হয়তো কয়েকটা চর-থাপ্পড় হয়েছে।’

এদিকে এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা আবু বকরকে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে ওই ইউপি সদস্যদের দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনাটি তারই প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’

এদিকে ঘটনার সময় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না ইউএনও রিফাত আরা মৌরি। পরে তিনি জানান, ‘আমি সাইট পরিদর্শনে বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত ফিরে আসি। এসে জানতে পারি, হামলাকারীরা অফিস সহকারীর কক্ষে ঢুকে ইউপি সদস্যদের ওপর হামলা চালায় ও অফিসের কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ইউনুস মিয়া বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছালেও হামলাকারীরা এর আগেই পালিয়ে যায়। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ইউএনও কার্যালয়ে ঢুকে ৩ ইউপি সদস্যকে মারধর করলেন বিএনপি নেতারা

আপডেট সময় ০৬:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঢুকে তিন ইউপি সদস্যের ওপর হামলা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহত ইউপি সদস্যরা হলেন- নলচিড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আহাদুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল হোসেন হীরা ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মামুন খলিফা। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন হীরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ১১ ইউপি সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। স্থানীয় সরকার (ইউপি) আইন অনুযায়ী তদন্তে নিযুক্ত হন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ইউএনও কার্যালয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। সেই উপলক্ষে আমিসহ দুই ইউপি সদস্য বিকেল ৩টার দিকে কার্যালয়ের একটি কক্ষে অপেক্ষা করছিলাম।

হীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘সাক্ষ্যদানে বাধা দিতেই চেয়ারম্যান হাফিজ মৃধা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের উসকিয়ে দিয়ে সহিংসতা তৈরির পরিকল্পনা করেন। এরপর বিএনপি নেতা আবু বকর গাজী ও ফুয়াদ হোসেন এ্যানীর নেতৃত্বে ২০-৩০ জন নেতাকর্মী আমাদের কক্ষে ঢুকে অতর্কিত হামলা করে। একইসাথে কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।’

তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা বলেন, ‘আমি কোনো হামলার সাথে জড়িত না। কারা মারধর করেছে, সেটা আমি পরিষদে বসে শুনেছি। এ অনাস্থা একটি পরিকল্পিত নাটক। যাতে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা যায়। অনাস্থা আনা হলেও আমি পরিষদের কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ীই পরিচালনা করে আসছি।’

অন্যদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ফুয়াদ হোসেন এ্যানী বলেন, ‘আমরা দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে উপজেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হীরাকে দেখে কয়েকজন যুবক ধাওয়া করে। সে সময় পড়ে গিয়ে হয়তো হাত-পা কেটে গেছে। যদি সত্যিকারের মারধর হতো তাহলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতো। হয়তো কয়েকটা চর-থাপ্পড় হয়েছে।’

এদিকে এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা আবু বকরকে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে ওই ইউপি সদস্যদের দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনাটি তারই প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’

এদিকে ঘটনার সময় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না ইউএনও রিফাত আরা মৌরি। পরে তিনি জানান, ‘আমি সাইট পরিদর্শনে বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত ফিরে আসি। এসে জানতে পারি, হামলাকারীরা অফিস সহকারীর কক্ষে ঢুকে ইউপি সদস্যদের ওপর হামলা চালায় ও অফিসের কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ইউনুস মিয়া বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছালেও হামলাকারীরা এর আগেই পালিয়ে যায়। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’