ঢাকা ০৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পিকেকে বিলুপ্তঃ শেষ হলো তুরস্কের চার দশকের সঙ্ঘাত

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

পিকেকের কারাবন্দি নেতা আব্দুল্লাহ ওকালান

কুর্দি সংগঠন পিকে-র বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তুরস্কের চার দশকের সঙ্ঘাত। সোমবার সংগঠনটি পিকেকে-র নামে পরিচালিত সব ধরনের কার্যক্রমের বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, কুর্দি সমস্যা এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। সংগঠনের ১২তম কংগ্রেসে পিকেকে-র কাঠামো ভেঙে দেয়া ও সশস্ত্র সংগ্রামের অবসানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওকালান।

অবশ্য বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি যে এই সিদ্ধান্ত ইরাক, সিরিয়া ও ইরানের পিকেকে-সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা। নিরস্ত্রীকরণের পদ্ধতি বা যোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও কিছু বলা হয়নি।

তারা জানায়, ‘তুর্কি-কুর্দি সম্পর্ক পুনর্গঠন অনিবার্য’। এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দ্বারা প্রভাবিত। এটি তুরস্কের সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় বলেছে, এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে ‘উগ্রবাদমুক্ত তুরস্ক’ গঠনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।

ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির মুখপাত্র ওমর সেলিক বলেছেন, ‘যদি উগ্রবাদ পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়, তাহলে একটি নতুন যুগ শুরু হবে।’ তিনি যোগ করেন যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে কার্যকর করতে হবে এবং সব দিক থেকেই তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’

১৯৭৮ সালে ওকালান পিকেকে গঠন করেন। তৎকালীন লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। পরে তারা তুরস্কের অভ্যন্তরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে। মার্চে ওকালান অস্ত্র ত্যাগ ও দল ভাঙার আহ্বান জানান। এরপর পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

এই দীর্ঘ সংঘাতে অন্তত ৪০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এরদোগানের সাথে কুর্দিদের সম্পর্ক জটিল। তিনি একসময় তাদের অধিকার সমর্থন করে ভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ২০১৩ সালে তিনি এইচডিপির মাধ্যমে পিকেকে-র সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু ২০১৫ সালে আলোচনা ভেঙে পড়ে এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে কুর্দিপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। সরকার তাদের পিকেকে-র সাথে সম্পর্কিত বলে অভিযুক্ত করে।

মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কুর্দিরা তুরস্কের বৃহত্তম সংখ্যালঘু। তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৫-২০ শতাংশ। কুর্দিদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে উত্তর সিরিয়া, ইরাক ও ইরানেও।

সূত্র : সিএনএন

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

পিকেকে বিলুপ্তঃ শেষ হলো তুরস্কের চার দশকের সঙ্ঘাত

আপডেট সময় ১১:৫৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
কুর্দি সংগঠন পিকে-র বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তুরস্কের চার দশকের সঙ্ঘাত। সোমবার সংগঠনটি পিকেকে-র নামে পরিচালিত সব ধরনের কার্যক্রমের বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, কুর্দি সমস্যা এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। সংগঠনের ১২তম কংগ্রেসে পিকেকে-র কাঠামো ভেঙে দেয়া ও সশস্ত্র সংগ্রামের অবসানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওকালান।

অবশ্য বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি যে এই সিদ্ধান্ত ইরাক, সিরিয়া ও ইরানের পিকেকে-সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা। নিরস্ত্রীকরণের পদ্ধতি বা যোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও কিছু বলা হয়নি।

তারা জানায়, ‘তুর্কি-কুর্দি সম্পর্ক পুনর্গঠন অনিবার্য’। এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দ্বারা প্রভাবিত। এটি তুরস্কের সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় বলেছে, এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে ‘উগ্রবাদমুক্ত তুরস্ক’ গঠনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।

ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির মুখপাত্র ওমর সেলিক বলেছেন, ‘যদি উগ্রবাদ পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়, তাহলে একটি নতুন যুগ শুরু হবে।’ তিনি যোগ করেন যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে কার্যকর করতে হবে এবং সব দিক থেকেই তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’

১৯৭৮ সালে ওকালান পিকেকে গঠন করেন। তৎকালীন লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। পরে তারা তুরস্কের অভ্যন্তরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে। মার্চে ওকালান অস্ত্র ত্যাগ ও দল ভাঙার আহ্বান জানান। এরপর পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

এই দীর্ঘ সংঘাতে অন্তত ৪০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এরদোগানের সাথে কুর্দিদের সম্পর্ক জটিল। তিনি একসময় তাদের অধিকার সমর্থন করে ভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ২০১৩ সালে তিনি এইচডিপির মাধ্যমে পিকেকে-র সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু ২০১৫ সালে আলোচনা ভেঙে পড়ে এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে কুর্দিপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। সরকার তাদের পিকেকে-র সাথে সম্পর্কিত বলে অভিযুক্ত করে।

মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কুর্দিরা তুরস্কের বৃহত্তম সংখ্যালঘু। তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৫-২০ শতাংশ। কুর্দিদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে উত্তর সিরিয়া, ইরাক ও ইরানেও।

সূত্র : সিএনএন