মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, যুদ্ধে ভারতের পরিণতি আরো খারাপ হওয়ার গোয়েন্দা তথ্যের ইঙ্গিত আরো তীব্র হওয়ার পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলস ভারতকে জরুরি মধ্যস্থতার আহ্বান জানান। ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিপর্যয়কর ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেন এবং পাকিস্তানের সাথে ভারতকে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানান।
২০১৯ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, পারমাণবিক যুদ্ধের ভূত, এ দু’টি দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে এবং তা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিলে তাতে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ১২৫ মিলিয়ন তথা সাড়ে ১২ কোটি মানুষ নিহত হতে পারে। তখন ওই গবেষণার ফলাফল আঞ্চলিক উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলেছিল এবং মার্কিন কূটনৈতিক উন্মাদনাকে উসকে দিয়েছিল।
প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান বেদ প্রকাশ মালিক এক্সে পোস্ট করেছেন : “যুদ্ধবিরতি ১০ মে ২৫ : ভারতের গতিশীল ও অগতিশীল পদক্ষেপের পরে রাজনৈতিক-কৌশলগত সুবিধা, যদি থাকে তা জিজ্ঞাসা করার জন্য আমরা ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাস ছেড়ে দিয়েছি।” ভারতের পার্লামেন্ট সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসি একই প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন : “আমি চাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো বিদেশী দেশের রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। আমরা সর্বদা সিমলা (১৯৭২) থেকে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছি। আমরা এখন কেন এটি (যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের চাপ) মেনে নিচ্ছি? আমি আশা করি কাশ্মির সমস্যা আন্তর্জাতিকীকরণ করা হবে না, কারণ এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
ওয়াইসির মন্তব্যটি সম্ভবত ট্রাম্পের এই বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক, “দেখার জন্য, ‘হাজার বছর পরে’ কাশ্মিরের বিষয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় কিনা।”
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে, ধারণা প্রায়ই বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যায়- যতক্ষণ না বাস্তবতা কামড়ে ধরে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পারমাণবিক শক্তিতে শক্তিশালী আঞ্চলিক আধিপত্যের কথা বলে আসছে। তবুও ২২ এপ্রিল কাশ্মিরে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) পরিচালিত গণহত্যার পর তার পদক্ষেপগুলো দুর্বলতাগুলোকে প্রকাশ করে দিয়েছে। শক্তি জাহির করার উদ্দেশ্যে, ভারতের প্রতিক্রিয়া শেষ পর্যন্ত হ্রাস পায়, যা পাকিস্তানের আঞ্চলিক অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করে এবং মোদির সরকারকে কূটনৈতিকভাবে দুর্বল করে দেয়।
৭ মে, ভারত টিআরএফের মতো গোষ্ঠীগুলোর সাথে যুক্ত সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করার জন্য অপারেশন সিঁদুর শুরু করে কিন্তু ফরাসি-নির্মিত রাফায়েল জেট ভূপাতিত হলে এই অভিযানটি ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের মধ্যে মোদির শক্তিশালী ভাবমর্যাদা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। যদিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতের সাফল্যের বিরুদ্ধে বিতর্ক ছিল। পাকিস্তান ভারতের হামলায় শিশুসহ বেসামরিক হতাহতের খবর জানালেও, ভারত দাবি করেছে যে কেবল সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিতেই আঘাত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নিজস্ব বিমান ব্যবহার করে এবং দাবি করে যে তারা তিনটি রাফায়েলসহ পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে নিশ্চিত করেছেন যে চীনা গোয়েন্দা নজরদারি এবং পুনর্বিবেচনার (আইএসআর) সহায়তায় একটি চীনা তৈরি জে-১০ জেট কমপক্ষে দু’টি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত কোনো ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম প্রথমে করাচির সমুদ্রবন্দরসহ পাকিস্তানের শহরগুলোতে বিধ্বংসী হামলার দাবি করলেও যা স্পষ্টতই প্রচারণার অংশ ছিল, তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
৯ মে, ভারত ইসলামাবাদের কাছে একটি ঘাঁটিসহ পাকিস্তানি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে পাকিস্তান দাবি করেছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী উধমপুর, পাঠানকোট, আদমপুর ও ভূজে ভারতীয় বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ব্যোমিকা সিং জানিয়েছেন যে পাকিস্তানি ড্রোন এবং গোলাবারুদ বেসামরিক এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি ভারতের কৌশলগত সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করেছে, অস্পষ্টতার পরিবর্তে বিশ্বব্যাপী তদন্ত শুরু করেছে। নয়া দিল্লিতে নতজানু প্রতিক্রিয়া হতে পারে প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং কাশ্মিরের সামরিকীকরণ আরো গভীর করা।
ভারত সরকার যখন তার পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে, তখন তাদের বিবেচনা করা উচিত যে ছায়াযুদ্ধের স্থিতাবস্থা এবং অস্থিরতাকে উসকে দেয়ার গোপন আগ্রাসনের চক্র অস্থিতিশীল। উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে প্রক্সিদের সমর্থন করে আসছে, যার ফলে কাশ্মির থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের ওপরই এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্ভর করছে। বাকপটুতা নয়, সংযমই নীতিমালাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তা না করতে পারলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও লাখ লাখ মানুষের জন্য কষ্টের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দরিদ্র মানুষ এবং ৩৫ কোটিরও বেশি নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্কদের আবাসস্থল ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘস্থায়ী সঙ্ঘাতের ভার বহন করতে পারবে না। অব্যাহত উত্তেজনা ভারতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে, যা যেকোনো কৌশলগত অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।