এ ব্যাপারে আখতার হোসেন জানান, ‘ডাকযোগে পাঠানো চিঠিটিতে প্রেরকের স্বাক্ষরে বুলেট (ছদ্মনাম) এবং ৩০ নভেম্বর ২০২৪ লেখা হয়েছে। প্রেরকের ঠিকানা দেয়া হয়েছে বিশ্বনাথ, টেপামধুপুর, কাউনিয়া, রংপুর। চিঠিটি শুক্রবার (১৬ মে) তারিখে বাদ এশা আমার গ্রামের বাড়ি কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুরের মুন্সিপাড়ায় পৌঁছে দেয় পিয়ন। সেদিন আমাকে বাড়ি থেকে কয়েকবার ফোন দিলেও আমি রিসিভ করতে পারিনি। আজ (১৭ মে) রাত ১০টার দিকে বাড়ির ফোন রিসিভ করে বিষয়টি জানতে পারি। বড় ভাই মোহাম্মদ আলীর নামে চিঠিটি পাঠানো হয়।’
তিনি আরো জানান, চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমি আশা করি আপনারা আমার এই অনুরোধকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কাজে আর জড়িত হবেন না। ইতোমধ্যে যেসব অপরাধ করেছেন তার জন্য আপনাদেরকে রাস্তাঘাটে খুন-খারাপিসহ নানা ধরনের হয়রানীমূলক ঝামেলায় পড়তে হবে। আখতারকে রংপুর অথবা গ্রামের বাড়ি বাজার কাউনিয়া অথবা যেকোনো জায়গায় খুন করা হবে। এটা অগ্রিম জেনে নিন, সতর্ক হোন।’ বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে লেখা হয়, ‘ভায়ারহাট বাজারে আপনাদের যেকাউকে যেকোনো মুহূর্তে মারপিটসহ খুব ঝামেলাময় পরিবেশের সম্মুখিন হওয়ার পরিকল্পনা চলছে।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি রাজনৈতিকভাবে যারা আমাদের চিরশত্রু, তারা ফ্যাসিবাদি শক্তি। তাদের কেউ হয়তো এটা করে থাকতে পারে। আমি থানার ওসির সাথে কথা বলেছি। জিডি করা হয়েছে। ডাকবিভাগের ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজে পাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয় সেটাই আরজি জানাব।’
‘আমার কাছে এই হুমকি তুচ্ছ। কারণ রাজনীতি করতে গিয়ে অনেকবার নৃশংস হামলার শিকার হয়েছি। জেল খেটেছি। আমি মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করি। আমি কোনোভাবেই শঙ্কিত না। কিন্তু যেহেতু আমার পরিবার রাজনীতি করে না। তারা সাধারণ মানুষ। সেকারণে তারা শঙ্কিত,’ বলেন আখতার।
আখতারের ভাই আরিফ জানান, ‘শুক্রবার এশার নামাজের পর চিঠিটা পেয়েছি। আমার বড় ভাইয়ের নামে চিঠিটা এসেছে। আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থানায় এসেছি। এখন জিডি করবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব খুঁজে বের করা এটা কার কাজ।’
কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল লতিব শাহ জানান, ‘আখতার সাহেবকে খুনের হুমকি দেয়া বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তার ভাই থানায় এসে জিডি করেছেন। এরই মধ্যে আমরা আখতারের বাড়ি, আশেপাশের এলাকা এবং বাজার এলাকায় পুলিশী টহল দিয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছি।’
এব্যাপারে জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা ও মহানগর সংগঠক আলমগীর নয়ন বলেন, ‘আখতার হোসেনকে হত্যার হুমকি দেয়া মানে জুলাই আন্দোলনকে হুমকি দেয়া। আমরা চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হুমকিদাতাকে গ্রেফতার করা হবে। এর পেছনে যারা কুশিলব তাদেরকে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রংপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান তিনি। শনিবার রাত ১০টার দিকে আখতার হোসেন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ বিষয় নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। ওই স্ট্যাটাসে আখতার লেখেন, “ডাকযোগে আমার গ্রামের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে আমাকে, আমার পরিবার-পরিজনকে খুন করার হুমকি দিয়েছে। চিঠির প্রেরকের ছদ্মনাম ‘বুলেট’। চিঠিটা ডাকপিওন গতকাল বড়ো ভাইয়ের কাছে দেয়। চিঠি পড়ার পর থেকে বাড়ির মানুষেরা চিন্তিত হয়ে আছেন। যেখানে পাবে, সেখানে খুন করবে, ঝামেলায় ফেলবে এমন হুমকি।” ‘বোনাস লাইফ লিড করতেছি। মৃত্যু কয়েকবার কাছে এসে ফিরে গেছে। মরতে হতে পারে জেনেও প্রতিবাদে পিছপা হইনি, কখনো হবো না। ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ ভরসা।’
এদিকে, প্রেরকের ঠিকানায় ০১৭১৩-৩৭৩৮০০ মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। যা পুলিশ বাহিনীর আগের নম্বর। (এখন পুলিশ ০১৩২০ কোড ব্যাবহার করে) ওই নম্বরে ফোন দিলে ওসি পবা থানা দেখা যায়। যে ছবিটি আসে, তাতে লেখা পরিমল কুমার চক্রবর্তী। ২০১৭ সালে তিনি পবা মডেল থানার ওসি ছিলেন।