ঢাকা ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন নিয়ে এখনই চূড়ান্ত বিরোধে যাবে না বিএনপি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • / ৫৩ বার পড়া হয়েছে
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষিত না হওয়ায় বিএনপিতে অসন্তোষ থাকলেও এখনই রাজপথের কর্মসূচিতে নেমে সরকারের সাথে সরাসরি কোনো বিরোধে জড়াতে চায় না দলটি। তারা কমপক্ষে আরো দু’মাস সরকারের মতিগতি পর্যবেক্ষণ করবে। এরপরও নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে কিংবা নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হলে তখন রাজপথের কর্মসূচির কথা ভাববে বিএনপি। সেক্ষেত্রে মিত্র দলগুলোর সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি বর্তমানে দলটি যেভাবে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছে, আগামী আরো বেশ কিছুদিন ঠিক একইভাবে তা অব্যাহত রেখে সরকারের ওপর চাপ বজায় রাখবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বলেছেন, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা ব্যর্থ হতে দিতে চান না এবং শুরু থেকেই সরকারকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে আসছেন; সুতরাং সরকারের ওপর এখনো তাদের প্রত্যাশা, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে। বিরাজমান হযবরল পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।

বৈঠকটি রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১১টার দিকে শেষ হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইন), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইন), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান (অনলাইন), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইন), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অনলাইন) এবং অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

জানা গেছে, বৈঠকে বিভিন্ন এজেন্ডা থাকলেও মূলত দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিভিন্ন পক্ষ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে হঠাৎ করে মাঠে নামায় এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অবনতিশীল। কেউ কেউ মনে করেন, সরকারকে বিপদে ফেলতে নানা চক্রান্ত চলছে। সম্প্রতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নানা পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা। পতিত স্বৈরাচারের লোকজনও হঠাৎ হঠাৎ করে রাজপথে মিছিল করছে। এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা যে থেমে থেমে নিত্য-নতুন দাবি তুলছে এবং দাবি আদায়ে রাজপথে নামছে, এর মধ্য দিয়েও সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। বিএনপির কারো কারো শঙ্কা, রাষ্ট্রপতি অপসারণ, সংবিধান বাতিল, গণভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন- এই ইস্যুগুলোতে তারা (এনসিপি) ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। সরকার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা কিংবা সরকারের অবস্থান তখন কী হয়, সেটি নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগতভাবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এখনো সেটাকে সেভাবে আমলে নিচ্ছে না। বরং সংস্কার ও নির্বাচনকে তারা মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী করতে চায় কিংবা সরকার আদৌ নির্বাচন দেবে কিনা, বৈঠকে সেটা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন নেতারা।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ বিরাজনীতিকরণ বা তাদের মদদপুষ্ট একটি দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। তাদের এ চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে, যা দেশকে গণতন্ত্রে উত্তোরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখতে আন্দোলনের পক্ষেও মত দেন দুই-একজন। তবে এই ইস্যুতে এখনই মাঠে নামার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে অভিমত দেন অন্যরা। নানামুখী আলোচনার পরে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকারের ওপর এখনো তাদের প্রত্যাশা, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন এবং দ্রুত রোডম্যাপ দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করবেন।

বৈঠকে আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়াতে সরকারের গড়িমসি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি নীতিগতভাবে মনে করে, এমন অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেয়া উচিত। মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার কর্মী-সমর্থক ও ঢাকাবাসীরা যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ করছে, সেটিকে যৌক্তিক ও সঙ্গত মনে করে বিএনপি।

নয়া দিগন্ত

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচন নিয়ে এখনই চূড়ান্ত বিরোধে যাবে না বিএনপি

আপডেট সময় ১২:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষিত না হওয়ায় বিএনপিতে অসন্তোষ থাকলেও এখনই রাজপথের কর্মসূচিতে নেমে সরকারের সাথে সরাসরি কোনো বিরোধে জড়াতে চায় না দলটি। তারা কমপক্ষে আরো দু’মাস সরকারের মতিগতি পর্যবেক্ষণ করবে। এরপরও নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে কিংবা নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হলে তখন রাজপথের কর্মসূচির কথা ভাববে বিএনপি। সেক্ষেত্রে মিত্র দলগুলোর সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি বর্তমানে দলটি যেভাবে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছে, আগামী আরো বেশ কিছুদিন ঠিক একইভাবে তা অব্যাহত রেখে সরকারের ওপর চাপ বজায় রাখবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বলেছেন, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা ব্যর্থ হতে দিতে চান না এবং শুরু থেকেই সরকারকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে আসছেন; সুতরাং সরকারের ওপর এখনো তাদের প্রত্যাশা, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে। বিরাজমান হযবরল পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।

বৈঠকটি রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১১টার দিকে শেষ হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইন), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইন), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান (অনলাইন), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইন), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অনলাইন) এবং অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

জানা গেছে, বৈঠকে বিভিন্ন এজেন্ডা থাকলেও মূলত দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিভিন্ন পক্ষ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে হঠাৎ করে মাঠে নামায় এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অবনতিশীল। কেউ কেউ মনে করেন, সরকারকে বিপদে ফেলতে নানা চক্রান্ত চলছে। সম্প্রতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নানা পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা। পতিত স্বৈরাচারের লোকজনও হঠাৎ হঠাৎ করে রাজপথে মিছিল করছে। এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা যে থেমে থেমে নিত্য-নতুন দাবি তুলছে এবং দাবি আদায়ে রাজপথে নামছে, এর মধ্য দিয়েও সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। বিএনপির কারো কারো শঙ্কা, রাষ্ট্রপতি অপসারণ, সংবিধান বাতিল, গণভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন- এই ইস্যুগুলোতে তারা (এনসিপি) ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। সরকার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা কিংবা সরকারের অবস্থান তখন কী হয়, সেটি নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগতভাবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এখনো সেটাকে সেভাবে আমলে নিচ্ছে না। বরং সংস্কার ও নির্বাচনকে তারা মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী করতে চায় কিংবা সরকার আদৌ নির্বাচন দেবে কিনা, বৈঠকে সেটা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন নেতারা।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ বিরাজনীতিকরণ বা তাদের মদদপুষ্ট একটি দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। তাদের এ চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে, যা দেশকে গণতন্ত্রে উত্তোরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখতে আন্দোলনের পক্ষেও মত দেন দুই-একজন। তবে এই ইস্যুতে এখনই মাঠে নামার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে অভিমত দেন অন্যরা। নানামুখী আলোচনার পরে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকারের ওপর এখনো তাদের প্রত্যাশা, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন এবং দ্রুত রোডম্যাপ দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করবেন।

বৈঠকে আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়াতে সরকারের গড়িমসি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি নীতিগতভাবে মনে করে, এমন অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেয়া উচিত। মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার কর্মী-সমর্থক ও ঢাকাবাসীরা যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ করছে, সেটিকে যৌক্তিক ও সঙ্গত মনে করে বিএনপি।

নয়া দিগন্ত