তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আজই অন্তত ১০০ ত্রাণবাহী লরি গাজায় পৌঁছাতে পারবে। ‘আমাদের গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার বন্যা বইয়ে দেয়া দরকার,’ বলেছেন তিনি। তার মতে, আরো সহায়তা নেয়া যায় কি-না সেটাই হবে জাতিসঙ্ঘের ‘সত্যিকার পরীক্ষা’।
ওদিকে গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করার বিষয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করে এটি বন্ধ করতে বলেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। একই সাথে দেশ তিনটি গাজায় ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধ কালই শেষ হয়ে যেতে পারে যদি হামাস সব পণবন্দীকে ছেড়ে দেয় ও অস্ত্র সমর্পণ করে।
এখনো হামাসের হাতে ৫৮ জন পণবন্দী আছে এবং এদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত আছে বলে মনে করা হয়।
কিভাবে ১৪ হাজার সংখ্যা ঠিক হলো
বিবিসির আন্না ফস্টার টম ফ্লেচারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আরো সহায়তা না পেলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে- এটি জাতিসঙ্ঘ কিভাবে ঠিক করলো। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘সেখানে আমাদের শক্তিশালী টিম আছে এবং অবশ্যই তাদের অনেকে নিহত হয়েছে। তারপরও এখনো আমাদের অনেকে লোকজন আছে সেখানে।’
ফ্লেচার বলেন, তারা চিকিৎসা কেন্দ্রে আছে, স্কুলে আছে… আরো মূল্যায়নের চেষ্টা করছে।
যা ত্রাণ যাচ্ছে তা সাগরে এক বিন্দুর মতো
রোববার ইসরাইল গাজায় তাদের চলমান ১১ সপ্তাহের অবরোধ তুলে ত্রাণ পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। তারা বলেছে, ওই অবরোধ তারা দিয়েছিল হামাসের ওপর চাপ তৈরির জন্য। এর মধ্যে ত্রাণের অপব্যবহারের বিষয়টিও দেশটি উল্লেখ করেছে।
যদিও টম ফ্লেচার বলছেন, ইসরাইল যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। ‘আজ নয়টি ট্রাক কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে,’ ফ্লেচার সোমবার সন্ধ্যায় বলছিলেন।
‘কিন্তু এটি সাগরে এক বিন্দু পানির মতো। মঙ্গলবার সকাল থেকে আরো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।’
‘লুটপাট কমাতে ত্রাণের নিয়মিত প্রবাহ থাকতে হবে। মানবিক কর্মীদের একাধিক রুটে সেখানে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি বাণিজ্যিক পণ্যসামগ্রী যেতে দিতে হবে,’ বলছিলেন তিনি।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা চাপ বাড়াচ্ছে
টম ফ্লেচার বিবিসিকে রেডিও ফোরকে আরো বলেছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা শক্ত ভাষায় যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। ‘এটা পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছে। তবে জাতিসঙ্ঘের জন্য সত্যিকার পরীক্ষা হবে আরো সহায়তা নেয়া যায় কি-না,’ বলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ চায় বিশ্ব সংস্থাটিকে আরো সমর্থন দিক যাতে তারা ‘ক্ষুধার্ত মানুষদের’ জন্য সাহায্য পাঠাতে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে পারে।
‘শিশুর জন্য খাবার পাচ্ছি না’
জেরুসালেম থেকে অ্যালিস কাড্ডি লিখেছেন, উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিরা অনেকে বিবিসির কাছে খাবারের জন্য তাদের সংগ্রামের কথা জানিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা যে অল্প পরিমাণ ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে সেটি তাদের কাছে নাও পৌঁছাতে পারে।
‘বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য একটা রুটির টুকরো পর্যন্ত পাচ্ছি না। দক্ষিণাঞ্চল থেকে কিভাবে আমরা সাহায্য পাবো? সেখানে যাওয়া আমাদের জন্য কঠিন। আমরা একটি ট্রাজেডির মধ্যে বাস করছি,’ গাজায় এক ব্যক্তি বলছিলেন। ‘ক্ষুধায় এবং খাদ্যের অভাবে লোকজন অজ্ঞান হয়ে পড়তে শুরু করেছ। আমরা জানি না বাচ্চাদের কী খাওয়াবো। ডাল, চাল, ময়দা কিংবা অন্য কোনো ধরনের খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ একটা টমেটো পর্যন্ত কিনতে পারছে না। কেউ এক ব্যাগ ময়দা পাচ্ছে না।’
আবু সালেম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন তেল, চিনি ও গ্যাসের জন্য মানুষ পাগল হয়ে গেছে।
‘বাচ্চাদের জন্য খাবার দরকার,’ বলছিলেন তিনি।
ইসরাইল যা বলছে
সোমবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের চাপের কারণে ‘ন্যূনতম পরিমাণ’ সহায়তা পাঠানোর অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘বাস্তব ও কূটনৈতিক অবস্থান থেকে আমাদের দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির দিকে যাওয়া যাবে না,’ তিনি বলেছেন।
ইসরাইল বলছে অবরোধ দেয়া হয়েছিল হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য, যাদের হাতে এখনো ৫৮ জন পণবন্দী আছে। এসব পণবন্দীদের মধ্যে অন্তত ২৩ জন এখনো জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরাইলের অভিযোগ, হামাস ত্রাণের অপব্যবহার ও ত্রাণ চুরি করে। তবে এ ধরনের অভিযোগ হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে।
সূত্র : বিবিসি