পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদে তার অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (১ জুন) বিকেল ৫টায় উপজেলার কালাইয়া সড়কের পাশে আয়োজিত শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে ইউএনওর কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে দিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বাউফল কালাইয়া সড়কের পাশে সংবাদ সম্মেলন শুরু করলে প্রথমে কয়েকজন যুবক জোরপূর্বক সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার ও পরে লিখিত বক্তব্যের নোট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর কয়েকজন আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশের শতাধিক সদস্য শিক্ষার্থীদের জায়গাটি চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ও ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে পণ্ড হয়ে যায় সংবাদ সম্মেলনটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী শুভ চন্দ্র শীল বলেন, ‘সাংবাদিককে প্রকাশ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণসহ দুর্নীতিবাজ ইউএনওর অপসারণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিকেলেও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু ইউএনওর ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হামলায় পণ্ড গেছে সম্মেলনটি।’
সিয়াম আহম্মেদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে থেকেই সংবাদ সম্মেলন না করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। তিনি এখন ইউএনওর চাকুরির পাশাপাশি বাউফলে সন্ত্রাসী লালন পালন শুরু করেছেন। যাতে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারেন।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক আরেক সদস্য মোসা. শাহনাজ বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। এখন আমাদের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। বাউফলের ইউএনও আমিনুল ইসলাম একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের ভাগনির জামাই তিনি। ফ্যাসিবাদ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ইউএনও আমিনুল ইসলাম আমাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলার ইউএনও আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ধরনের কোনো ঘটনা আজ ঘটেনি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে ইউএনওকে না জানিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এমরান হাসান সোহেলের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ইউএনও আমিনুলের বিরুদ্ধে। একইদিন বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদকের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজিত স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে বিদ্যালয়ে এসে ক্ষুব্ধ হয়ে যান তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন এক কর্মচারী, যে তার মালিককেও শাস্তি দিতে পারে।’ পরে ২১ মে বিকেলে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্রজনতার ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি থেকেও ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।