চাঁদা না দিলে ‘টর্চার সেলে’ আটকে নির্যাতন করতেন ছাত্রদল নেতা জিয়েস

- আপডেট সময় ০৯:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
- / ৫৭ বার পড়া হয়েছে
প্রথমে দোকান বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে না পারলে দোকানে ঝুলিয়ে দেয়া হয় তালা। এতেও কাজ না হলে তুলে এনে টর্চার সেলে বন্দি করে করা হয় নির্যাতন। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের তারাকান্দায়।
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় টর্চারসেলে নির্যাতন করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে হিজবুল আলম জিয়েস (২৬) নামের এক ছাত্রদল নেতাসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।আগস্টের পর বানিহালা ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে আধিপত্য বিস্তার করেন জিয়েস। বিভিন্ন ব্যক্তিকে তার টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) মাঝিয়ালি বাজারে চুল কেটে টাকা না দিয়ে উল্টো দোকানি হক মিয়ার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন জিয়েস। টাকা না দেওয়ায় সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হক মিয়াকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সেলুনে তালা লাগিয়ে দেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে জিয়েসকে ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার (১১ আগস্ট) ভোরে হিজবুল আলম জিয়েসের দুই সহযোগী ও রাত ৯টার দিকে জিয়েসকে গ্রেফতার করা হয়।
হিজবুল আলম জিয়েস একই উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের মাঝিলি গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি একই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন হিজবুল। তার দুই সহযোগী নাম রাফি (১৯) ও আবদুল্লাহ (২০)। তারা একই উপজেলার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হিজবুলের কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও গত বছরের আগস্টের পর বানিহালা ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে আধিপত্য বিস্তার করেন জিয়েস। বিভিন্ন ব্যক্তিকে তার টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) মাঝিয়ালি বাজারে চুল কেটে টাকা না দিয়ে উল্টো দোকানি হক মিয়ার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন জিয়েস। টাকা না দেওয়ায় সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হক মিয়াকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সেলুনে তালা লাগিয়ে দেন।
পরদিন বিকেলে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক মামুন সরকারের আশ্বাসে সেলুন খোলেন হক মিয়া। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মামুনকে মারধর করেন হিজবুল। এ ঘটনায় সোমবার মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তারাকান্দা থানায় মামলা করেন মামুন। মামলায় জিয়েসসহ ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।
ওই মামলায় জিয়েসসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় মাঝিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে জিয়েসের একটি মাছের খামারে ‘টর্চার সেল’-এর পাওয়া যায়। সেখানে নির্যাতনে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প।
মারধরের শিকার হক মিয়া বলেন, ‘চুল কাটার পর পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে হিজবুল। টাকা না দিলে হিজবুল ও তার অনুসারীরা আমাকেসহ আমার বড় ভাই লাক মিয়াকেও মারধর করে দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে মামুন ভাইয়ের কথায় দোকান খুললে আবার আক্রমণ করে মামুন ভাইকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়।’
ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক মামুন সরকার বলেন, ‘চুল কেটে নাপিতকে টাকা না দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি করা ছাত্রদলের আদর্শের পরিপন্থি। এর প্রতিবাদ করায় জিয়েস আমাকে মারধর করে আহত করেছে। তাই মামলা করেছি।’
এ ঘটনার পর সোমবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জিয়েসকে তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, জিয়েসকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার দুই সহযোগীকে সোমবারই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিয়েসের সঙ্গে আরও কেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন কি-না, তার তদন্ত চলছে।