ছাত্র সংসদ গঠনের দাবিতে আমরণ অনশন করা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন। উপাচার্য নিজ হাতে তাদের ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাত সোয়া ১০টার দিকে অনশন ভাঙেন তারা। এ সময় প্রশাসনিক ভবনের উত্তর গেটে স্থলে আসেন উপাচার্য ড. শওকাত আলী। তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, আমরা ছাত্রদের নিয়ে সম্ভাব্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছি। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারব। ছাত্র সংসদ নিয়ে সংবিধি পরীক্ষা ও চূড়ান্তকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বৈঠক ডেকেছে ইউজিসি। তারা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নিয়ে কার্যক্রম শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ডক্টর হারুন অর রশিদের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘৩০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। ভোট গ্রহণ ২৬ হতে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে যে কোনো একদিন এবং সরকার কর্তৃক গেজেট প্রকাশ মাত্রই এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে এবং বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা করা হবে।’
অনশন ভাঙার পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি আংশিক পূরণ হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছে। এজন্য কিছুটা সময় দেওয়া হলেও দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের খসড়া গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদনের জন্য পরীক্ষা ও চূড়ান্ত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গঠিত কমিটির সভা আগামী বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার ইউজিসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (লিগ্যাল) শেখ আনিসুজ্জামানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান জানান।
গত রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসেন। তাদের অভিযোগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের বিষয়টি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি নেওয়া হয়েছে। অথচ ছাত্র সংসদ আইন সংশোধনে কখনোই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানান। তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়েছিলেন উপাচার্য শওকাত আলী। কিন্তু সেই আশ্বাস প্রত্যাখান করেন আন্দোলনকারীরা। তবে দুজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের আশ্বাসে সোমবার রাতেই অনশন ভাঙেন।
সোমবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হকের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র সংসদের বিষয়টি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই। তবে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রসংসদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ একটি ব্যাংক হিসাব খুলে জমা রাখা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সেটা শুধু ছাত্রসংসদের জন্যই খরচ করা যায়।
ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য উপাচার্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্যরা চারটি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি) থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও তিনটি আবাসিক হলের জন্য আলাদা করে ছাত্র সংসদের জন্য একটি গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেছেন। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে।