স্বাধীন বাংলাদেশের ৭ ডাকসুর ৬টিতেই প্যানেল দিয়েছে ছাত্রশিবির

- আপডেট সময় ০৮:১০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৪০ বার পড়া হয়েছে
চারিদিকে বইছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের হাওয়া। ছয় বছর পর আসন্ন এ নির্বাচনে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে প্যানেলগুলো। এরই মধ্যে আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল। গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক সাদিক কায়েম আর ঢাবি সভাপতি এসএম ফরহাদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছেন তারা।
ডাকসুর ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে তাহের-কাদের পরিষদ, ১৯৮০ সালে তাহের-কাদের পরিষদ, ১৯৮২ সালে এনাম-কাদের পরিষদ, ১৯৮৯ সালে শামসু-আমিন-মুজিব পরিষদ এবং ১৯৯০ সালে আমিন-মুজিব-হেলাল পরিষদের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয় শিবির। তবে ২০১৯ সালে ঘনঘোর ফ্যাসিবাদী বাস্ততায় প্যানেল দিতে পারেনি সংগঠনটি। এবছর ষষ্ঠবারের মতো সাদিক-ফরহাদ-মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটে’র প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে তারা।
এমনকি ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ছাত্রশিবির। ১৯৮২ সালের ২১ শে জানুয়ারি, ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এনাম-কাদের পরিষদের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল। এই মিছিলে ছাত্র ইউনিয়ন এবং জাসদ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালিয়েছিলো। শক্তিশালী বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন ৩৫ শিবির কর্মী। চিরতরে পা হারিয়েছিলেন সাইমুমের শিল্পী তোফাজ্জল হোসাইন খান, শিল্পী আকরাম মুজাহিদ সহ বেশ কয়েকজন শিবির কর্মী। ১৯৯০ সালে শিবিরের ভিপি প্রার্থী আমিনুল ইসলামের উপর মধুর ক্যান্টিনে ন্যাক্কারজনক হাম’লার ঘটনা ঘটে।
পত্রিকার পাতায় শিবিরের ডাকসু নির্বাচনের খবর:
প্রকাশ্যে শিবিরের ব্যানারে অন্তত তিনটি ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করে অংশ নেয়ার খবর দৈনিক ইত্তেফাকে পাওয়া গেছে। ১৯৭৯ সালের ২৪ জুলাই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনের ইত্তেফাকের প্রথম পাতার চতুর্থ কলামে শিরোনাম করা হয় “আজ ডাকসু নির্বাচন”। এই খবরের বাকী অংশ ছাপা হয় ৭ম পাতার ৬ষ্ঠ কলামে লেখা হয়েছে, “বাংলাদেশ ছাত্র শিবির থেকে ভিপি পদপ্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ আবু তাহের এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন আব্দুল কাদির বাচ্চু।”
১৯৮০ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি ডাকসু নির্বাচন। ওইদিনের ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রথম কলামে “আজ ডাকসু নির্বাচন” শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। এই খবরের বাকী অংশ ছাপা হয় ৮ম পাতার প্রথম কলামে। সেখানে উল্লেখ করা হয় প্রচারণার অংশ হিসেবে নির্বাচনের আগের দিন ছাত্র শিবির একটি সাইকেল র্যালীর আয়োজন করে।
এরপর ১৯৯০ সালের ২৭ মে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক “ডাকসু নির্বাচনে ৩০টি প্যানেল” শিরোনামে প্রথম পাতার ৬ষ্ঠ কলামে মনোনয়ন পত্র জমা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই খবরের পরের অংশ ছাপা হয় শেষ পৃষ্ঠার ১নং কলামে যেখানে বলা হয়েছে, “ছাত্র শিবিবের পক্ষে ডাকসুর ভিপি পদে মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, জি.এস. পদে মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান ও এ.জি.এস পদে শফিকুল আবন হেলাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়াছে।”
এছাড়া ১৯৮০ সালের ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে শিবিরের তৈরি একটি প্রচারণাপত্র সংগ্রহ করে দেখা গেছে তাতে ‘তাহের-কাদের পরিষদ’কে ’বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির’ এর প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিবিসি বাংলা, দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডের মিথ্যাচার:
বিবিসি বাংলা ও দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডসহ দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে প্যানেল ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অন্তত ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৯, ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র শিবির প্রকাশ্যে প্রার্থী কিংবা প্যানেল ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে।এমনকি ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্রচারণায় গ্রে’নে’ড হা’ম’লা চালিয়ে একাধিক শিবির নেতাকর্মীকে হ’তাহ’ত করার ঘটনাও ঘটেছিল।

এছাড়া The Dissent এর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ”ডাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে শিবিরের প্রার্থী” ঘোষণা করার যে তথ্যটি বিবিসি বাংলা দিয়েছে তা অসত্য। প্রকৃতপক্ষে এর আগে একাধিকবার প্রকাশ্যে নিজেদের সংগঠনের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ছাত্রশিবির; যা বিভিন্ন সংবাদসাধ্যমে খবর আকারেও প্রকাশিত হয়েছে।