ঢাকা ১২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে

ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রসহ দুইজনকে পিটিয়ে জখম করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:০১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে
ইমরান ফকির (২৩) ও জাহিদুল ইসলামকে (২৫)

ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে আমতলী সরকারী কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান ফকির (২৩) ও তার সহযোগী জাহিদুল ইসলামকে (২৫) ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ছাত্র ইমরান ফকির এমন অভিযোগ করেছেন। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই দিন রাতেই তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে।

জানা গেছে, আমতলী সরকারী কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান ফকির বুধবার দুপুরে ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিতে অগ্রণী ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ায়। ওই লাইনে ইমরানকে পিছনে ফেলে কলেজ শাখার ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি সজল মৃধা ও সহ-দপ্তর সম্পাদক ফরহাদ কাউন্টারে টাকা জমা দেয়। এ সময় ছাত্র ইমরান ফকির এর প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্দ হয় ছাত্রদল নেতারা। পরে ইমরান ফকির কলেজে ফরম পূরণ করতে গেলে ছাত্রদল নেতা স্বজল ও ফরহাদের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন ছাত্রদল নেতা ওই ছাত্রকে মারধর করে। ওই সময় তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে। এ ঘটনা মীমাংসা করতে ওইদিন সন্ধ্যায় ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ইমরান ফকিরকে উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব ইমরান খাঁন তার বাসায় ডাকে। ইমরান ফকির ও তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিবের বাসার সামনে পৌঁছানোর আগেই ২০-২৫ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ঘিরে ফেলে এবং লোহার রড দিয়ে তাদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে তাদের মাথা, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। ওইদিন রাতেই তাদের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়র

আহত ইমরান ফকির বলেন, আমি আমতলী সরকারী কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। বুধবার দুপুরের দিকে ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিতে অগ্রণী ব্যাংকের লাইনে দাড়াই। ওই সময় কলেজ শাখার ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সজল মৃধা ও সহ-দপ্তর সম্পাদক ফরহাদ জোরপূর্বক আমাকে পিছনে ফেলে টাকা জমা দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে কলেজের শিক্ষকের সামনে আমাকে সজল, আব্দুল্লাহ ও ফরহাদ, রব্বানীসহ ১২-১৫ জন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা মারধর করে। পরে ওইদিন বিকেলে আমাকে উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব মোঃ ইমরান খাঁন মীমাংসার কথা বলে ডেকে নেয়। তার বাসার সামনে পৌঁছার আগেই তার নেতৃত্বে ছাত্রদলের ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী আমাকে ও আমার সাথে থাকা জাহিদুল ইসলামকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।

আমতলী সরকারী কলেজ শাখার ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি সজল মৃধা ছাত্র ইমরান ফকিরকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান ফকির ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার সময় আমাকে ও ফরহাদকে দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। ওই ঘটনার জের ধরে কলেজে এসে ইমরান ফকির ও তার সহযোগী রনি গাজী, ওমর ফারুক ও সমন্বয়ক আবিদ ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা করেছে। এতে কলেজ ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক রব্বানী আহত হয়েছে। রব্বানী বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আমতলী উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব ইমরান খান বলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শহীদ মল্লিকের অনুরোধে মিমাংশা করতে ইমরান ফকিরকে ডেকেছিলাম কিন্তু পথিমধ্যে তাদের কে বা কাহারা মারধর করেছে তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান ফকির উল্টো ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি সজল মৃধাসহ কয়েকজনকে মারধর করছে।

বরগুনা জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রনি বলেন, বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, দুইজন ছাত্রকে মারধরের কথা শুনেছি কিন্তু এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে

ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রসহ দুইজনকে পিটিয়ে জখম করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

আপডেট সময় ০৬:০১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
ইমরান ফকির (২৩) ও জাহিদুল ইসলামকে (২৫)

ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে আমতলী সরকারী কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান ফকির (২৩) ও তার সহযোগী জাহিদুল ইসলামকে (২৫) ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ছাত্র ইমরান ফকির এমন অভিযোগ করেছেন। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই দিন রাতেই তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে।

জানা গেছে, আমতলী সরকারী কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান ফকির বুধবার দুপুরে ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিতে অগ্রণী ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ায়। ওই লাইনে ইমরানকে পিছনে ফেলে কলেজ শাখার ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি সজল মৃধা ও সহ-দপ্তর সম্পাদক ফরহাদ কাউন্টারে টাকা জমা দেয়। এ সময় ছাত্র ইমরান ফকির এর প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্দ হয় ছাত্রদল নেতারা। পরে ইমরান ফকির কলেজে ফরম পূরণ করতে গেলে ছাত্রদল নেতা স্বজল ও ফরহাদের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন ছাত্রদল নেতা ওই ছাত্রকে মারধর করে। ওই সময় তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে। এ ঘটনা মীমাংসা করতে ওইদিন সন্ধ্যায় ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ইমরান ফকিরকে উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব ইমরান খাঁন তার বাসায় ডাকে। ইমরান ফকির ও তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিবের বাসার সামনে পৌঁছানোর আগেই ২০-২৫ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ঘিরে ফেলে এবং লোহার রড দিয়ে তাদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে তাদের মাথা, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। ওইদিন রাতেই তাদের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়র

আহত ইমরান ফকির বলেন, আমি আমতলী সরকারী কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। বুধবার দুপুরের দিকে ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিতে অগ্রণী ব্যাংকের লাইনে দাড়াই। ওই সময় কলেজ শাখার ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সজল মৃধা ও সহ-দপ্তর সম্পাদক ফরহাদ জোরপূর্বক আমাকে পিছনে ফেলে টাকা জমা দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে কলেজের শিক্ষকের সামনে আমাকে সজল, আব্দুল্লাহ ও ফরহাদ, রব্বানীসহ ১২-১৫ জন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা মারধর করে। পরে ওইদিন বিকেলে আমাকে উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব মোঃ ইমরান খাঁন মীমাংসার কথা বলে ডেকে নেয়। তার বাসার সামনে পৌঁছার আগেই তার নেতৃত্বে ছাত্রদলের ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী আমাকে ও আমার সাথে থাকা জাহিদুল ইসলামকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।

আমতলী সরকারী কলেজ শাখার ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি সজল মৃধা ছাত্র ইমরান ফকিরকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান ফকির ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার সময় আমাকে ও ফরহাদকে দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। ওই ঘটনার জের ধরে কলেজে এসে ইমরান ফকির ও তার সহযোগী রনি গাজী, ওমর ফারুক ও সমন্বয়ক আবিদ ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা করেছে। এতে কলেজ ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক রব্বানী আহত হয়েছে। রব্বানী বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আমতলী উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব ইমরান খান বলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শহীদ মল্লিকের অনুরোধে মিমাংশা করতে ইমরান ফকিরকে ডেকেছিলাম কিন্তু পথিমধ্যে তাদের কে বা কাহারা মারধর করেছে তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান ফকির উল্টো ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি সজল মৃধাসহ কয়েকজনকে মারধর করছে।

বরগুনা জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রনি বলেন, বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, দুইজন ছাত্রকে মারধরের কথা শুনেছি কিন্তু এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।