চাঁদা না দেওয়ায়’ ইটভাটার প্রবেশপথে গর্ত করলেন কৃষকদল নেতা

- আপডেট সময় ০৯:৩৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ২২ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে তাদের ইটভাটার প্রবেশপথ ভেকু দিয়ে কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে মহানগর কৃষকদলের এক নেতার বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুরের পরশমণি ব্রিকস (পিএমবি) ইটভাটায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার সদ্য প্রয়াত বিশ্বজিৎ ঘোষ ছিলেন ভাটাটির মালিক। গত ৫ আগস্টের পরে ওই কৃষকদল নেতা ফরিদ শেখ এবং বিএনপির কিছু নেতা মিলে বিশ্বজিৎ ঘোষসহ তার চার ভাইয়ের নামে মামলা দেওয়া হয়। এরপর বিশ্বজিৎ ঘোষকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। জেলখানায় থাকাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি মারা যান।
পরিবারের দাবি, বিশ্বজিৎ ঘোষ মারা যাওয়ার পর থেকে ইটভাটাটি পরিচালনা করছেন তার মেজো ভাই চঞ্চল ঘোষ। তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষের আত্মীয় ‘তকমা’ লাগিয়ে ব্যাপকভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। যদিও তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ভাটাটির চিমনি গুঁড়িয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, মন্ত্রণালয় থেকে ভাটাটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা থাকায় এটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে আসছেন ফরিদপুর পোরসভার বৈঠাখালী এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর কৃষকদলের সহ-সভাপতি ফরিদ শেখ। টাকা না দেওয়ায় এর আগে প্রবেশপথ আটকে দেওয়া হয়। বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
চঞ্চল ঘোষের বোন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছন্দা ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন যুবদল নেতা ফরিদ শেখ। টাকা না দেওয়ায় ভাটার দুজন ম্যানেজারকে মারধর করে ইট বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রশাসন দিয়ে চিমনি ভেঙে দিয়েছে। এমনকী আমাদের প্রবেশও করতে দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার বিকেলে ফরিদ শেখের নেতৃত্বে স্থানীয় শাহ মো. লিটন (৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি), রাজিব সরদার (যুবদল নেতা), শাহিনসহ কয়েকজন ভেকু দিয়ে ভাটার প্রবেশপথ কেটে বড় গর্ত করেছে। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ আসে। কিন্তু তার ১০ মিনিট আগেই ওরা ভেকু নিয়ে চলে যায়।’
আইনজীবী ছন্দা ঘোষ বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা পাবে না অথচ প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। দলবল নিয়ে বাড়ির পাশে মহড়া দিয়ে বেড়ায়। বাড়ির ভেতরে ঢুকে পিস্তল দিয়ে ফায়ারও করেছে। প্রতিনিয়ত আমাদের চাপের মুখে রাখছে। তারা নাকি আমাদের থাকতে দেবে না, জায়গা-জমি দখল করে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ৯ বছরের ছেলে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেছে, তুলে নিয়ে গেলে ৫০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হবে। এ ভয়ে বাচ্চাটারে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। এমনকী ভয়ে আমাদের বাড়ি জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর কৃষকদল নেতা ফরিদ শেখ দাবি করেন, ‘এখানে চাঁদাবাজির বিষয় না, তাদের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে। প্রশাসন, ভাটা মালিক সমিতিসহ এলাকার গণ্যমান্য সবাই বিষয়টি জানেন। ২০২২ সাল থেকে ইটভাটায় মাটি দেওয়ার ৯ লাখ টাকা পাই আমি ৷ আওয়ামী লীগের আমলে এই টাকা চাইতে গেলে হত্যার হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। আজও টাকা না দেওয়ায় পাওনাদাররা মিলে রাস্তা কেটে দিয়েছি।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’