ঢাকা ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর পুনরুত্থান

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:১৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম ও সংগঠিত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী উল্লেখযোগ্যভাবে তার প্রভাব বিস্তার করেছে। হাসিনা সরকারের আমলে দলটি কঠোর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে জামায়াতের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রমতে, জামায়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের সদস্যদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের জায়গা করে নিয়েছে।

জামায়াত তার দীর্ঘদিনের কৌশলগত রাজনৈতিক মিত্র বিএনপিকে ছেড়ে নতুনভাবে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে। এনসিপি মূলত শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের নিয়েই গঠিত হয়েছে। এই দুটি দল এখন বিএনপি থেকে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার অ্যাজেন্ডাকে নিজেদের অনুকূলে নিতে চাইছে। গত মে মাসে জামায়াত ও এনসিপি রাস্তায় নেমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। পরে ইউনূস সরকার তাদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে, জামায়াত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ দলটির অনেক শীর্ষনেতাকেই সে সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, অনেকেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। এছাড়াও শত শত জামায়াত নেতা-কর্মীকে হয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল অথবা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয় এবং গত বছর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চার দিন আগে অর্থাৎ ১ আগস্ট দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। হাসিনার শাসনামলে কঠার দমন-পীড়নের ফলে, অনেক জামায়াতকর্মী নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগে প্রবেশ করেন। কেউ কেউ সরকারি চাকরিতেও যোগ দেন।

জামায়াত একটি ইসলামি কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয়, সামাজিক, খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। এটি তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তবে সমালোচকদের মতে, নারীদের ও সংখ্যালঘুদের সমঅধিকারে দলটি আস্থাশীল নয়। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত নারী ও সংখ্যালঘুবান্ধব কিছু বক্তব্য দিলেও সমালোচকরা একে কৌশলগত রূপান্তর বলে মনে করেন, মৌলিক আদর্শগত পরিবর্তন নয়।

দলটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ীই নীতি প্রণয়ন করা হবে।’ জামায়াতের ওয়েবসাইট ও প্রশিক্ষণ পাঠ্যসূচিতে এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর লেখা বই স্থান পেয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় জামায়াত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একজন প্রভাবশালী ইসলামপন্থী চিন্তাবিদ মওদুদীকে অনেকেই মৌলবাদ প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করেন। তবে কিছু গবেষক বলেন, বৃটিশ ঔপনিবেশিক দমননীতি প্রেক্ষাপটে তার চিন্তাভাবনা বোঝা উচিত

দলটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ীই নীতি প্রণয়ন করা হবে।’ দলটির প্রশিক্ষণ সিলেবাস ও ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদুদীর বই স্থান পেয়েছে। মওদুদীকে অনেকে চরমপন্থার প্রচারক মনে করেন, যদিও কিছু গবেষক বলেন বৃটিশ ঔপনিবেশিক দমননীতি প্রেক্ষাপটে তার চিন্তাভাবনা বোঝা উচিত।

বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে, জামায়াত বর্তমানে অনলাইন কর্মীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে এবং বিএনপিবিরোধী বক্তব্যকে মূলধারায় আনতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা পরিচয় গোপন করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সম্প্রতি জামায়াতসম্পৃক্ত সংগঠনগুলো সেখানে জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। তাতে সাবেক এক মার্কিন কূটনীতিকও অংশ নেন। অনেকেই জানতেন না এটি জামায়াত আয়োজন করেছে।

এনসিপির সাথে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির জোট বাঁধায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের উপস্থিতি কমে গেছে। জামায়াত দীর্ঘদিন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার দায়ে কলঙ্কিত হয়ে এসেছে। তবে আওয়ামী লীগের ‘৭১-এর চেতনাকে’ অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ করার কারণে এ বিষয়টি সাধারণ ভোটারদের কাছে আগের মতো প্রভাব বিস্তার করছে না।

সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যারা ৭১-এর পক্ষে বা বিপক্ষে রাজনীতি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন তারা দেশকে আবার একটি পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোর দিকে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।’

জামায়াত কেবল এনসিপি নয়, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এমনকি হেফাজতে ইসলামসহ অন্য ইসলামি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও বৃহত্তর জোট গড়ার চেষ্টা করছে। এতে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি ডানদিকে সরে যাবে। ফলে বিএনপি, যারা ঐতিহ্যগতভাবে মধ্য-ডানপন্থী দল, এখন অপেক্ষাকৃতভাবে মধ্যপন্থার দিকে সরে এসেছে।

তবে ভোটে এককভাবে জামায়াত বড় শক্তি নয়। তাই এনসিপির সাথে থেকে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। তারা নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনেরও দাবি তুলছে- বর্তমান ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতি বাদ দিয়ে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করছে। বিএনপি এই পরিবর্তনের পক্ষে নয়, যা ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করবে।

জামাতের পুনরুত্থান কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক ইসলামি রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্ক বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াতসহ রক্ষণশীল শক্তিগুলোর ওপর আর্থিক ও কৌশলগত প্রভাব বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব আরো হ্রাস পেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর পুনরুত্থান

আপডেট সময় ১০:১৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম ও সংগঠিত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী উল্লেখযোগ্যভাবে তার প্রভাব বিস্তার করেছে। হাসিনা সরকারের আমলে দলটি কঠোর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে জামায়াতের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রমতে, জামায়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের সদস্যদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের জায়গা করে নিয়েছে।

জামায়াত তার দীর্ঘদিনের কৌশলগত রাজনৈতিক মিত্র বিএনপিকে ছেড়ে নতুনভাবে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে। এনসিপি মূলত শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের নিয়েই গঠিত হয়েছে। এই দুটি দল এখন বিএনপি থেকে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার অ্যাজেন্ডাকে নিজেদের অনুকূলে নিতে চাইছে। গত মে মাসে জামায়াত ও এনসিপি রাস্তায় নেমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। পরে ইউনূস সরকার তাদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে, জামায়াত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ দলটির অনেক শীর্ষনেতাকেই সে সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, অনেকেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। এছাড়াও শত শত জামায়াত নেতা-কর্মীকে হয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল অথবা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয় এবং গত বছর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চার দিন আগে অর্থাৎ ১ আগস্ট দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। হাসিনার শাসনামলে কঠার দমন-পীড়নের ফলে, অনেক জামায়াতকর্মী নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগে প্রবেশ করেন। কেউ কেউ সরকারি চাকরিতেও যোগ দেন।

জামায়াত একটি ইসলামি কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয়, সামাজিক, খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। এটি তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তবে সমালোচকদের মতে, নারীদের ও সংখ্যালঘুদের সমঅধিকারে দলটি আস্থাশীল নয়। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত নারী ও সংখ্যালঘুবান্ধব কিছু বক্তব্য দিলেও সমালোচকরা একে কৌশলগত রূপান্তর বলে মনে করেন, মৌলিক আদর্শগত পরিবর্তন নয়।

দলটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ীই নীতি প্রণয়ন করা হবে।’ জামায়াতের ওয়েবসাইট ও প্রশিক্ষণ পাঠ্যসূচিতে এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর লেখা বই স্থান পেয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় জামায়াত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একজন প্রভাবশালী ইসলামপন্থী চিন্তাবিদ মওদুদীকে অনেকেই মৌলবাদ প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করেন। তবে কিছু গবেষক বলেন, বৃটিশ ঔপনিবেশিক দমননীতি প্রেক্ষাপটে তার চিন্তাভাবনা বোঝা উচিত

দলটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ীই নীতি প্রণয়ন করা হবে।’ দলটির প্রশিক্ষণ সিলেবাস ও ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদুদীর বই স্থান পেয়েছে। মওদুদীকে অনেকে চরমপন্থার প্রচারক মনে করেন, যদিও কিছু গবেষক বলেন বৃটিশ ঔপনিবেশিক দমননীতি প্রেক্ষাপটে তার চিন্তাভাবনা বোঝা উচিত।

বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে, জামায়াত বর্তমানে অনলাইন কর্মীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে এবং বিএনপিবিরোধী বক্তব্যকে মূলধারায় আনতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা পরিচয় গোপন করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সম্প্রতি জামায়াতসম্পৃক্ত সংগঠনগুলো সেখানে জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। তাতে সাবেক এক মার্কিন কূটনীতিকও অংশ নেন। অনেকেই জানতেন না এটি জামায়াত আয়োজন করেছে।

এনসিপির সাথে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির জোট বাঁধায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের উপস্থিতি কমে গেছে। জামায়াত দীর্ঘদিন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার দায়ে কলঙ্কিত হয়ে এসেছে। তবে আওয়ামী লীগের ‘৭১-এর চেতনাকে’ অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ করার কারণে এ বিষয়টি সাধারণ ভোটারদের কাছে আগের মতো প্রভাব বিস্তার করছে না।

সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যারা ৭১-এর পক্ষে বা বিপক্ষে রাজনীতি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন তারা দেশকে আবার একটি পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোর দিকে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।’

জামায়াত কেবল এনসিপি নয়, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এমনকি হেফাজতে ইসলামসহ অন্য ইসলামি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও বৃহত্তর জোট গড়ার চেষ্টা করছে। এতে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি ডানদিকে সরে যাবে। ফলে বিএনপি, যারা ঐতিহ্যগতভাবে মধ্য-ডানপন্থী দল, এখন অপেক্ষাকৃতভাবে মধ্যপন্থার দিকে সরে এসেছে।

তবে ভোটে এককভাবে জামায়াত বড় শক্তি নয়। তাই এনসিপির সাথে থেকে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। তারা নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনেরও দাবি তুলছে- বর্তমান ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতি বাদ দিয়ে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করছে। বিএনপি এই পরিবর্তনের পক্ষে নয়, যা ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করবে।

জামাতের পুনরুত্থান কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক ইসলামি রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্ক বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াতসহ রক্ষণশীল শক্তিগুলোর ওপর আর্থিক ও কৌশলগত প্রভাব বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব আরো হ্রাস পেতে পারে।