ঢাকা ১০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনোই হারেন নি খালেদা জিয়া

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফেনী, বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, খুলনা যেখানেই নির্বাচন করেছেন, সেখানেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়াই একমাত্র উদাহরণ, যিনি ৫টি সংসদ নির্বাচনে ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতে বিজয়ী হয়েছেন। ভোটে হারের গল্প খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে নেই। এমনকি যেসব নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি, সেসব নির্বাচনেও তিনি যতটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তার সব কটিতে জয়ী হন।

১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮ এই পাঁচ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পাঁচটি আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। একই সঙ্গে বিশ্বের ইতিহাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবে সেই নির্বাচনেও খালেদা জিয়াকে হারাতে পারেননি কেউ। পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে বিজয়ী হন তিনি। আসনগুলো হলো বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১।

পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনেও খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-২ এই পাঁচ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকারে গিয়েছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে ফেনী-১ ও ২, বগুড়া-৭, সিরাজগঞ্জ-২ ও রাজশাহী-২ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন খালেদা জিয়া। তখন তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু একতরফা সেই নির্বাচন বিতর্কের জন্ম দেয়। ওই সংসদেই অবশ্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়। শপথ নেওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এরপর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।

২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন একজনের জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নির্ধারণ করায় খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনটি আসনেই বিজয়ী হন তিনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়া ভীষণ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আপসহীনতার কারণে দল-মতনির্বিশেষে সবাই তাঁকে পছন্দ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে; কিন্তু সে সময় টিভিতে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, যা সব হিসাব–নিকাশ উল্টে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে তিনি একাধিক আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে প্রতিবারই সব কটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, খালেদা জিয়ার কখনো অসংযত হয়ে কথা বলেননি। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আচরণ ও কথায় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতেন তিনি।

সংবাদ ২৪৭/ এজে

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনোই হারেন নি খালেদা জিয়া

আপডেট সময় ০৪:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফেনী, বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, খুলনা যেখানেই নির্বাচন করেছেন, সেখানেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়াই একমাত্র উদাহরণ, যিনি ৫টি সংসদ নির্বাচনে ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতে বিজয়ী হয়েছেন। ভোটে হারের গল্প খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে নেই। এমনকি যেসব নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি, সেসব নির্বাচনেও তিনি যতটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তার সব কটিতে জয়ী হন।

১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮ এই পাঁচ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পাঁচটি আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। একই সঙ্গে বিশ্বের ইতিহাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবে সেই নির্বাচনেও খালেদা জিয়াকে হারাতে পারেননি কেউ। পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে বিজয়ী হন তিনি। আসনগুলো হলো বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১।

পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনেও খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-২ এই পাঁচ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকারে গিয়েছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে ফেনী-১ ও ২, বগুড়া-৭, সিরাজগঞ্জ-২ ও রাজশাহী-২ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন খালেদা জিয়া। তখন তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু একতরফা সেই নির্বাচন বিতর্কের জন্ম দেয়। ওই সংসদেই অবশ্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়। শপথ নেওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এরপর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।

২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন একজনের জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নির্ধারণ করায় খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনটি আসনেই বিজয়ী হন তিনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়া ভীষণ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আপসহীনতার কারণে দল-মতনির্বিশেষে সবাই তাঁকে পছন্দ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে; কিন্তু সে সময় টিভিতে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, যা সব হিসাব–নিকাশ উল্টে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে তিনি একাধিক আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে প্রতিবারই সব কটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, খালেদা জিয়ার কখনো অসংযত হয়ে কথা বলেননি। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আচরণ ও কথায় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতেন তিনি।

সংবাদ ২৪৭/ এজে