প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা তথ্য এবং মানুষের পাঠানো গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগিয়ে ইসরাইল অভিযানটি চালিয়েছে
একটি ফোন নম্বর পেয়েই হামাস নেতাকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী!
- আপডেট সময় ০৬:১৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১৯৬ বার পড়া হয়েছে
নিরাপত্তাগত সামান্য একটু ফাঁকে কাজে লাগিয়ে বৈরুতে হামাসের উপ-প্রধান সালেহ আল-অরোরিকে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করেছে বলে লেবাননের এক সাবেক জেনারেল মন্তব্য করেছেন।
সাবেক লেবানন সেনাবাহিনীর জেনারেল ইলিয়াস ফারহাত বলেন, বৈরুতে ওই হামলা চালাতে ইসরাইল সম্ভবত নিরাপত্তাগত ত্রুটিকে কাজে লাগিয়েছে।
ফরহাত আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা তথ্য এবং মানুষের পাঠানো গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগিয়ে ইসরাইল অভিযানটি চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি সম্ভবত হামাস সদস্যদের বৈঠক যে অ্যাপার্টমেন্টে হবে, তার তথ্য দিয়েছিল। একইসাথে বৈঠকের তারিখ ও সময়ও জানিয়েছিল। আর ওই বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিল, তাদের কোনো একজনের টেলিফোন নম্বরও ইসরাইলের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
ফরহাত বলেন, ইসরাইলি ড্রোন সম্ভবত ওই টেলিফোন কিংবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইজকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
লেবাননের ওই জেনারেল বলেন, তিনি মনে করছেন যে আল-আরোরি এমন হামলার প্রযুক্তিগত ঝুঁকি সম্ভবত জানতেন না। তিনি যদি তা বুঝতে পারতেন, তবে সম্ভবত বৈঠকটি অন্য কোথায়ও করতেন। তেমন কিছুর আশঙ্কা থাকলে তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডেও বৈঠকটি করতে পারতেন। কিংবা উপস্থিতদের সব ধরনের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বহন করা নিষিদ্ধ করতে পারতেন।
লেবানেন ইসরাইলি আগ্রাসন
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসন লেবানন পর্যন্ত পৌঁছেছে। দেশটির রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় হামাসের উপ-প্রধান সালেহ আল আরোরি নিহত হয়েছেন।
এ হামলায় হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের দুজন কমান্ডারও নিহত হয়েছে।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ খবর জানিয়েছেন।
উর্ধ্বতন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইলি হামলায় সালেহ আল আরোরি ছাড়া তার দেহরক্ষীও নিহত হয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর দাহিয়ে তাদের কার্যালয়ে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে উপ-প্রধান সালেহ আল-আরোরিসহ ওই তিনজন রয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত হামাসের যত কমান্ডার নিহত হয়েছেন আরোরি এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী। এছাড়া যুদ্ধ শুরুর পর লেবাননে ইসরাইলের এটিই প্রথম হামলার ঘটনা।
ইসরাইলের সেনাবাহিনী এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, কোনো পরিস্থিতির জন্য তার দেশের বাহিনীগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে হামাস বলেছে, আরোরির হত্যাকাণ্ড তাদের পরাজিত করতে পারবে না।
হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ে এক বিবৃতিতে এই হত্যার নিন্দা জানান এবং ইসরাইলের হামলাকে কাপুরুষোচিত বর্ণনা করে বলেছেন, ইসরাইল লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে ও চলমান সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এছাড়া এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান। লেবানন ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করার ঘোষণা দিয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো ইসরাইলের প্রতি বিশেষ করে লেবাননে যেকোনো উত্তেজনাময় পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
হামলার পর লেবাননের শিয়াপন্থী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, বৈরুত শহরের কেন্দ্রস্থলে সালেহ আল-আরোরি ও তার সঙ্গীদের হত্যার অপরাধকে লেবানন এবং এর জনগণ নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরোধের বিরুদ্ধে একটি বিপজ্জনক আগ্রাসন বলে মনে করে। এই অপরাধের জন্য ‘প্রতিক্রিয়া ও সাজার’ মুখোমুখি হতে হবে বলে ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল-আরোরির বয়স ৫৭ বছর। তিনি হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি হামাসে যোগ দিয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি পশ্চিম তীরে গোষ্ঠীটির সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তাও করেন।
সূত্র : আল জাজিরা ও এএফপি