ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংসদে বিরোধী দল হবে কারা? জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্ররা?

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ০২:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২১৬ বার পড়া হয়েছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি জয়ী দেখানো হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। অন্যদিকে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে দেখানো হয়েছে মাত্র ১১টি আসন। জাপাকে পেছনে ফেলে স্বতন্ত্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় নতুন সংসদে বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল আলোচনা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। আর বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) জয় দেখানো হয়েছে মাত্র ১১টি আসনে। কিন্তু তাদের চেয়ে পাঁচগুণেরও বেশি, ৬২টি আসনে বিজয়ী দেখানো হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। যদিও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। বাংলাদেশের ইতিহাসের আগে কোনো সংসদে এত বেশিসংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন না।

এই পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, বিরোধীদলীয় নেতাই বা কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট গঠন করে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারেন কি না, সেই বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কার্যপ্রণালিবিধি দ্বারা বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তার কোথাও বিরোধী দল সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। অর্থাৎ ৩০০টি আসনের মধ্যে ন্যূনতম কতগুলো আসন পেলে কোনো দল বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তার যোগ্যতা কী হবে—এসব বিষয়েও সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।

এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, কতজন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে বিরোধী দল গঠন করতে হবে, সংবিধানে এ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই।

শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানে এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। পার্লামেন্টের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। যখন আমাদের সংবিধান বা ভারতের সংবিধান লেখা হয়েছিল, তখন এই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে এটা কেউ চিন্তাই করেনি। অতএব সরাসরি কিছু বলা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৫৩টি অনুচ্ছেদ আছে সংবিধানে, ১৫৩টি অনুচ্ছেদে কিছু বলা নেই। অন্য কোনো আইনেও আমার জানামতে কিছু বলা নেই। তাই হুট করে এখানে কী হবে, তা বলা মুশকিল। পড়াশোনা করতে হবে, অনেককিছু ঘাঁটতে হবে। যেটা বললাম, কোথাও কিছু লেখা নেই—এবং আইনে সবকিছু লেখা থাকে না। যখন থাকে না, তখন আশেপাশের অনেককিছু নিয়ে পড়ে, বুঝে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে এটার উত্তর দাঁড় করাতে হবে।’

এদিকে সোমবার (৮ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘ইতিমধ্যে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন। ১৪ দলেরও দুজনের মতো জিতেছেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তো দূরে নয়। যিনি লিডার অব দ্য হাউজ হবেন. তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নতুন লিডার অব দ্য হাউজ, তিনি পরিস্থিতি বিবেচনায় করণীয় অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনগণের প্রতিনিধি। তারা নির্বাচিত। তারা নির্বাচিত সদস্য হিসেবেই সংসদে বসবেন এবং তাদের ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া অন্য কিছু এই মুহূর্তে ভাববার অবকাশ নেই।’

তবে নির্বাচনে জয়ের পরদিন সোমবার বিকেলে গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে একজন বিদেশি সাংবাদিক বিরোধী দল নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’

অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন কি না, তা নির্ভর করছে জোট গঠনের ওপর।

সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বতন্ত্র যারা জয়লাভ করেছেন, তাদের অবস্থান কী, সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত পরিষ্কার না হবে—যেমন তারা নিজেরা জোট করবেন নাকি আলাদা থাকবেন, সেটি যতক্ষণ পর্যন্ত না জানা যাবে—ততক্ষণ পর্যন্ত বিরোধী দল কাদের বলা হবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

সংসদে বিরোধী দল হবে কারা? জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্ররা?

আপডেট সময় ০২:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি জয়ী দেখানো হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। অন্যদিকে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে দেখানো হয়েছে মাত্র ১১টি আসন। জাপাকে পেছনে ফেলে স্বতন্ত্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় নতুন সংসদে বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল আলোচনা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। আর বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) জয় দেখানো হয়েছে মাত্র ১১টি আসনে। কিন্তু তাদের চেয়ে পাঁচগুণেরও বেশি, ৬২টি আসনে বিজয়ী দেখানো হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। যদিও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। বাংলাদেশের ইতিহাসের আগে কোনো সংসদে এত বেশিসংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন না।

এই পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, বিরোধীদলীয় নেতাই বা কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট গঠন করে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারেন কি না, সেই বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কার্যপ্রণালিবিধি দ্বারা বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তার কোথাও বিরোধী দল সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। অর্থাৎ ৩০০টি আসনের মধ্যে ন্যূনতম কতগুলো আসন পেলে কোনো দল বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তার যোগ্যতা কী হবে—এসব বিষয়েও সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।

এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, কতজন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে বিরোধী দল গঠন করতে হবে, সংবিধানে এ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই।

শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানে এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। পার্লামেন্টের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। যখন আমাদের সংবিধান বা ভারতের সংবিধান লেখা হয়েছিল, তখন এই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে এটা কেউ চিন্তাই করেনি। অতএব সরাসরি কিছু বলা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৫৩টি অনুচ্ছেদ আছে সংবিধানে, ১৫৩টি অনুচ্ছেদে কিছু বলা নেই। অন্য কোনো আইনেও আমার জানামতে কিছু বলা নেই। তাই হুট করে এখানে কী হবে, তা বলা মুশকিল। পড়াশোনা করতে হবে, অনেককিছু ঘাঁটতে হবে। যেটা বললাম, কোথাও কিছু লেখা নেই—এবং আইনে সবকিছু লেখা থাকে না। যখন থাকে না, তখন আশেপাশের অনেককিছু নিয়ে পড়ে, বুঝে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে এটার উত্তর দাঁড় করাতে হবে।’

এদিকে সোমবার (৮ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘ইতিমধ্যে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন। ১৪ দলেরও দুজনের মতো জিতেছেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তো দূরে নয়। যিনি লিডার অব দ্য হাউজ হবেন. তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নতুন লিডার অব দ্য হাউজ, তিনি পরিস্থিতি বিবেচনায় করণীয় অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনগণের প্রতিনিধি। তারা নির্বাচিত। তারা নির্বাচিত সদস্য হিসেবেই সংসদে বসবেন এবং তাদের ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া অন্য কিছু এই মুহূর্তে ভাববার অবকাশ নেই।’

তবে নির্বাচনে জয়ের পরদিন সোমবার বিকেলে গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে একজন বিদেশি সাংবাদিক বিরোধী দল নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’

অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন কি না, তা নির্ভর করছে জোট গঠনের ওপর।

সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বতন্ত্র যারা জয়লাভ করেছেন, তাদের অবস্থান কী, সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত পরিষ্কার না হবে—যেমন তারা নিজেরা জোট করবেন নাকি আলাদা থাকবেন, সেটি যতক্ষণ পর্যন্ত না জানা যাবে—ততক্ষণ পর্যন্ত বিরোধী দল কাদের বলা হবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।’