নিকাব না খোলায় ইবি ছাত্রীর একাডেমিক ভাইভা নেয়নি শিক্ষকরা
- আপডেট সময় ০৭:৪২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
- / ২৪৫ বার পড়া হয়েছে
নিকাব না খোলায় সেমিস্টার ফাইনালের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশ নিতে পারেননি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নারী শিক্ষার্থী। গত ১৩ ডিসেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এ ঘটনা ঘটে।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই বোর্ডে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা এবং বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ভাইভাতে নিকাব পরে অংশ নেয়া এক ছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য তা খুলতে বলেন বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকরা। এসময় ওই ছাত্রী তাতে অসম্মতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সব সদস্যের সামনে নিকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। পরে না খোলায় তার ভাইভা নিতে অস্বীকৃতি জানান তারা।
ওই ছাত্রী জানান, নিকাব না খোলায় সেদিন অন্য সবার ভাইভা নিলেও তার নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে তা খুলে অংশ নিলে আবারো তার ভাইভা নেয়া হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ওই ছাত্রী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নিকাব খুলতে অসম্মতি জানানোয় এখন পর্যন্ত তা নেয়া হয়নি।
এই বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে ভাইভায় নিকাব খোলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছি। তাকে বুঝিয়েছি, ‘দেখো আমরা তোমার ভাইভা নিচ্ছি, তোমাকে আপডেট করার জন্য। চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির ভাইভাতে গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না। যখন সে রাজি হয়নি তখন পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপরে আমরা কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু সে নিজের অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।’
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম সে আমাদের স্টুডেন্ট তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু সেটা করতে পারেনি সে।’ নারী শিক্ষক দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এভাবে করলে আমরা মার্ক দেবো না।’
বিভাগটির সভাপতি শিমুল রায় বলেন, ‘এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে ফিমেল টিচার দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও তিনি ছিলেন। কিন্তু সবসময় তো থাকে না। সেক্ষেত্রে আমরা কি করবো? সেই জায়গা থেকে তাকে রিকোয়েস্ট করছিলাম। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থাকায় তার ভাইভা নেয়া হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘ইসলামে নিকাব পরা ফরজ নয়। কিন্তু যেহেতু চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে তা করা উত্তম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল জানান, কেউ ধর্মীয় জায়গা থেকে নিকাব মেইনটেইন করতে চাইলে তাকে সে স্বাধীনতা দেয়া উচিত। বিভাগের পরীক্ষা ও ভাইভাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মূখ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্রীদের তাতে অংশ নিতে দেয়া উচিত।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, কেউ ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে নিকাব করলে শিক্ষিকাদের দ্বারা পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেয়া যায়। তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ, সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেয়া ভালো। কিন্তু জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে জেনে বলতে পারবো।
ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এই কাজটি উচিত হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এরকম শিক্ষার্থীরা থাকে। তবে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকদের মাধমে তাদের আইডেন্টিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে অভিযোগ প্রমাণিত হলে (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে।