চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক চার নেতা
ঢামেক থেকে রোগী ভাগানোর ৫ দালাল চক্রের পরিচয় ও কৌশল
- আপডেট সময় ১০:২৭:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১৯৫ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতে বেশকিছু দালাল চক্র সক্রিয়। তাদের মধ্যে পাঁচটি দালাল চক্রের সন্ধান পেয়েছে গণমাধ্যমের একটি অনুসন্ধানী দল। এর মধ্যে তিনটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সাবেক চার নেতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢামেক থেকে বেসরকারি হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি করাতে পারলে চক্রের সদস্যদের রোগীপ্রতি পার্সেন্টেজ দেয়া হয়। সে রোগীর কত বিল হয়, তার ওপর নির্ভর করে পার্সেন্টেজের পরিমাণ। এই পার্সেন্টেজ সর্বনিম্ন পরিমাণ ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। রোগী যতদিন ভর্তি থাকবেন, সে হিসাবেও টাকা নেয়ার সুযোগ আছে।
আবার চক্রের সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে না চাইলে স্বজনদের মারধরেরও শিকার হতে হয়।
ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বেপারী ও ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া চক্রগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার বিনিময়ে মাসোহারা পান বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুজনই তা অস্বীকার করেন।
ঢামেক হাসপাতালে আসা যেসব রোগীর এনআইসিইউ বা আইসিইউ প্রয়োজন হয়, সেসব রোগীকে লক্ষ্য করেই পাঁচটি চক্র কাজ করে। সাধারণ রোগীরাও তাদের লক্ষ্যে পরিণত হন।
ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন দেয়ালে ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক যেসব স্টিলের প্লেট লাগানো হয়েছে, সেখানে থাকা যোগাযোগের নম্বরগুলো কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। নির্বিঘ্নে দালালি চালিয়ে যেতে চক্রের সদস্যরাই নম্বরগুলো মুছে ফেলেছেন- এমন তথ্য জানা গেছে একাধিক সূত্রে।
পাঁচ চক্রের নেতৃত্বে যারা
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি চক্রের একটির নেতৃত্ব দেন শেখ স্বাধীন সাবিত ও ইয়ামিন রহমান শুভ। এর মধ্যে শেখ স্বাধীন সাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
একটি চক্রের নেতৃত্ব দেন হেদায়েত উল্লাহ সরকার ও কাজী রাশেদ। এর মধ্যে হেদায়েত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। আর রাশেদ একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সম্পাদক।
অন্য এক চক্রের নেতা ইমরান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
বাকি দুই চক্রের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতেও জড়িত নন। তারা হলেন হান্নান ও কাশেম। তাদের মধ্যে কাশেম ‘ট্যাক্সি কাশেম’ নামে হাসপাতাল এলাকায় পরিচিত।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সাবিত-শুভ ও হেদায়েত-রাশেদ চক্রটি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হাসপাতালের ২১১ ও ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এ দুটি এনআইসিইউ ও গাইনি ওয়ার্ড। সার্বক্ষণিকই এ দুই ওয়ার্ডের সামনে চক্রের সদস্যদের অবস্থান থাকে। এ দুই ওয়ার্ডে বাকি তিন চক্রের কেউ কাজ করতে পারেন না। তবে পাঁচটি চক্রই কাজ করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে। চক্রের সদস্যদের সবাই কাজ করেন সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। দিনের বেলা তাদের তৎপরতা তেমন একটা থাকে না।
যে চক্র যেসব হাসপাতালে রোগী পাঠায়
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শেখ স্বাধীন সাবিত ও ইয়ামিন রহমান শুভর নেতৃত্বে থাকা চক্রটি মেডিফেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিহেলথ, আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, প্রাইম ও ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এ চক্রের ছয় সদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- জুয়েল, নিপু, মেহেদী, টুটুল, আল আমিন ও এসএম খলীল। তারা মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনে সাবিত ও শুভর হয়ে কাজ করেন।
হেদায়েত ও রাশেদ একটি চক্রের হয়ে কাজ করেন। চক্রটি মেডিফেয়ার, সুপার স্পেশালিস্ট, প্রাইম এবং ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এ চক্রের হয়ে কাজ করেন আলমগীর, রিপন, নাদিম, মিরাজ ও হানিফ।
ইমরান খানের চক্রটি হসপিটাল টোয়েন্টি সেভেন ও বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগী পাঠায়। এ চক্রের সদস্যরা হলেন- ইব্রাহিম, নয়ন ও নাফিস। তবে ইমরান তাদের মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেন না। রোগীভিত্তিক টাকা দেন। আর মাস শেষে প্রত্যেকের টাকার পরিমাণ ২০ থেকে ২২ হাজারে পৌঁছায়।
ট্যাক্সি কাশেমের নেতৃত্বাধীন চক্রটি আমার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ার, প্রাইম ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী পাঠায়। আর এ চক্রের অধীনে কাজ করে এরকম দুজনের তথ্য পাওয়া গেছে, যারা হলেন মনির ও বিল্লাল।
হান্নানের নেতৃত্বাধীন চক্রটি বিএনকে, এ ওয়ান, প্রাইম ও হেলথ কেয়ারে রোগী পাঠায়। এই চক্রে কাজ করা সদস্যরা হলেন- শরিফ, ইসমাইল, তুষার ও অপু।
হান্নানের নেতৃত্বাধীন চক্রটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ তুনানের নাম ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে খবর পাওয়া যায়।
চক্রের সদস্যদের হাসপাতালগুলোর মধ্যে মেডিফেয়ার অবস্থিত মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে, ইউনিহেলথ পান্থপথ সিগন্যালে, আহমেদ স্পেশালাইজড চানখাঁরপুলে এবং প্রাইম ও ঢাকা হেলথ কেয়ার অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীত পাশে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের দুই ও তিনতলায়। সুপার স্পেশালিস্ট, হসপিটাল টোয়েন্টি সেভেন ও বাংলাদেশে ক্রিটিক্যাল কেয়ার অবস্থিত ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে। বিএনকে হাসপাতাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পাশে। আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল অবস্থিত শ্যামলি বাসস্ট্যান্ডের পাশে।
এসব হাসপাতালে যারা রোগী পাঠায় তাদের প্রত্যেকের নামে একটি কোড তৈরি হয়। যখনই কোনো একটি কোডের অধীনে সেই হাসপাতালে কোনো একজন রোগী ভর্তি হয় আর চিকিৎসা শেষে যখন সেই রোগী ওই হাসপাতাল ছাড়ে, তখন রোগীর সম্পূর্ণ বিলের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট কোডের লোককে পরিশোধ করা হয়।
চক্রের সদস্যের ছদ্মবেশে হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, চক্রের নেতাদের নামে তাদের হাসপাতালে কোড আছে। এসব কোডের অধীনে তারা সেখানে রোগী পাঠান এবং রোগীভেদে তারা প্যাকেজ বা রোগী হাসপাতালে যতদিন থাকবে, এর প্রতিদিন হিসাবে টাকা পান।
চক্রের সদস্য ছদ্মবেশে জানতে চাইলে এওয়ান হাসপাতালের পরিচালক সাইয়েদ ইসলাম সাইফ বলেন, ‘কোনো আইসিইউ রোগী এনে দিতে পারলে রোগী ভর্তি হওয়ার পরপরই আপনি ১৮ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন। এটা হলো প্যাকেজ সিস্টেম। আর পার ডে হিসেবে নিলে দৈনিক পাবেন ৫ হাজার টাকা।’
ছদ্মবেশে চক্রের কয়েকজন নেতাকে ফোন দিলে তারাও এই প্রতিবেদককে রোগী যতদিন ভর্তি থাকবে দিনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে দেয়ার প্রস্তাব দেন।
দালাল চক্রের সদস্যরা যেভাবে কাজ করে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চক্রের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখনই কোনো রোগী আসে, চক্রের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করেন। তারা রোগীর স্বজন, হাসপাতালের ট্রলি ম্যান বা যে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে আনা হয়েছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে কথা বলে রোগীর রোগের ধরন জানার চেষ্টা করেন। কথা বলে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে এ রকম কোনো ধারণা পেলে তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে থেকে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর তারা রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের রুম পর্যন্ত যান। ডাক্তার যদি বলেন যে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, তখন থেকেই তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এটিকে তাদের ভাষায় বলা হয় মার্কেটিং।
রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে দালালরা ডাক্তারের রুম পর্যন্ত রোগীকে নিতে দিতে চান না। এর আগেই তারা রোগীর অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেন। যখনই কোন রোগী তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে সম্মত হন, তখনই চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ফোন দিয়ে রোগীর নাম এবং রোগীর বাবা বা মায়ের নাম জানিয়ে সেই রোগীকে তাদের চক্র প্রধানের নামে থাকা কোডে বুকিং দিতে বলেন।
অনেক সময় এক রোগীর জন্য কয়েকটি চক্রের সদস্যরা একসঙ্গে ফোন করেন। তখন যে চক্রের সদস্যরা আগে ফোন দেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় ‘কল ক্লিয়ার’। আর যারা পরে ফোন দেন তাদের বলা হয় ‘কল বুকড’।
আর যে দুটি চক্র ঢাকা মেডিক্যালের ২১১ ও ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ করে তাদের সদস্যরা এসব ওয়ার্ডের সামনে প্রায় সময় অবস্থান করেন। সেখানে থেকে তারা খেয়াল রাখেন কোনো রোগীর এনআইসিইউ বা আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে কি না। আইসিইউ বা এনআইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে এমন রোগীদের টার্গেটের পাশাপাশি অনেক সময় তারা যেসব রোগীর এসবের প্রয়োজন নেই তাদেরও টার্গেট করেন। তাদের শিশুদের জন্য এনআইসিইউ প্রয়োজন বা এনআইসিউতে না নিলে তাদের বাচ্চার সমস্যা হয়ে যাবেসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
চক্রের সদস্যরা রোগীদের নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিভিন্ন প্রতারণা, বিশেষ করে কম খরচে রোগীর চিকিৎসা করানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। আর চিকিৎসা শেষে বিলের কাগজ দেখে কপালে হাত দিতে হয় রোগীর স্বজনদের।
প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনদেরও করা হয় মারধর
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিট নেই এবং রোগীর জরুরি ভিত্তিতে এনআইসিইউ প্রয়োজন- এমনটা জানিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা এক রোগীকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় সেই রোগীর স্বজনদেরও মারধর করেন সাবিত-শুভরা।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রাসেল শান্ত বলেন, “২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমার ভাতিজার জন্ম হয়। কিছুক্ষণ পর এক লোক এসে নিজেকে হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে সিট নেই। আপনারা এখানে ভর্তি হতে পারবেন না। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চাইলে এখান থেকে দ্রুত নিয়ে যান।’ পাশেই মেডিফেয়ার নামে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
আমরা জিজ্ঞেস করি, মেডিফেয়ারে নেয়ার বিষয়টা ডাক্তার বলেছেন কি না।
“তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ’।’ এরপর আমরা তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে সে ডাক্তারের কাছে যেতে গড়িমসি করছিল। তখন আমরা বুঝতে পারি, সে দালাল।”
তিনি আরও বলেন, “এরপর ওই লোকটাকে আমরা ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসি। এ সময় সেখানে সাবিত (স্বাধীন সাবিত) ভাইও হাজির হয়। ছাত্রলীগ করার কারণে আমি ওনাকে চিনি। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু ভাই বিষয়টা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে সমাধান করে দিয়েছে।
“সমাধান করার পর যখন আমরা ফাঁড়ি থেকে বের হই তখন সাবিত ভাই তার লোকজনকে নিয়ে এসে আমাকে মারা শুরু করেন।”
ঘটনার সময় সেখানে শাহবাগ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক খালেকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী যদি এই ঘটনায় মামলা করে তাহলে আমরা অবশ্যই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করব। একটা বিষয় সমাধান হওয়ার পর তো তারা কারও গায়ে হাত তুলতে পারে না।’
অতিষ্ঠ অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও
চক্রের সদস্যদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে খড়্গ নেমে আসে ঢাকা মেডিক্যালে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ওপর। তাদের মারধরের শিকার হতে হয়। এসবের প্রতিবাদে কয়েক মাস আগে ধর্মঘটও ডাকেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বলেন, ‘তাদের কাছে আমরা অসহায়। আমরা যখন ঢাকা মেডিক্যাল থেকে কোনো রোগীকে নিয়ে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই, তখন এই সাবিত-ইমনরা এসে আমাদের বলে দেয় রোগী যেই হাসপাতালের কথা বলছে, সেই হাসপাতাল না, আমরা যেই হাসপাতালে বলব, সেই হাসপাতালে নিয়ে যাবি। অনেক সময় তারা আমাদের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। আবার অনেক সময় তারা বাইক নিয়ে আমাদের গাড়ি ফলো করে।
‘তাদের কথা অনুযায়ী সেই হাসপাতালে না নিয়ে গেলে আমাদের মারধর করে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রোগীদের ওইসব হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হই। অনেক সময় তারা রোগীর সঙ্গে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে উঠে সারা রাস্তা রোগীদের উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি করানোর চেষ্টা করে।’
ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল বলেন, ‘গরিব, অসহায় মানুষদের বেসরকারিতে ভর্তি করানোর জন্য তারা যে টানাহেঁচড়াটা করে, এগুলো অমানবিক। ছাত্রলীগের নাম দিয়ে এরা যা করছে এগুলো মানার মতো না।’
বাবুল বলেন, ‘এই সাবিত-ইমনদের কথা অনুযায়ী না চললে অনেক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে তাদের হাতে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি তারা আমাকেও একদিন মারছে।’
সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাবুল বলেন, ‘এক মাস আগে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বের হয়ে আমার অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগী ওঠে। উনি যাবেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এসময় দালাল চক্রের নেতা ইমন আমার অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে চায়। আমি তাকে বলি- আমার অ্যাম্বুলেন্সে আপনাকে তুলবো না। আপনি রোগীর লোক না। উনারা যেখানে বলে সেখানেই আমি যাব।
‘এরপর কেন তাকে আমি এই কথা বললাম, এ জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছে। পরে সাবিত-শুভসহ সবাই এসে আমাকে হেলমেট দিয়ে এলোপাতাড়ি মারা শুরু করেছে। এজন্য পরদিন আমি ধর্মঘট ডাকি। পরে তারা এসে ক্ষমা চায়।’
তিনি বলেন, ‘এদের জ্বালা-যন্ত্রণায় তিন দিন আগে আমরা নতুন নিয়ম করেছি, যেন গাড়ির সামনে কোন দালাল উঠে রোগীদের বিরক্ত করতে না পারে। যদিও কয়েক দিন আগে জোর করে এক অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর সাথে উঠে যায় ইমন। এ জন্য নতুন নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি হিসেবে ওই ড্রাইভারের অ্যাম্বুলেন্সকে ২৪ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং সেই ড্রাইভারকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
বাবুল বলেন, এই দালালরা হাসপাতালের ট্রলি ম্যানদের সাথেও কন্টাক্ট করে রাখছে। কোন রোগীর কন্ডিশন কী রকম ট্রলিম্যানরা ফোন দিয়ে তাদের এসব তথ্য জানায়।
দালাল চক্রের খপ্পরে পড়া ভুক্তভোগীদের ভাষ্য
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৬ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার সময় দেখা যায়, এক যুবক একটি শিশুকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে ছিল সাবিত-শুভ গ্রুপের সদস্য টুটুল। তাদের পিছু পিছু যাওয়ার পর দেখা যায়, তারা জরুরি বিভাগের গেট থেকে একটি অটোরিকশা নিয়ে সেই শিশুকে চানখাঁরপুলের আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করান।
পরে জানা যায়, সেই যুবকটির নাম হৃদয়। তিনি শিশুটির বাবা। ১৫ জানুয়ারি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওই হাসপাতালে এক দিন থাকার পর বুঝেছি যে আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ঢাকা মেডিক্যালের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলাম। আমার বউয়ের বাচ্চা হওয়ার পর সেখানে থাকা এক বৃদ্ধ আমাকে বলে, ‘আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া। এ জন্য এনআইসিইউ প্রয়োজন।’ ভেবেছি সে হাসপাতালেরই কেউ। তার কথা শুনে আমরা এনআইসিউতে কথা বলার জন্য বের হলে আরেকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমাদের এনআইসিউ প্রয়োজন কি না। আমরা ‘হ্যাঁ’ বললে সে আমাকে বলে, ‘ঢাকা মেডিক্যালে এনআইসিইউ আছে। কিন্তু এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা প্রয়োজন।’ পরে আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে স্বীকার করে সে বাইরের লোক।
“পরে তার সাথে বাগবিতণ্ডা করতে করতে আমি নিচে নেমে যাই। এ সময় তাকে একটা থাপ্পড় মারি। তখন সেখানে তার পক্ষের আরও অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। পরে ঝামেলা শেষ করে টুটুল নামের একজন এসে আমাকে বলে, ‘আপনাদের কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমি বলি, এনআইসিইউ নিয়ে।’ এরপর সে আমাকে বলে, ‘আমার হাতে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে এনআইসিইউ আছে। আপনারা সেখানে যেতে পারেন।”
হৃদয় আরও বলেন, “তার কথামতো আমরা চানখাঁরপুলের আহমেদ স্পেশালাইজড হসপিটালে যাই। তবে সে আমাকে বলেনি, কত টাকা প্রয়োজন। ঢোকামাত্র হাসপাতালে ভর্তির জন্য আমার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা এবং আরেকটু পরেই ওষুধের কথা বলে আরও ১৪০০ টাকা নেয়। এরপর সেখানে আমার থাকার জায়গা না থাকায় বাচ্চাকে রেখে আমি বের হয়ে চলে আসি। পরের দিন সকালে গেলে হাসপাতাল থেকে আমাকে বলা হয়, ‘আপনার বাচ্চাকে দেখতে একজন ডাক্তার আসবে। তার জন্য এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।’ তখন থেকে আমার সন্দেহ শুরু হয়।
“এরপর আমি ডাক্তার দেখাব না জানালে তারা বলে, ‘তাহলে সাত হাজার টাকা জমা দিয়ে আসেন।’ এই টাকা কিসের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, ‘গতকাল মধ্যরাত থেকে পরদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনআইসিইউর ফি।’ এই কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ তারা আমাকে বলেনি, অর্ধ দিনেই এত টাকা আসবে।
“অনেক ঝগড়ার পর চার হাজার টাকা দিয়ে আমার বাচ্চাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসি। এরপর আমরা ফের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই।’
২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতেই আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতালেই দেখা মেলে আরেক রোগীর স্বজনের। সে সময় তিনি নেবুলাইজার লাগানো তার ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে বের করে হেঁটে ঢাকা মেডিক্যালের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার গতিরোধ করে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় সাবিত-শুভ চক্রের সদস্য টুটুলকে।
এই রোগীর বাবা বলেন, ‘আমাদের টুটুল নামের এই লোকটি এই হাসপাতালে ভালো ব্যবস্থা আছে বলে এখানে নিয়ে আসে। তার কথায় প্রভাবিত হয়ে আমরা চলে আসি, কিন্তু এসে দেখি, হাসপাতালের পর্যায়েও পড়ে না এটা। তাই আবার ঢাকা মেডিক্যালেই চলে যাচ্ছি।’
ভিডিও করায় হেনস্তার মুখে প্রতিবেদক
২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে একটি চক্রের নেতা ইমরান খানকে অনুসরণ করতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি হাসপাতালের নিচতলায় নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে আসা এক রোগীর সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় তার গতিবিধি এবং রোগীর সঙ্গে হওয়া তার কথোপকথন গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করার চেষ্টা করলে তিনি বুঝে ফেলেন এবং নিজেকে হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
পরে ওই রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এসেছেন কুমিল্লা থেকে। ইমরান খানের ছবি দেখিয়ে তার সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকা মেডিক্যালে সিট সংকট জানিয়ে ইমরান খান তাকে অন্য একটি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এর একটু পরেই দেখা যায়, সেই রোগী একটি অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতাল ছাড়ছেন। তার সঙ্গে ইমরান খানকেও দেখা যায়।
এই ঘটনার ভিডিও করে প্রতিবেদক ভোর ৩টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এলে তার পথরোধ করেন ফাঁড়ির এক কনস্টেবল। জ্যাকেটে নেমপ্লেট ঢাকা থাকায় তার নাম জানা যায়নি। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন সাবিত, শুভ, তাদের অনুসারী টুটুল ও অন্য চক্রের নেতা ইমরান খানও। পুলিশ কনস্টেবল তাদের দেখিয়ে প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান কেন তাদের অনুসরণ এবং ভিডিও করা হয়েছে। এ সময় তিনি প্রতিবেদকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করার চেষ্টা করেন।
যা বলছেন অভিযুক্তরা
রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাবিত-শুভ গ্রুপের সদস্য টুটুলকে ফোন করা হলে তিনি সাবিতের সঙ্গে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন।
রোগীর স্বজন ও অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মারধরের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবিত বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনার কাছে তথ্য থাকলে আপনি যা ইচ্ছা করেন। এটা নিয়ে আমার অতো বেশি মাথাব্যথা নেই।’
এ গ্রুপের আরেক সদস্য ইয়ামিন শুভ বলেন, ‘আমরা কোনো হাসপাতালে মার্কেটিং করি না। আপনার এগুলো প্রিপ্ল্যান্ড (পূর্বপরিকল্পিত) কথাবার্তা। এগুলো বাদ দেন।’
অন্য একটি চক্রের নেতা হেদায়েত সরকার বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে আমাদের প্রতিনিধি আছে। তারা বেতনভুক্ত। তারা সেসব হাসপাতালে আমাদের হয়ে মার্কেটিং করবে। তবে হাসপাতালের কোনো কর্মচারী বা অন্য কেউ রোগী পাঠালে তাদের আমরা কমিশন দিই না। এসব কাজ করে মেডিফেয়ার বা আহমেদ স্পেশালাইজডের মতো হাসপাতালগুলো।’
এ চক্রের অন্য নেতা কাজী রাশেদ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় বা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, এটা সত্য। এদের মাধ্যমে যদি আমাদের হাসপাতালে কোনো রোগী আসে, তাদের আমরা পার ডে ভিত্তিতে বা এককালীন একটা পার্সেন্টেজ দেই। এই টাকাটা পপুলার বা ল্যাবএইডের মতো হাসপাতালও দেয়।
‘এখন এদের যদি আমরা টাকা না দেই, তারা তো আমাদের রোগী দেবে না। তাই এই টাকাটা দিতে হয়। তবে আমরা নিজেদের কোনো লোক হাসপাতালের ভেতরে রাখি না।’
তাহলে এ গ্রুপের সদস্য হানিফ, মিরাজ বা আলমগীর এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরা আমাদের হাসপাতালের কর্মচারী।’
তারা ঢাকা মেডিক্যালে কী করে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অভিযোগের বিষয়ে আবুল কাশেম টিপু বলেন, “২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি এই ব্যবসা করতাম। এখন ব্যবসা করে হেদায়েত-রাশেদ ও সাবিতরা। আমি এখন রাজনীতি করি। তবে আমার দুই ছোট ভাই মনির ও বিল্লাল, তাদেরকে আমি কিছু দিতে পারিনি। তারা মার্কেটিং করে মাসে এখন কয়েকটা ‘কল’ পায়।
“তবে এই ‘কল’ কোনোভাবেই দশটার উপরে না। এতে যদি কারও সমস্যা হয় আমাকে বলতে পারেন। আপনি বরং দেখেন এখানে কে রাঘববোয়াল আর কে রাঘববোয়াল না। হেদায়েত-রাশেদ- সাবিতদের মারামারিতে তারা (মনির-বিল্লাল) গত কয়েক মাস ধরে কোনো কলই পাচ্ছে না।”
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই দালাল চক্রের ব্যাপারে আমরা অবহিত। আমরা তাদের উৎখাত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে তাদের দুই সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তারও করেছি। এই চক্রের নেতারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সেটাও আমরা অবহিত। এটি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টর মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করার চিন্তা করছি।
‘স্যারদের আমরা অবহিত করেই এরপর এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এসব কাজে জড়িত থাকা লজ্জাজনক বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার হাসপাতালের আনসার, পুলিশ এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের আমরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি- বিভিন্ন ল্যাবরেটরি বা বেসরকারি হাসপাতালের কোনো লোক যদি আমাদের হাসপাতালে আসে, তাদের ধরে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়।’
পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও আনসার প্লাটুনের কমান্ডারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়টাও আমি শুনেছি। কিন্তু যেহেতু তারা সরকারি কর্মকর্তা, তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কিছুটা কঠিন।’
হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক প্লেটে থাকা নম্বর মুছে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবেমাত্র দুই সপ্তাহ হয়েছে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। এটি আমি দেখব।’