ঢাকা ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ

ভারত যে কারণে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বাংলাদেশের রাজনীতি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ১৫৬ বার পড়া হয়েছে

বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার রাজনৈতিক অভিলাষ, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সীমিত রাখতে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। শুক্রবার বেলা ১১টায় ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ‘বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা কাজ করে। ২০১৩ সাল থেকে এটা স্পষ্ট। ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এতটাই উৎসাহী যে, এই লক্ষ্যে ক্রমাগতভাবে যে কোনো ধরনের রাখ-ঢাক ছাড়াই কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কেনো? আমি মনে করি এর কারণ তিনটা। প্রথমত, বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার রাজনৈতিক অভিলাষ এবং ভূ-কৌশলগত নিরাপত্তা। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক স্বার্থ। তৃতীয়ত, বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সীমিত রাখা।

এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ভারত গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে তার উঠান বলে বিবেচনা করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ভারত ভৌগোলিকভাবে তার সীমানা বৃদ্ধি করতে চেয়েছে। তাদের নীতি নির্ধারকদের বিবেচনায় ভারত এমন একটা এলাকায় আছে যেখানে তার চারপাশের দেশগুলো তার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন। এটা তাদের ধারণা। এই বিবেচনা থেকেই ভারত তার প্রতিবেশীদের উপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ করতে অভ্যস্ত। এক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষমতাশীলরা তাদের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ভারতের পরামর্শ গ্রহণ করবে। এর ব্যতিক্রম হলেই ভারত তার স্বার্থের অনুকূলে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বা করবে। ভারতের এই দৃষ্টিভঙ্গি যদিও দীর্ঘদিনের। কিন্তু ভারতের এই দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি দৃঢ় এবং সুস্পষ্ট রূপ লাভ করেছে ২০০১ সালের পর থেকে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন, চীনের উত্থান ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভর করা ভারতের দীর্ঘদিনের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে। নিজেকে সে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থিত করতে চায়। বৈশ্বিক শক্তির জন্য তার দরকার নিজস্ব এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য।অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ ভারতে যা রপ্তানি করে তার চেয়ে বেশি আমদানি করে। ২০২২ ও ‘২৩ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সামগ্রিকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

তারপরও ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ১২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ তখন ভারতে রপ্তানি করেছে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিলো ৪ দশকি ১৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। কার্যত বাংলাদেশ ভারতের একটি ক্যাপিটাল মার্কেটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণের জন্য ভারতের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের ভেতরে কী ঘটছে, সেটা কেবল দেশের ভেতরের ঘটনা দিয়ে বিচার করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে দেশের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি বিবেচ্য ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। এই অঞ্চলে যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে তার একটি মঞ্চ বা থিয়েটারে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ

ভারত যে কারণে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বাংলাদেশের রাজনীতি

আপডেট সময় ০৫:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার রাজনৈতিক অভিলাষ, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সীমিত রাখতে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। শুক্রবার বেলা ১১টায় ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ‘বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা কাজ করে। ২০১৩ সাল থেকে এটা স্পষ্ট। ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এতটাই উৎসাহী যে, এই লক্ষ্যে ক্রমাগতভাবে যে কোনো ধরনের রাখ-ঢাক ছাড়াই কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কেনো? আমি মনে করি এর কারণ তিনটা। প্রথমত, বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার রাজনৈতিক অভিলাষ এবং ভূ-কৌশলগত নিরাপত্তা। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক স্বার্থ। তৃতীয়ত, বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সীমিত রাখা।

এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ভারত গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে তার উঠান বলে বিবেচনা করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ভারত ভৌগোলিকভাবে তার সীমানা বৃদ্ধি করতে চেয়েছে। তাদের নীতি নির্ধারকদের বিবেচনায় ভারত এমন একটা এলাকায় আছে যেখানে তার চারপাশের দেশগুলো তার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন। এটা তাদের ধারণা। এই বিবেচনা থেকেই ভারত তার প্রতিবেশীদের উপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ করতে অভ্যস্ত। এক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষমতাশীলরা তাদের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ভারতের পরামর্শ গ্রহণ করবে। এর ব্যতিক্রম হলেই ভারত তার স্বার্থের অনুকূলে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বা করবে। ভারতের এই দৃষ্টিভঙ্গি যদিও দীর্ঘদিনের। কিন্তু ভারতের এই দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি দৃঢ় এবং সুস্পষ্ট রূপ লাভ করেছে ২০০১ সালের পর থেকে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন, চীনের উত্থান ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভর করা ভারতের দীর্ঘদিনের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে। নিজেকে সে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থিত করতে চায়। বৈশ্বিক শক্তির জন্য তার দরকার নিজস্ব এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য।অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ ভারতে যা রপ্তানি করে তার চেয়ে বেশি আমদানি করে। ২০২২ ও ‘২৩ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সামগ্রিকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

তারপরও ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ১২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ তখন ভারতে রপ্তানি করেছে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিলো ৪ দশকি ১৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। কার্যত বাংলাদেশ ভারতের একটি ক্যাপিটাল মার্কেটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণের জন্য ভারতের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের ভেতরে কী ঘটছে, সেটা কেবল দেশের ভেতরের ঘটনা দিয়ে বিচার করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে দেশের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি বিবেচ্য ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। এই অঞ্চলে যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে তার একটি মঞ্চ বা থিয়েটারে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে।