ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুশফিক–রিশাদের অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:৩১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
  • / ৭৫ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

রিশাদ হোসেন মানে শুধু একজন লেগ স্পিনারই নন, রিশাদ হোসেন মানে ব্যাট হাতে ঝড়। সিলেটে শেষ টি–টোয়েন্টির পর আজ চট্টগ্রামে আরও একবার সেটাই দেখলেন সবাই। রিশাদের মাত্র ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস ৯.৪ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ৪ উইকেটের জয়, সেই সঙ্গে সিরিজ জয়ও।

এক ম্যাচে পাঁচজনের চোট, মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাঁদের তিনজনকেই। জাকের আলী গেলেন হাসপাতাল পর্যন্ত। সৌম্য সরকারকে ড্রেসিংরুমে বসিয়ে ব্যাটিংয়ে নামাতে হলো কনকাশন বদলি তানজিম হাসান তামিমকে। মোস্তাফিজুর রহমান পরে আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারতেন কি না, তা অবশ্য বোঝা যায়নি তার আগেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার ২৩৫ রান টপকে যাওয়ায়।

সিরিজের শেষ ম্যাচটা অলিখিত ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল ঠিক আছে। তাই বলে এক ম্যাচে এত নাটক হতে হবে! শ্রীলঙ্কার ইনিংসের সময় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের একের পর এক ক্রিকেটার যে রকম চোটে পড়তে থাকলেন, সেটিকে নাটকীয় না বলে উপায় নেই।

নাটক আরও জমে উঠত সৌম্য সরকারের কানকাশন বদলি হিসেবে নামা তানজিদ হাসান তামিম যদি তাঁর ইনিংসটা তিন অঙ্কে নিতে পারতেন। অবশ্য শ্রীলঙ্কার ২৩৫ রানের জবাবে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে গেছে ৪ ছক্কা আর ৯ বাউন্ডারিতে তাঁর ৮১ বলে ৮৪ রানই। ম্যাচটা যার খেলারই কথা ছিল না, কনকাশন বদলি হয়ে দলে ঢুকে তিনিই কিনা দুর্দান্ত এক ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার! ম্যাচ জেতানোর অন্যতম নায়কও। এটাও কি কম নাটক! আর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ওয়ানডেতে কনকাশন বদলি হিসেবে নেমে তামজিদের ৮৪ রানই এখন সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল মারনাস লাবুশেনের।

ম্যাচের শেষ দৃশ্যে রিশাদ যেটা করলেন, সেটাকে নাটক না বলে ‘শো’ বলাই ভালো—‘রিশাদ শো।’ দলের ১৭৮ রানের মেহেদী হাসান মিরাজের ষষ্ঠ উইকেটটি যখন পড়ল, বাংলাদেশের ইনিংসের তখন ৩৬.১ ওভার। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতবেই, সেটা বলার উপায় ছিল না তখন। অথচ সেখান থেকেই কিনা মাত্র ৩ ওভার ১ বলের মধ্যে বাংলাদেশ বাকি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফেলল!

রিশাদের ওই বিধ্বংসী ইনিংসই জয়টা সহজ করে দেয় বাংলাদেশের। ৫ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কার ইনিংসে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার করা ৪০তম ওভারের প্রথম দুই বলেই রিশাদ মেরেছেন পরপর দুই ছক্কা, পরের তিন বলে তিন চার। স্লগ সুইপে কাউ কর্নার আর মিড উইকেট দিয়ে মারা দুটি ছক্কাই গিয়ে পড়েছে গ্যালারিতে। ২৪ রান আসে ওই এক ওভারেই।

এর আগে রিশাদ তাঁর বাকি দুটি ছক্কাও মেরেছেন হাসারাঙ্গাকেই। একই ওয়ানডেতে একই বোলারকে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড এখন এটাই। রিশাদের ৪৮ রানের ৪০–ই এসেছে শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গার ১১ বল থেকে। মহীশ তিকশানার করা ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটকিপারের পাশ গলে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন সপ্তম উইেকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের জুটিতে রিশাদের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম। তিনি অপরাজিত ৩৬ বলে ৩৭ রান করে।

চট্টগ্রামে আজ ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে তাপমাত্রা। দিনে ম্যাচ খেলায় রাতের শিশিরের উপদ্রব থেকে বাঁচা গেলেও প্রচণ্ড রোদের হাত থেকে বাঁচা যায়নি। বাংলাদেশ দলের যে পাঁচ ক্রিকেটার চোট পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত দুজনের চোটের কারণ হতে পারে প্রচণ্ড গরম আর শরীরে পানিশূন্যতা

বাংলাদেশের ফিল্ডারদের চোটে পড়ার বাইরে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের হাইলাইটস বলতে পারেন জানিথ লিয়ানাগের অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসটাকে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটেও বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটসম্যানই সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। তবে ওয়ানডেতে প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পাওয়া জানিথ একাই যথেষ্ট ভয় ছড়াতে পেরেছেন বাংলাদেশ শিবিরে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কথায়ও প্রকাশ পেয়েছে সেটা।

বোলারদের মধ্যে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া তাসকিন আহমেদের কথাটা আলাদা করেই বলতে হয়। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোস্তাফিজুর রহমানও। মাংসপেশিতে টান পড়ায় মোস্তাফিজ অবশ্য তাঁর শেষ ওভারটা শেষ না করেই মাঠ ছেড়েছেন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি কিছু। কখনো নাগিন ড্যান্স, কখনো টাইমড আউট বিতর্ক, কখনোবা অন্য কিছু নিয়ে উত্তেজনা। তাসকিন–তামিম–রিশাদরা আজ সে রকম কোনো সুযোগই রাখলেন না। তবে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের সময় হেলমেট হাতে নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের দুষ্টুমিতে ফুটে ওঠা ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর শুধু ট্রফিতেই এখন আর পুরো আনন্দটা আসে না। সঙ্গে ও রকম একটু ‘সস’ও যোগ করতে হয় বোধ হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩৫ (লিয়ানাগে ১০১*, আসালাঙ্কা ৩৭, মেন্ডিস ২৯ ; তাসকিন ৩/৪২, ২/৩৯, মিরাজ ২/৩৮)

বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ ( তানজিদ ৮৪, রিশাদ ৪৮*, মুশফিক ৩৭* ; লাহিরু ৪/৪৮, হাসারাঙ্গা ২/৬৪)

ফল: ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: রিশাদ হোসেন (বাংলাদেশ)

সিরিজ: বাংলাদেশ ২–১ ব্যবধানে জয়ী।

নিউজটি শেয়ার করুন

মুশফিক–রিশাদের অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

আপডেট সময় ১০:৩১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪

রিশাদ হোসেন মানে শুধু একজন লেগ স্পিনারই নন, রিশাদ হোসেন মানে ব্যাট হাতে ঝড়। সিলেটে শেষ টি–টোয়েন্টির পর আজ চট্টগ্রামে আরও একবার সেটাই দেখলেন সবাই। রিশাদের মাত্র ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস ৯.৪ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ৪ উইকেটের জয়, সেই সঙ্গে সিরিজ জয়ও।

এক ম্যাচে পাঁচজনের চোট, মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাঁদের তিনজনকেই। জাকের আলী গেলেন হাসপাতাল পর্যন্ত। সৌম্য সরকারকে ড্রেসিংরুমে বসিয়ে ব্যাটিংয়ে নামাতে হলো কনকাশন বদলি তানজিম হাসান তামিমকে। মোস্তাফিজুর রহমান পরে আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারতেন কি না, তা অবশ্য বোঝা যায়নি তার আগেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার ২৩৫ রান টপকে যাওয়ায়।

সিরিজের শেষ ম্যাচটা অলিখিত ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল ঠিক আছে। তাই বলে এক ম্যাচে এত নাটক হতে হবে! শ্রীলঙ্কার ইনিংসের সময় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের একের পর এক ক্রিকেটার যে রকম চোটে পড়তে থাকলেন, সেটিকে নাটকীয় না বলে উপায় নেই।

নাটক আরও জমে উঠত সৌম্য সরকারের কানকাশন বদলি হিসেবে নামা তানজিদ হাসান তামিম যদি তাঁর ইনিংসটা তিন অঙ্কে নিতে পারতেন। অবশ্য শ্রীলঙ্কার ২৩৫ রানের জবাবে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে গেছে ৪ ছক্কা আর ৯ বাউন্ডারিতে তাঁর ৮১ বলে ৮৪ রানই। ম্যাচটা যার খেলারই কথা ছিল না, কনকাশন বদলি হয়ে দলে ঢুকে তিনিই কিনা দুর্দান্ত এক ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার! ম্যাচ জেতানোর অন্যতম নায়কও। এটাও কি কম নাটক! আর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ওয়ানডেতে কনকাশন বদলি হিসেবে নেমে তামজিদের ৮৪ রানই এখন সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল মারনাস লাবুশেনের।

ম্যাচের শেষ দৃশ্যে রিশাদ যেটা করলেন, সেটাকে নাটক না বলে ‘শো’ বলাই ভালো—‘রিশাদ শো।’ দলের ১৭৮ রানের মেহেদী হাসান মিরাজের ষষ্ঠ উইকেটটি যখন পড়ল, বাংলাদেশের ইনিংসের তখন ৩৬.১ ওভার। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতবেই, সেটা বলার উপায় ছিল না তখন। অথচ সেখান থেকেই কিনা মাত্র ৩ ওভার ১ বলের মধ্যে বাংলাদেশ বাকি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফেলল!

রিশাদের ওই বিধ্বংসী ইনিংসই জয়টা সহজ করে দেয় বাংলাদেশের। ৫ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কার ইনিংসে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার করা ৪০তম ওভারের প্রথম দুই বলেই রিশাদ মেরেছেন পরপর দুই ছক্কা, পরের তিন বলে তিন চার। স্লগ সুইপে কাউ কর্নার আর মিড উইকেট দিয়ে মারা দুটি ছক্কাই গিয়ে পড়েছে গ্যালারিতে। ২৪ রান আসে ওই এক ওভারেই।

এর আগে রিশাদ তাঁর বাকি দুটি ছক্কাও মেরেছেন হাসারাঙ্গাকেই। একই ওয়ানডেতে একই বোলারকে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড এখন এটাই। রিশাদের ৪৮ রানের ৪০–ই এসেছে শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গার ১১ বল থেকে। মহীশ তিকশানার করা ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটকিপারের পাশ গলে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন সপ্তম উইেকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের জুটিতে রিশাদের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম। তিনি অপরাজিত ৩৬ বলে ৩৭ রান করে।

চট্টগ্রামে আজ ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে তাপমাত্রা। দিনে ম্যাচ খেলায় রাতের শিশিরের উপদ্রব থেকে বাঁচা গেলেও প্রচণ্ড রোদের হাত থেকে বাঁচা যায়নি। বাংলাদেশ দলের যে পাঁচ ক্রিকেটার চোট পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত দুজনের চোটের কারণ হতে পারে প্রচণ্ড গরম আর শরীরে পানিশূন্যতা

বাংলাদেশের ফিল্ডারদের চোটে পড়ার বাইরে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের হাইলাইটস বলতে পারেন জানিথ লিয়ানাগের অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসটাকে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটেও বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটসম্যানই সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। তবে ওয়ানডেতে প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পাওয়া জানিথ একাই যথেষ্ট ভয় ছড়াতে পেরেছেন বাংলাদেশ শিবিরে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কথায়ও প্রকাশ পেয়েছে সেটা।

বোলারদের মধ্যে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া তাসকিন আহমেদের কথাটা আলাদা করেই বলতে হয়। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোস্তাফিজুর রহমানও। মাংসপেশিতে টান পড়ায় মোস্তাফিজ অবশ্য তাঁর শেষ ওভারটা শেষ না করেই মাঠ ছেড়েছেন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি কিছু। কখনো নাগিন ড্যান্স, কখনো টাইমড আউট বিতর্ক, কখনোবা অন্য কিছু নিয়ে উত্তেজনা। তাসকিন–তামিম–রিশাদরা আজ সে রকম কোনো সুযোগই রাখলেন না। তবে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের সময় হেলমেট হাতে নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের দুষ্টুমিতে ফুটে ওঠা ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর শুধু ট্রফিতেই এখন আর পুরো আনন্দটা আসে না। সঙ্গে ও রকম একটু ‘সস’ও যোগ করতে হয় বোধ হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩৫ (লিয়ানাগে ১০১*, আসালাঙ্কা ৩৭, মেন্ডিস ২৯ ; তাসকিন ৩/৪২, ২/৩৯, মিরাজ ২/৩৮)

বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ ( তানজিদ ৮৪, রিশাদ ৪৮*, মুশফিক ৩৭* ; লাহিরু ৪/৪৮, হাসারাঙ্গা ২/৬৪)

ফল: ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: রিশাদ হোসেন (বাংলাদেশ)

সিরিজ: বাংলাদেশ ২–১ ব্যবধানে জয়ী।