ঢাকা ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজ আমি অনার্স ফেল

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ১২:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪
  • / ১৬৪ বার পড়া হয়েছে

কাজী ফারজানা মিম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি তাঁর এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন। অবন্তিকাকে নিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশ উত্তাল, ঠিক সেই সময়ে মিডিয়ার সামনে এল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ঘটনা।

অবন্তিকার মতো শিক্ষক কর্তৃক হেনস্তার শিকার হন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১৩তম আবর্তন ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। শিক্ষক কর্তৃক কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরীক্ষায় ফেল করানো হয় বলে দাবি ফারজানা মিমের। এ নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন….

সাংবাদিক: আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী। আপনি আপনার বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযোগ করলেন?

কাজী ফারজানা মিম: আমার বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন একদিন ফোনে কাজের জন্য তাঁর ব্যক্তিগত অফিসে যেতে বলেন। সেখানেই মূলত ঘটনাটি ঘটে। সেদিন তিনি আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। কুপ্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না। প্রস্তাব দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন। আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে চান। আমি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে তাৎক্ষণিকভাবে এই আচরণের প্রতিবাদ করি। আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন, তাঁর ব্যক্তিগত অফিসে আমি কেন গেলাম? তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক। আমার কাছে শিক্ষকের মর্যাদা ছিল অন্যরকম। আমি মফস্বলে বড় হয়েছি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় পড়ালেখা করতে এসেছি। আমার বাবা–মায়ের শিক্ষা ছিল শিক্ষককে সম্মান, শ্রদ্ধা করতে হবে। শিক্ষকদের অভিভাবক মনে করতাম আমি। তাই তাঁর অফিসে দেখা করতে যাই। কিন্তু এই ঘটনার পর মনে হলো, আমি আমার অভিভাবকের কাছে নিরাপদ না।

এই ঘটনার পর আমি চেষ্টা করি বিষয়টিকে চেপে যাওয়ার। যেহেতু আমাদের দেশে নারীদের অবস্থান খুব একটা শক্ত না। আমি বললে হয়তো কেউ বিশ্বাসও করবে না। আবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা খুব একটা সহজ বিষয় ছিল না।

তবে, শুরুতে চেপে গেলেও পরে আমাকে ক্লাসে বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। আবার বিভাগের অফিস রুমে আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। এসব বিষয় যখন সবার সামনে চলে আসে, তখন আসলে চুপ থাকতে পারিনি। কারণ, আমি তখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাচ্ছিলাম। একাধিক পাঠ্য বিষয়ে ফেল হওয়ার কারণে আমার শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যায়। আমার পরিচয় তখন অর্নাস ফেল শিক্ষার্থী। যখন দেখি দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে, আমার ছাত্রজীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন মুখ বুজে না থেকে প্রতিবাদ করেছি। আমার জীবনের সিংহভাগ তো ছাত্রজীবন। সেই জীবন শেষ; তাঁরা শেষ করে দিয়েছেন। তাই আমি আমার বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করি।

কাজী ফারজানা মিম। ছবি: সংগৃহিত

সাংবাদিক: আপনার অভিযোগপত্র পাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কেমন ছিল?

কাজী ফারজানা মিম: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। এটা আমার পরিচয়। আমার পরিচয় মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন অনুযায়ী উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিই। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। সে বছর প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে আমার অভিযোগের বিষয়টি বলি। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের নিউজ করতে না করে দেন। আমি সকল জায়গায় যখন হেরে যাই, তখন খুব খারাপ লাগতে শুরু করে। আমি বেঁচে থাকার সাহসটুকু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার এই অভিযোগের বিষয়ে জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক আমাকে মূল্যায়ন করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

সাংবাদিক: এ ঘটনার কোনো প্রতিবাদ হয়েছিল কি?
কাজী ফারজানা মিম: আমার অভিযোগের পর বিচার হয়নি। উপাচার্য কোনোভাবেই আমাকে দেখা করার জন্য সময় দিতেন না। যখন এক, দুই, তিন মাস তিনি দেখা করার সময় দিলেন না। তখন আমি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাই। সেদিন আমার পাশে কেউ ছিলেন না। আমাকে নিয়ে কোনো কর্মসূচিও পালিত হয়নি। আমার জীবনে অনেক ঘাত–প্রতিঘাত এসেছে। এ ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতের কথাই বেশি উল্লেখ করব। শহীদ মিনারে প্রতিবাদ করার কারণে কয়েকটা নিউজ হয়। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রশাসনের উদ্যোগে একে একে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। প্রশাসনের গঠিত তৃতীয় দফার তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। আশা করছি, এই তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচার পাব, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

সাংবাদিক: এ ঘটনায় আপনি কি হতাশাগ্রস্ত হয়েছিলেন?
কাজী ফারজানা মিমআমি এখন অর্নাস ফেল করা একজন শিক্ষার্থী। মাঝে মাঝে ভাবি, বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ভুল করলাম কি–না। দুবছর হয়ে গেল, আমি এখনো বিচার পেলাম না। আমি কয়েকবার তদন্ত কমিটির উপস্থিতিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। দুঃখের বিষয়, একাধিক তদন্ত কমিটি হওয়ার পরও অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে আছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি। আমি আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করেছি এবং এখন পর্যন্ত প্রমাণ করেই যাচ্ছি।

এ ঘটনার পর থেকে আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই যে আমি মিডিয়ার সামনে কথা বলছি, এর ফলে আমার পরবর্তী জীবন কী হবে, এ নিয়ে সন্দিহান। আমি ভবিষ্যতে কতটুকু স্বাভাবিক থাকতে পারব, তা বলতে পারছি না। সমাজ আমাকে কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে চিন্তিত। তবুও মূল্যহীন হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে, সাহস নিয়ে বেঁচে থাকাটা শ্রেয় মনে হয় আমার কাছে।

এই ঘটনার কারণে একাডেমিক কাজে আপনি কী ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন?
কাজী ফারজানা মিম: আমার ভোগান্তি শুরু হয়, যখন আমি বিষয়টি সবার সামনে আনি। আমি সেই শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে সম্মতি দেইনি। বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম স্যারকে জানানোর পরেও সমাধান পাইনি। উল্টো আমি পরীক্ষায় ফেল করি। অভিযুক্ত শিক্ষক অন্য শিক্ষকদেরও বলেন আমাকে যেন পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয়। এ কারণে আমাকে ইনকোর্সে ৪০ নম্বরের মধ্যে ০ দেওয়া হয়। ক্লাসরুমে সেসব শিক্ষক আবার সবার সামনে আমাকে অপমানও করতেন।

যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমি যৌন হয়রানির অভিযোগ আনি, তিনি বিভাগীয় প্রধানকে নিজ দলে নিয়ে নেন। তাই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম আমাকে পরীক্ষায় কম নম্বর দেন। তিনি ৭ম, ৮ম সেমিস্টার পরীক্ষায় আমাকে ১০০–এর মধ্যে ৩ নম্বর দেন। আমি ভাইভাতে অংশগ্রহণ করি। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও ৫টা প্রশ্নের মধ্যে ৩টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিই। কিন্তু শিক্ষকেরা আমার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি পারছি না, যা বলছি সব ভুল বলছি। ভাইভাতে অংশগ্রহণের পরও আমাকে ০ দেওয়া হয়। ফলে আমি পরীক্ষায় ফেল করি। বিভাগের চেয়ারম্যান কেন, কীসের ভিত্তিতে আমাকে পরীক্ষায় ৩ নম্বর দিলেন, আমি এই বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই।

সাংবাদিক: এই সময়ে মানে এতদিন পর আপনি মিডিয়ার সামনে এলেন কেন?
কাজী ফারজানা মিম: আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে বোন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা মৃত্যুর সংবাদ শুনে সেদিন রাতে হলের বাইরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করি। সেদিন একটিবারের জন্যও বলিনি আমি ভুক্তভোগী। অবন্তিকার মতো আমার জীবনেও এমন একটা ঘটনা আছে। ইতিমধ্যে দুই থেকে আড়াই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমি স্পষ্ট বুঝে গেছি বিচার পাব না। কিন্তু অবন্তিকা যেন বিচারটা পাক। অবন্তিকার বিষয়টা সহ্য ক্ষমতার বাইরের বিষয় ছিল। এই ঘটনায় যারা দোষী, তাঁরা তো শাস্তি পাচ্ছেন না; বরং যিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তাঁকেই বা কেন জীবন দিতে হলো? এই বিষয়টা আমাকে যন্ত্রণা দিতে থাকে। যন্ত্রণা থেকে এক ধরনের জেদ কাজ করে যে, আমি অবন্তিকার হয়ে লড়াই করে যাব।

অবন্তিকার মৃত্যুর পরদিন বিকেলে মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই কর্মসূচিতে আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে এক সাংবাদিক আমার অভিযোগের কথা জানতে পারেন। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলে প্রতিবাদের জায়গা থেকে পুরো ঘটনা মিডিয়ার সামনে বলি।

সাংবাদিক: আপনি ডিবি কার্যালয় গেছেন। যে আশা নিয়ে গেছেন, তা কি পূরণ হবে?
কাজী ফারজানা মিম: আমি ডিবি কার্যালয়ে গেছি। ডিবি প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন—আমাকে নিয়ে যেন সাইবার বুলিং না হয়, সেই বিষয়টা দেখবেন। আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তাঁরা করবেন। আমি দেশের আইনের ওপর আস্থা রাখছি। আমি ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি এর সমাধান আমি পাব। এত কিছুর পরও যদি সমাধান না পাই, তবে আমার বেঁচে থাকার কোনো মূল্য থাকবে না। আমাকে হয়তো অবন্তিকা না হয় অঙ্কনের মতো জীবন দিতে হতে পারে।

সাংবাদিক: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কী আশা করেন?
কাজী ফারজানা মিম: আমি মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় পড়ালেখা করতে এসেছি। রাজবাড়ী জেলা আমার জন্মস্থান। আমরা এক ভাই, এক বোন। ঢাকায় জীবনটাকে তৈরি করতে এসেছিলাম। আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার পরিবারকে এই সমাজে বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। আবার বাবা একজন সাংবাদিক। বাবাকে এই ঘটনার কারণে অনেক কথা শুনতে হয়। আমি চাই না, আমার মতো স্বপ্ন বুকে নিয়ে যারা ঢাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে আসেন, তাঁদের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাক।

আমি চাইব, কোনো নারীকে যেন আমার মতো হেনস্তার শিকার হতে না হয়। অবন্তিকার মতো জীবন দিতে না হয়। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র যেন আম্মান সিদ্দিকীকে দেখে উৎসাহিত না হয়। আমার ভাইদের প্রতি, এটা আমার বিশেষ অনুরোধ। আমার নামে যারা বিভিন্ন জায়গায় গুজব রটাচ্ছেন, ‘আমি ভালো না, আমি মিথ্যা কথা বলছি’; তাঁদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, নিজের বিবেককে কাজে লাগান। আমাকে নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাঁদের তালিকা করে প্রক্টর স্যারকে জমা দিয়েছি। আশা করছি প্রক্টর স্যার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

সাংবাদিক: এই সময়ে এসে আপনি কী চান?
কাজী ফারজানা মিম: আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অঙ্কন, অবন্তিকার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যে বিচার আছে, সেটা হোক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাঁরা যেন শাস্তি পান। এটা আমার দাবি। আর আমাকে আমার শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অভিযুক্ত শিক্ষক ও চেয়ারম্যান স্যারের বিচার হোক। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষকেরা যেহেতু আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন, আমি চাইব—তাঁরা যেন বাংলাদেশের আইনে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে যে আইন আছে, সেই আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি হন। যাতে অন্য কেউ এই ধরনের কাজ করার সাহস না পায়। আর আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজ আমি অনার্স ফেল

আপডেট সময় ১২:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি তাঁর এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন। অবন্তিকাকে নিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশ উত্তাল, ঠিক সেই সময়ে মিডিয়ার সামনে এল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ঘটনা।

অবন্তিকার মতো শিক্ষক কর্তৃক হেনস্তার শিকার হন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১৩তম আবর্তন ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। শিক্ষক কর্তৃক কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরীক্ষায় ফেল করানো হয় বলে দাবি ফারজানা মিমের। এ নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন….

সাংবাদিক: আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী। আপনি আপনার বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযোগ করলেন?

কাজী ফারজানা মিম: আমার বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন একদিন ফোনে কাজের জন্য তাঁর ব্যক্তিগত অফিসে যেতে বলেন। সেখানেই মূলত ঘটনাটি ঘটে। সেদিন তিনি আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। কুপ্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না। প্রস্তাব দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন। আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে চান। আমি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে তাৎক্ষণিকভাবে এই আচরণের প্রতিবাদ করি। আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন, তাঁর ব্যক্তিগত অফিসে আমি কেন গেলাম? তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক। আমার কাছে শিক্ষকের মর্যাদা ছিল অন্যরকম। আমি মফস্বলে বড় হয়েছি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় পড়ালেখা করতে এসেছি। আমার বাবা–মায়ের শিক্ষা ছিল শিক্ষককে সম্মান, শ্রদ্ধা করতে হবে। শিক্ষকদের অভিভাবক মনে করতাম আমি। তাই তাঁর অফিসে দেখা করতে যাই। কিন্তু এই ঘটনার পর মনে হলো, আমি আমার অভিভাবকের কাছে নিরাপদ না।

এই ঘটনার পর আমি চেষ্টা করি বিষয়টিকে চেপে যাওয়ার। যেহেতু আমাদের দেশে নারীদের অবস্থান খুব একটা শক্ত না। আমি বললে হয়তো কেউ বিশ্বাসও করবে না। আবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা খুব একটা সহজ বিষয় ছিল না।

তবে, শুরুতে চেপে গেলেও পরে আমাকে ক্লাসে বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। আবার বিভাগের অফিস রুমে আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। এসব বিষয় যখন সবার সামনে চলে আসে, তখন আসলে চুপ থাকতে পারিনি। কারণ, আমি তখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাচ্ছিলাম। একাধিক পাঠ্য বিষয়ে ফেল হওয়ার কারণে আমার শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যায়। আমার পরিচয় তখন অর্নাস ফেল শিক্ষার্থী। যখন দেখি দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে, আমার ছাত্রজীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন মুখ বুজে না থেকে প্রতিবাদ করেছি। আমার জীবনের সিংহভাগ তো ছাত্রজীবন। সেই জীবন শেষ; তাঁরা শেষ করে দিয়েছেন। তাই আমি আমার বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করি।

কাজী ফারজানা মিম। ছবি: সংগৃহিত

সাংবাদিক: আপনার অভিযোগপত্র পাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কেমন ছিল?

কাজী ফারজানা মিম: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। এটা আমার পরিচয়। আমার পরিচয় মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন অনুযায়ী উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিই। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। সে বছর প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে আমার অভিযোগের বিষয়টি বলি। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের নিউজ করতে না করে দেন। আমি সকল জায়গায় যখন হেরে যাই, তখন খুব খারাপ লাগতে শুরু করে। আমি বেঁচে থাকার সাহসটুকু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার এই অভিযোগের বিষয়ে জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক আমাকে মূল্যায়ন করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

সাংবাদিক: এ ঘটনার কোনো প্রতিবাদ হয়েছিল কি?
কাজী ফারজানা মিম: আমার অভিযোগের পর বিচার হয়নি। উপাচার্য কোনোভাবেই আমাকে দেখা করার জন্য সময় দিতেন না। যখন এক, দুই, তিন মাস তিনি দেখা করার সময় দিলেন না। তখন আমি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাই। সেদিন আমার পাশে কেউ ছিলেন না। আমাকে নিয়ে কোনো কর্মসূচিও পালিত হয়নি। আমার জীবনে অনেক ঘাত–প্রতিঘাত এসেছে। এ ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতের কথাই বেশি উল্লেখ করব। শহীদ মিনারে প্রতিবাদ করার কারণে কয়েকটা নিউজ হয়। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রশাসনের উদ্যোগে একে একে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। প্রশাসনের গঠিত তৃতীয় দফার তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। আশা করছি, এই তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচার পাব, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

সাংবাদিক: এ ঘটনায় আপনি কি হতাশাগ্রস্ত হয়েছিলেন?
কাজী ফারজানা মিমআমি এখন অর্নাস ফেল করা একজন শিক্ষার্থী। মাঝে মাঝে ভাবি, বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ভুল করলাম কি–না। দুবছর হয়ে গেল, আমি এখনো বিচার পেলাম না। আমি কয়েকবার তদন্ত কমিটির উপস্থিতিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। দুঃখের বিষয়, একাধিক তদন্ত কমিটি হওয়ার পরও অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে আছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি। আমি আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করেছি এবং এখন পর্যন্ত প্রমাণ করেই যাচ্ছি।

এ ঘটনার পর থেকে আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই যে আমি মিডিয়ার সামনে কথা বলছি, এর ফলে আমার পরবর্তী জীবন কী হবে, এ নিয়ে সন্দিহান। আমি ভবিষ্যতে কতটুকু স্বাভাবিক থাকতে পারব, তা বলতে পারছি না। সমাজ আমাকে কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে চিন্তিত। তবুও মূল্যহীন হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে, সাহস নিয়ে বেঁচে থাকাটা শ্রেয় মনে হয় আমার কাছে।

এই ঘটনার কারণে একাডেমিক কাজে আপনি কী ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন?
কাজী ফারজানা মিম: আমার ভোগান্তি শুরু হয়, যখন আমি বিষয়টি সবার সামনে আনি। আমি সেই শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে সম্মতি দেইনি। বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম স্যারকে জানানোর পরেও সমাধান পাইনি। উল্টো আমি পরীক্ষায় ফেল করি। অভিযুক্ত শিক্ষক অন্য শিক্ষকদেরও বলেন আমাকে যেন পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয়। এ কারণে আমাকে ইনকোর্সে ৪০ নম্বরের মধ্যে ০ দেওয়া হয়। ক্লাসরুমে সেসব শিক্ষক আবার সবার সামনে আমাকে অপমানও করতেন।

যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমি যৌন হয়রানির অভিযোগ আনি, তিনি বিভাগীয় প্রধানকে নিজ দলে নিয়ে নেন। তাই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম আমাকে পরীক্ষায় কম নম্বর দেন। তিনি ৭ম, ৮ম সেমিস্টার পরীক্ষায় আমাকে ১০০–এর মধ্যে ৩ নম্বর দেন। আমি ভাইভাতে অংশগ্রহণ করি। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও ৫টা প্রশ্নের মধ্যে ৩টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিই। কিন্তু শিক্ষকেরা আমার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি পারছি না, যা বলছি সব ভুল বলছি। ভাইভাতে অংশগ্রহণের পরও আমাকে ০ দেওয়া হয়। ফলে আমি পরীক্ষায় ফেল করি। বিভাগের চেয়ারম্যান কেন, কীসের ভিত্তিতে আমাকে পরীক্ষায় ৩ নম্বর দিলেন, আমি এই বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই।

সাংবাদিক: এই সময়ে মানে এতদিন পর আপনি মিডিয়ার সামনে এলেন কেন?
কাজী ফারজানা মিম: আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে বোন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা মৃত্যুর সংবাদ শুনে সেদিন রাতে হলের বাইরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করি। সেদিন একটিবারের জন্যও বলিনি আমি ভুক্তভোগী। অবন্তিকার মতো আমার জীবনেও এমন একটা ঘটনা আছে। ইতিমধ্যে দুই থেকে আড়াই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমি স্পষ্ট বুঝে গেছি বিচার পাব না। কিন্তু অবন্তিকা যেন বিচারটা পাক। অবন্তিকার বিষয়টা সহ্য ক্ষমতার বাইরের বিষয় ছিল। এই ঘটনায় যারা দোষী, তাঁরা তো শাস্তি পাচ্ছেন না; বরং যিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তাঁকেই বা কেন জীবন দিতে হলো? এই বিষয়টা আমাকে যন্ত্রণা দিতে থাকে। যন্ত্রণা থেকে এক ধরনের জেদ কাজ করে যে, আমি অবন্তিকার হয়ে লড়াই করে যাব।

অবন্তিকার মৃত্যুর পরদিন বিকেলে মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই কর্মসূচিতে আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে এক সাংবাদিক আমার অভিযোগের কথা জানতে পারেন। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলে প্রতিবাদের জায়গা থেকে পুরো ঘটনা মিডিয়ার সামনে বলি।

সাংবাদিক: আপনি ডিবি কার্যালয় গেছেন। যে আশা নিয়ে গেছেন, তা কি পূরণ হবে?
কাজী ফারজানা মিম: আমি ডিবি কার্যালয়ে গেছি। ডিবি প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন—আমাকে নিয়ে যেন সাইবার বুলিং না হয়, সেই বিষয়টা দেখবেন। আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তাঁরা করবেন। আমি দেশের আইনের ওপর আস্থা রাখছি। আমি ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি এর সমাধান আমি পাব। এত কিছুর পরও যদি সমাধান না পাই, তবে আমার বেঁচে থাকার কোনো মূল্য থাকবে না। আমাকে হয়তো অবন্তিকা না হয় অঙ্কনের মতো জীবন দিতে হতে পারে।

সাংবাদিক: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কী আশা করেন?
কাজী ফারজানা মিম: আমি মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় পড়ালেখা করতে এসেছি। রাজবাড়ী জেলা আমার জন্মস্থান। আমরা এক ভাই, এক বোন। ঢাকায় জীবনটাকে তৈরি করতে এসেছিলাম। আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার পরিবারকে এই সমাজে বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। আবার বাবা একজন সাংবাদিক। বাবাকে এই ঘটনার কারণে অনেক কথা শুনতে হয়। আমি চাই না, আমার মতো স্বপ্ন বুকে নিয়ে যারা ঢাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে আসেন, তাঁদের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাক।

আমি চাইব, কোনো নারীকে যেন আমার মতো হেনস্তার শিকার হতে না হয়। অবন্তিকার মতো জীবন দিতে না হয়। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র যেন আম্মান সিদ্দিকীকে দেখে উৎসাহিত না হয়। আমার ভাইদের প্রতি, এটা আমার বিশেষ অনুরোধ। আমার নামে যারা বিভিন্ন জায়গায় গুজব রটাচ্ছেন, ‘আমি ভালো না, আমি মিথ্যা কথা বলছি’; তাঁদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, নিজের বিবেককে কাজে লাগান। আমাকে নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাঁদের তালিকা করে প্রক্টর স্যারকে জমা দিয়েছি। আশা করছি প্রক্টর স্যার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

সাংবাদিক: এই সময়ে এসে আপনি কী চান?
কাজী ফারজানা মিম: আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অঙ্কন, অবন্তিকার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যে বিচার আছে, সেটা হোক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাঁরা যেন শাস্তি পান। এটা আমার দাবি। আর আমাকে আমার শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অভিযুক্ত শিক্ষক ও চেয়ারম্যান স্যারের বিচার হোক। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষকেরা যেহেতু আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন, আমি চাইব—তাঁরা যেন বাংলাদেশের আইনে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে যে আইন আছে, সেই আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি হন। যাতে অন্য কেউ এই ধরনের কাজ করার সাহস না পায়। আর আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে।