ঢাকা ১২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
একজন ক্রেতা বলেন, ‘শয়তান এই রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের হাতে সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, শয়তান বলছে, আমি ছুটি নিলাম, তোমরা এখন শয়তানিটা চালাও।’

‘ব্যবসায়ীদের কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে ছুটিতে গেছে শয়তান’

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ০২:০৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪
  • / ৩৬০ বার পড়া হয়েছে

নানা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সরকারের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি যেন থামছেই না। নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে ক্ষোভ উগরে উঠেছে ক্রেতাদের মুখে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে খুচরা বাজারে পণ্যের দামে কোনো মিল না পেয়ে কারওয়ান বাজারে মুরগি কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, ‘শয়তান এই রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের হাতে সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, শয়তান বলছে, আমি ছুটি নিলাম, তোমরা এখন শয়তানিটা চালাও।’
 
এ সময় আরেক ক্রেতা জানান, ব্যবসায়ীরা যে দাম চায় সেই দামেই পণ্য কিনতে বাধ্য ভোক্তারা। কারণ নামমাত্র মনিটরিং হচ্ছে। হয়তো একদিন আসে, কিছুক্ষণের জন্য দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারপরে সেই আগের অন্যায্য দামে ফেরত যায় ব্যবসায়ীরা।
 
বেঁধে দেয়া দামে মুরগি বিক্রি কেন হচ্ছে না জানতে বিক্রেতারা জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পাইকারি পর্যায়েই মিলছে না মুরগি। ফলে সেই নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানায়, বাচ্চার দাম ৫২ টাকা হলে এক কেজি ব্রয়লার উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। অথচ কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসেবে উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সেই হিসাব ধরে খামার পর্যায়ে ব্রয়লারের মূল্য ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা নির্ধারণ করেছে বিপিএ। খামারিরা বলছেন, অযৌক্তিক দাম চাপিয়ে দেয়ায় বাজারে কার্যকর হচ্ছে না সরকারি সিদ্ধান্ত।
 
শুধু মুরগির বাজার নয়, রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমাতে পেঁয়াজ, ছোলা, গরুর মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তবে সেই বেঁধে দেয়া দামের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। ফলে চরম অব্যবস্থাপনায় হরহামেশাই খুচরা বিক্রেতাদের কটুকথার শিকার ও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত ভোক্তারা।
 
যদিও রমজানে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে মাঠে কাজ করছে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বেগুনের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ইফতারে বেগুনি খাওয়া বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন বুধবার (১৩ মার্চ)। এমনকি অধিদপ্তরের বিভিন্ন অভিযানের সময়েও বাজারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দামের তারতম্য দেখতে পাওয়া যায়।
 
এমনকি খোদ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর হুঁশিয়ারিও বাজারে কোনো পাত্তা পায় না এমন অবস্থা। শেষমেষ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কাঁচাবাজারে বিক্রেতাদের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়ে বরং সুপারশপগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তাদের পণ্য কেনার পরামর্শ দেন তিনি।
 
সর্বশেষ গত সপ্তাহেই বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর চালের বাজার স্থিতিশীল বলে ঘোষণা দেয়ার পর, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে গেছে চালের দাম। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা আর চিকনে বেড়েছে ৮ টাকা পর্যন্ত।
 
এ বিষয়ে ক্রেতারা বলেন, বাজার সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। সিন্ডিকেট নিয়ে মন্ত্রীদের কথা না বলাই উচিত। তারা কোনো কিছু নিয়ে কথা বললে, সেটির দাম কমার বদলে আরও বেড়ে যায়। মন্ত্রীদের কথা ও কাজের মিল থাকতে হবে। না হলে বাজারে স্বস্তি ফিরবে না বলে জানান তিনি।
 
অন্যদিকে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সরকারের বেঁধে দেয়া ২৯টি পণ্যের দামকে অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত দাবি করে কৃষি বিপণন অধিদফতরের জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি (বিডিএমএস)। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদফতরকেই বেঁধে দেয়া দরে পণ্য বিক্রির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রয়োজনে অধিদফতরকে বাজারে দোকান বসাতে জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সমিতি।
 
দাম নির্ধারণের আগে সরকার কোনও আলোচনা করেনি অভিযোগ তুলে এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে দাম নির্ধারণ করে লাভ নেই। উৎপাদক, পাইকারি, খুচরা সব পর্যায়েই মনিটরিং বাড়াতে হবে। বিস্তরভাবে না দেখে, শুধু খুচরা পর্যায়ে দাম বেশির অভিযোগ তোলা অযৌক্তিক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
 
এ পরিস্থিতিতে তাই বাজার অব্যবস্থাপণার পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের আশা-হতাশার চিত্র দেখতে পাওয়া যায় রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

একজন ক্রেতা বলেন, ‘শয়তান এই রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের হাতে সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, শয়তান বলছে, আমি ছুটি নিলাম, তোমরা এখন শয়তানিটা চালাও।’

‘ব্যবসায়ীদের কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে ছুটিতে গেছে শয়তান’

আপডেট সময় ০২:০৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

নানা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সরকারের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি যেন থামছেই না। নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে ক্ষোভ উগরে উঠেছে ক্রেতাদের মুখে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে খুচরা বাজারে পণ্যের দামে কোনো মিল না পেয়ে কারওয়ান বাজারে মুরগি কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, ‘শয়তান এই রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের হাতে সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, শয়তান বলছে, আমি ছুটি নিলাম, তোমরা এখন শয়তানিটা চালাও।’
 
এ সময় আরেক ক্রেতা জানান, ব্যবসায়ীরা যে দাম চায় সেই দামেই পণ্য কিনতে বাধ্য ভোক্তারা। কারণ নামমাত্র মনিটরিং হচ্ছে। হয়তো একদিন আসে, কিছুক্ষণের জন্য দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারপরে সেই আগের অন্যায্য দামে ফেরত যায় ব্যবসায়ীরা।
 
বেঁধে দেয়া দামে মুরগি বিক্রি কেন হচ্ছে না জানতে বিক্রেতারা জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পাইকারি পর্যায়েই মিলছে না মুরগি। ফলে সেই নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানায়, বাচ্চার দাম ৫২ টাকা হলে এক কেজি ব্রয়লার উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। অথচ কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসেবে উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সেই হিসাব ধরে খামার পর্যায়ে ব্রয়লারের মূল্য ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা নির্ধারণ করেছে বিপিএ। খামারিরা বলছেন, অযৌক্তিক দাম চাপিয়ে দেয়ায় বাজারে কার্যকর হচ্ছে না সরকারি সিদ্ধান্ত।
 
শুধু মুরগির বাজার নয়, রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমাতে পেঁয়াজ, ছোলা, গরুর মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তবে সেই বেঁধে দেয়া দামের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। ফলে চরম অব্যবস্থাপনায় হরহামেশাই খুচরা বিক্রেতাদের কটুকথার শিকার ও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত ভোক্তারা।
 
যদিও রমজানে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে মাঠে কাজ করছে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বেগুনের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ইফতারে বেগুনি খাওয়া বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন বুধবার (১৩ মার্চ)। এমনকি অধিদপ্তরের বিভিন্ন অভিযানের সময়েও বাজারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দামের তারতম্য দেখতে পাওয়া যায়।
 
এমনকি খোদ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর হুঁশিয়ারিও বাজারে কোনো পাত্তা পায় না এমন অবস্থা। শেষমেষ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কাঁচাবাজারে বিক্রেতাদের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়ে বরং সুপারশপগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তাদের পণ্য কেনার পরামর্শ দেন তিনি।
 
সর্বশেষ গত সপ্তাহেই বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর চালের বাজার স্থিতিশীল বলে ঘোষণা দেয়ার পর, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে গেছে চালের দাম। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা আর চিকনে বেড়েছে ৮ টাকা পর্যন্ত।
 
এ বিষয়ে ক্রেতারা বলেন, বাজার সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। সিন্ডিকেট নিয়ে মন্ত্রীদের কথা না বলাই উচিত। তারা কোনো কিছু নিয়ে কথা বললে, সেটির দাম কমার বদলে আরও বেড়ে যায়। মন্ত্রীদের কথা ও কাজের মিল থাকতে হবে। না হলে বাজারে স্বস্তি ফিরবে না বলে জানান তিনি।
 
অন্যদিকে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সরকারের বেঁধে দেয়া ২৯টি পণ্যের দামকে অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত দাবি করে কৃষি বিপণন অধিদফতরের জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি (বিডিএমএস)। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদফতরকেই বেঁধে দেয়া দরে পণ্য বিক্রির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রয়োজনে অধিদফতরকে বাজারে দোকান বসাতে জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সমিতি।
 
দাম নির্ধারণের আগে সরকার কোনও আলোচনা করেনি অভিযোগ তুলে এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে দাম নির্ধারণ করে লাভ নেই। উৎপাদক, পাইকারি, খুচরা সব পর্যায়েই মনিটরিং বাড়াতে হবে। বিস্তরভাবে না দেখে, শুধু খুচরা পর্যায়ে দাম বেশির অভিযোগ তোলা অযৌক্তিক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
 
এ পরিস্থিতিতে তাই বাজার অব্যবস্থাপণার পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের আশা-হতাশার চিত্র দেখতে পাওয়া যায় রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে।