ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০টি দেশের মধ্যে মৃত্যুতে প্রথম ‘বাংলাদেশ’
![](https://newssitedesign.com/newspaperpro/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় ১২:০৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
- / ৯৫ বার পড়া হয়েছে
বৈশ্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও সে পথেই হাঁটছে। এশিয়ার কয়েকটি দেশসহ বিশ্বের মোট ১০টি দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এই অবস্থার কথা জানা গেছে। বাংলাদেশসহ দেশগুলো হচ্ছে, ব্রাজিল, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিন ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ২০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। যা বিশে^র ১০ টি দেশের মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যার দিকে বাংলাদেশের অবস্থান ‘তৃতীয়’। এর আগের বছর ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওই ১০টি ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল মৃত্যুতে ‘প্রথম’। সে বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১৭০৫জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, এ বছর ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকার তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নির্মূলে করণীয় নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫০০ জন। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, এ বছর ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকার তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে দশমিক ৫৩ জন মারা গেছেন। একই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৫৯০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা শতকরা শুন্য দশমিক ০৪ শতাংশ। অর্থাৎ ব্রাজিলের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেশি ১০ গুণ, ভারতের তুলনায় বেশি ৬ গুণ। একই বছর ভারতের ৯৪ হাজার ১৯৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯১ জনের। মৃত্যুর হার শুন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে ৮৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মারা যান ৯ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং ছয় জন মারা গেছেন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ এবং মৃত্যু তিনজন, মার্চে আক্রান্ত ১১১ জন এবং কেউ মারা যাননি।
চলতি বছরের গতকাল ২০ মার্চ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৫৯৯ জন। এর মধ্যে এক হাজার ১৩ জন পুরুষ এবং ৫৮৬ জন নারী। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২১ জন। মৃতদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং জন ১১ জন নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত এক জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৫২৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরে ১৮ মার্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন এবং ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ জন।
বিভাগ ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৫৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে ৯৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮, রংপুর বিভাগে ১৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজারের মত হলেও মৃত্যু হয়েছিল ২০০ এর নিচে। গত বছর ঢাকা শহরে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু মৃত্যু ১ হাজার ৭০০ এর বেশি।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ‘যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার’ অভিযোগ এনেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার ভূতের গলি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বৈশি^ক পরিসংখ্যান
বিগত ২০২৩ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯জন। মারা যায় ১৭০৫জন। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৫৯০ জন। মারা যায় ১০৭৯জন। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৪ হাজার ১৯৮জন। মারা যায় ৯১জন। মালয়েশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৪১৮জন। মারা যায় ৯৬জন। ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার ৯৬৩জন। মারা যায় ৪৩০জন। থাইল্যান্ডে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ৫০ হাজার ৮০৮জন। মারা যায় ১৬৫জন। ফিলিপাইনে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩জন। মারা যায়, ৬৫৭জন। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত হয় ৯৯৪৯জন। মারা যায়, ০২জন। ভিয়েতনামে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১৯জন। মারা যায় ৫৯জন। শ্রীলংকায় আক্রান্ত হয় ৮৯ হাজার ৭৯৯জন। মারা যায় ৪৭জন।
ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৪
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বাইরে দুই জন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বাইরে ছয় জন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এক জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুই জন রয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের ১২ জন পুরুষ এবং দুই জন নারী রয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় মোট সাত ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন, চলতি বছরে মোট এক হাজার ৪৯৮ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।