আওয়ামী লীগ এমপিকে ‘হারামজাদা’ বললেন আওয়ামী লীগ নেতা
- আপডেট সময় ১১:৪২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
- / ১৯৩ বার পড়া হয়েছে
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এ বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সোমবার (১৩ মে) বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ এই বর্ধিত সভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় তিনি এসব বক্তব্য দেন।
জানা যায়, সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অন্যদের মধ্যে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক পান ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী সারু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ যুবলীগ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী নৌকার পক্ষে ভোট না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে ভোট করেন।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এম মেজবাহ উদ্দিনসহ দলের কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী ভোট করেন নৌকার পক্ষে। ভোটে বড় ব্যবধানে নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন। পরবর্তীতে গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। এই নির্বাচনে দেখা যায় সারুসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বেগম রোকেয়া আজাদের পক্ষে। সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেলের পক্ষে ভোট করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বারের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ তিনিও প্রার্থী ছিলেন। তার পক্ষে ভোট করেন রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন এবং ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যানসহ দলের একটি অংশ। আবদুল ওয়াহেদ ভোটে পরাজিত হন।
রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী সারু। ছবি: সংগৃহীত
এসব ক্ষোভ ও দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে দলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে মনে করে সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ জরুরি বর্ধিতসভা আহ্বান করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ওই জরুরি বর্ধিতসভা ও নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম নিজাম। ওই সভায় উপস্থিত হয়ে ড. আশ্রাফ আলী সারুর তার দেওয়া ৫ মিনিটের অধিক একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে দেখা যায়, তিনি বলেন ‘বর্তমান এমপি আবদুল্লাহ তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। সে একটা হারামজাদা, তিনি ইমোশনাল হয়ে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে তার পক্ষে ভোট করেছিলেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ সম্পর্কে বলেন, ‘একটা অথর্ব অসৎ ওয়াহেদ মুরাদকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে’। এই নিয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন।
ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে ড. আশ্রাফ আলী সারু আরও বলেন, দলকে আমি সবসময় আর্থিক সহযোগিতা করি। আমি দল থেকে কিছুই নেইনি। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ উপস্থিত ছিলেন না। ওই বর্ধিত সভায় সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেন।
ভিডিও ভাইরাল হওয়া সম্পর্কে ড. আশ্রাফ আলী সারু বলেন, দলীয় সভায় দলের উন্নয়ন ও ঐক্যের স্বার্থে কিছু কথা বলেছি। আমারও দুর্বলতা থাকতে পারে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট না করে সাবেক এমপি আবদুল্লাহর পক্ষে ছিলাম। পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে ভোট না করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রোকেয়া আজাদের পক্ষে ভোট করেছি। তিনিও আওয়ামী পরিবারের লোক। এখন আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ এ বিষয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্যক্রম চলছিল। সভা সমাবেশ না হওয়ায় যে যার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে একজোট হয়ে কাজ করতে পারেননি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি দলের একক প্রার্থী হয়েও জয়ী হতে পারিনি। এতে বর্ধিত সভায় দলের সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে যারা ভোট করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। যে বা যারাই দলবিরোধী কাজ করবে সে যেই হোক দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে কেউ কোনো বক্তব্য দিলে সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে দলের অধিকাংশের মতো একটি রেজুলেশন করে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে অবহিত করা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ আল মামুন আশ্রাফ আলী সারুর ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বক্তব্য তিনি শুনেছেন বলে স্বীকার করে বলেন, সারু নিজ থেকে আমার ভোট করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় যেতে খরচও নিয়েছেন। গালি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, শিষ্টাচার বহির্ভূত এমন বক্তব্য সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।