ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাস্যরসে পরিণত হয়েছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য : ফখরুল

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:১২:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • / ১৬০ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট:

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেশের মানুষের কাছে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গণঅধিকার পরিষদ (একাংশ) আয়োজিত ‘গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও রোহিঙ্গা সংকট: শহীদ আবরার ফাহাদের প্রেরণা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া।

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আওয়ামী লীগের ভেতর যে কজন নেতা পড়াশোনা জানা মানুষ, তাদের মধ্যে তিনি একজন। ইউরেনিয়াম কী জিনিস, তা তিনি জানলেন না। এটার জন্য বিশেষ কোনো জ্ঞান প্রয়োজন হয় না। এর আগেও তিনি তলে তলে কথা উচ্চারণ করে মনিবের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। মনে হয় তার মনিব (শেখ হাসিনা) ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এজন্য তিনি ভাবলেন তার চেয়ে বেশি কথা বলতে হবে। এটাই হয় এই ধরনের দল ও সরকারগুলোর মধ্যে। তোষামোদী এমন পর্যায়ে চলে যায়; তখন তা হাস্যরসে পরিণত হয়। আমার এক জুনিয়র ফ্রেন্ড (বন্ধু) ওবায়দুল কাদেরের এসব কথার প্রতিবাদ করতে নিষেধ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ তো এখন বিনোদনের ব্যাপার হয়ে গেছে। এটা এন্টারটেইনমেন্ট প্রোডাক্ট।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলকে যে সংলাপে ডেকেছিল, ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী সুন্দর সুন্দর কথা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। তখন তার কথায় বিশ্বাস করা বিএনপিসহ বিরোধী দলের ভুল ছিল।’

২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘১৫১ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাশ করানো হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে ২ শতাংশ ভোটও পড়েনি। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার কথায় কিছুটা ভুল করে হলেও বিশ্বাস করে আমরা সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে তিনি চমৎকার কথা বললেন। আমি কথা দিচ্ছি আপনাদেরকে- ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। আপনাদের কারও ওপর কোনো নির্যাতন হবে না। আপনারা ক্যাম্পেইন করবেন, যিনি নির্বাচিত হয়ে আসবে; তাকে আমরা নির্বাচিত ঘোষণা করব। সেই সময় আমরা পাঁচটা দিনও ক্যাম্পেইন করতে পারিনি। ওই সময় প্রথম ভিকটিম হয়েছিলাম আমি।

আমার নির্বাচনি এলাকায় যাওয়ার পর আমার গাড়ি ভাঙচুর করে দিয়েছিল।
তারপর পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী সরকারের পক্ষে নেমে গেল। তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে হবে উন্নয়নের স্বার্থে। নির্বাচনে যদি এমন হয় কারও সঙ্গে আপনাকে আমাকে সবকিছু করতে হবে, সেটা নির্বাচন হতে পারে না। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আসল চেহারা। এখন আজকে আবার যখন সামনে নির্বাচন আসছে; একই কায়দায় আবার বলতে শুরু করেছেন (প্রধানমন্ত্রী) আমার অধীনে নির্বাচন হবে ওটাই হচ্ছে সংবিধান।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধানকে তোমরা কাটছাঁট করে আর কিছুই রাখো নাই। সংবিধানের কোথায় লেখা আছে এটাকে আর বদলানো যাবে না। পৃথিবীর কোনো সংবিধান নাই, যেটাকে বদলানো যাবে না। যে কোনো পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি থাকলে তাকে বদলানো যাবে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) সংবিধান হচ্ছে তাদের পরিবার, গোটা গোষ্ঠিকে সরকারি টাকায় নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের যে বাড়িঘর হবে, সেখানে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট থাকবে। আর্মি থাকবে তাদেরকে পাহারা দিবে। এটাই হচ্ছে তাদের সংবিধান। তারা যাহা বলিবে তাই করতে হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চরিত্রটাই হচ্ছে ভিন্ন মতকে সহ্য করতে পারে না। আর বলবে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে ভিন্নমতকে সমর্থন করা। ভিন্নমতের সঙ্গে একমত হতে না পারলে ভিন্নমতকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে তুমি তোমার প্রাণ দিবে। সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। সুতরাং এরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে সেটা হলো ভূতের মুখে রাম নাম। আজকে এমন একটা অবস্থানে চলে গেছে পরিস্থিতি, যেখানে বেশি কথা বলার প্রয়োজন হয় না। আমাদের ঢাকা শহরের লোকজনের চেয়ে সরকারের প্রতি গ্রামের লোকজন বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষরা আর এক মুহূর্ত এই সরকারকে দেখতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা গণতন্ত্রসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এদেশের আত্মা মানুষের কথা বলার অধিকার আওয়ামী লীগ পুরাপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের কথা হলো- ভোট আবার কী? আমার ভোট আমি দিব, তোমার ভোটও আমি দিব। তাই হচ্ছে তাদের ভোট।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে আলাদাভাবে আহ্বান জানিয়েছি, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। কে ক্ষমতায় যাবে, কে যাবে না এই মুহূর্তে আমরা এটা ভাববো না। আমরা ভাববো দেশকে কিভাবে রক্ষা করবো। এখন যে ভয়াবহ দানব, তার হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে হবে। শহীদ আবরারের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই দানবের মোকাবিলা করতে পারলেই শহীদ আবরারের আত্মা শান্তি পাবে।

সভায় রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

হাস্যরসে পরিণত হয়েছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য : ফখরুল

আপডেট সময় ১০:১২:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩

ডেস্ক রিপোর্ট:

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেশের মানুষের কাছে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গণঅধিকার পরিষদ (একাংশ) আয়োজিত ‘গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও রোহিঙ্গা সংকট: শহীদ আবরার ফাহাদের প্রেরণা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া।

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আওয়ামী লীগের ভেতর যে কজন নেতা পড়াশোনা জানা মানুষ, তাদের মধ্যে তিনি একজন। ইউরেনিয়াম কী জিনিস, তা তিনি জানলেন না। এটার জন্য বিশেষ কোনো জ্ঞান প্রয়োজন হয় না। এর আগেও তিনি তলে তলে কথা উচ্চারণ করে মনিবের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। মনে হয় তার মনিব (শেখ হাসিনা) ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এজন্য তিনি ভাবলেন তার চেয়ে বেশি কথা বলতে হবে। এটাই হয় এই ধরনের দল ও সরকারগুলোর মধ্যে। তোষামোদী এমন পর্যায়ে চলে যায়; তখন তা হাস্যরসে পরিণত হয়। আমার এক জুনিয়র ফ্রেন্ড (বন্ধু) ওবায়দুল কাদেরের এসব কথার প্রতিবাদ করতে নিষেধ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ তো এখন বিনোদনের ব্যাপার হয়ে গেছে। এটা এন্টারটেইনমেন্ট প্রোডাক্ট।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলকে যে সংলাপে ডেকেছিল, ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী সুন্দর সুন্দর কথা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। তখন তার কথায় বিশ্বাস করা বিএনপিসহ বিরোধী দলের ভুল ছিল।’

২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘১৫১ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাশ করানো হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে ২ শতাংশ ভোটও পড়েনি। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার কথায় কিছুটা ভুল করে হলেও বিশ্বাস করে আমরা সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে তিনি চমৎকার কথা বললেন। আমি কথা দিচ্ছি আপনাদেরকে- ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। আপনাদের কারও ওপর কোনো নির্যাতন হবে না। আপনারা ক্যাম্পেইন করবেন, যিনি নির্বাচিত হয়ে আসবে; তাকে আমরা নির্বাচিত ঘোষণা করব। সেই সময় আমরা পাঁচটা দিনও ক্যাম্পেইন করতে পারিনি। ওই সময় প্রথম ভিকটিম হয়েছিলাম আমি।

আমার নির্বাচনি এলাকায় যাওয়ার পর আমার গাড়ি ভাঙচুর করে দিয়েছিল।
তারপর পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী সরকারের পক্ষে নেমে গেল। তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে হবে উন্নয়নের স্বার্থে। নির্বাচনে যদি এমন হয় কারও সঙ্গে আপনাকে আমাকে সবকিছু করতে হবে, সেটা নির্বাচন হতে পারে না। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আসল চেহারা। এখন আজকে আবার যখন সামনে নির্বাচন আসছে; একই কায়দায় আবার বলতে শুরু করেছেন (প্রধানমন্ত্রী) আমার অধীনে নির্বাচন হবে ওটাই হচ্ছে সংবিধান।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধানকে তোমরা কাটছাঁট করে আর কিছুই রাখো নাই। সংবিধানের কোথায় লেখা আছে এটাকে আর বদলানো যাবে না। পৃথিবীর কোনো সংবিধান নাই, যেটাকে বদলানো যাবে না। যে কোনো পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি থাকলে তাকে বদলানো যাবে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) সংবিধান হচ্ছে তাদের পরিবার, গোটা গোষ্ঠিকে সরকারি টাকায় নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের যে বাড়িঘর হবে, সেখানে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট থাকবে। আর্মি থাকবে তাদেরকে পাহারা দিবে। এটাই হচ্ছে তাদের সংবিধান। তারা যাহা বলিবে তাই করতে হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চরিত্রটাই হচ্ছে ভিন্ন মতকে সহ্য করতে পারে না। আর বলবে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে ভিন্নমতকে সমর্থন করা। ভিন্নমতের সঙ্গে একমত হতে না পারলে ভিন্নমতকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে তুমি তোমার প্রাণ দিবে। সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। সুতরাং এরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে সেটা হলো ভূতের মুখে রাম নাম। আজকে এমন একটা অবস্থানে চলে গেছে পরিস্থিতি, যেখানে বেশি কথা বলার প্রয়োজন হয় না। আমাদের ঢাকা শহরের লোকজনের চেয়ে সরকারের প্রতি গ্রামের লোকজন বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষরা আর এক মুহূর্ত এই সরকারকে দেখতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা গণতন্ত্রসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এদেশের আত্মা মানুষের কথা বলার অধিকার আওয়ামী লীগ পুরাপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের কথা হলো- ভোট আবার কী? আমার ভোট আমি দিব, তোমার ভোটও আমি দিব। তাই হচ্ছে তাদের ভোট।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে আলাদাভাবে আহ্বান জানিয়েছি, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। কে ক্ষমতায় যাবে, কে যাবে না এই মুহূর্তে আমরা এটা ভাববো না। আমরা ভাববো দেশকে কিভাবে রক্ষা করবো। এখন যে ভয়াবহ দানব, তার হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে হবে। শহীদ আবরারের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই দানবের মোকাবিলা করতে পারলেই শহীদ আবরারের আত্মা শান্তি পাবে।

সভায় রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।