খলিলের মাংস বিক্রির পর
বাংলাদেশকে ৪৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস দিতে চায় ব্রাজিল
- আপডেট সময় ০৪:২১:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪
- / ২৬৬ বার পড়া হয়েছে
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানিতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার দেশটি প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (৪৯৫ টাকা) বাংলাদেশকে দিতে চায়। আগামী রোববার ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। তখন বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে কূটনীতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
গত বছর বিশ্বের ১২৬টি দেশে গরুর মাংস রপ্তানি করেছিল ব্রাজিল। সে বছর ব্রাজিল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ।
ঢাকা ও ব্রাজিলের কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, মাউরো ভিয়েরার সফরকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। এ সময় তিনি গরুর মাংস রপ্তানির বিষয়টি আলোচনায় তুলেছেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সে দেশের গরুর মাংস রপ্তানিকারক সমিতির একাধিক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। দুই দিনের সফরে মাউরো ভিয়েরা রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পরদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রথম ঢাকা সফরে আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত মঙ্গলবার তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘ব্রাজিল থেকে আমরা ভোজ্যতেল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করি। দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের রপ্তানি অনেকটাই এখনো আন–এক্সপ্লোরড রয়ে গেছে। ব্রাজিল বড় দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বেশি। ফলে তাদের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।’
কারও কারও মতে, ব্রাজিল যদি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়, তবে দেশটি থেকে গরুর মাংস আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চার-পাঁচজন কর্মকর্তার সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদক কথা বলেন। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, কোনো রকম শর্ত ছাড়াই এখনই দেশটি থেকে গরুর মাংস কেনা ঠিক হবে না। কারণ, এ মুহূর্তে ঢাকার অভিজাত অনেক এলাকায় আমদানি করা বেশ উন্নত মানের মাংস পাওয়া যায়। পাশাপাশি ব্রাজিল সব সময় সংরক্ষণবাদী নীতি অনুসরণ করে চলে। সে ক্ষেত্রে ব্রাজিল যদি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়, তবে দেশটি থেকে গরুর মাংস আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি করছে মুন্সিগঞ্জের ‘ডাচ ডেইরি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ব্রাজিল থেকে ৫০০ গরু আমদানি করছে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আসিফ মৃধা প্রথম আলোকে জানান, গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ব্রাজিল থেকে গরু আমদানির অনুমোদন নিয়েছে। এখন সুবিধাজনক সময়ে ওই ৫০০ গরু দেশে আনা হবে।
গরুর মাংস কেটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সান্তানা ডি পারনাইবা শহর, ব্রাজিল
গরুর মাংস কেটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সান্তানা ডি পারনাইবা শহর, ব্রাজিলফাইল ছবি: রয়টার্স
হতে পারে সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর কারিগরি সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি ও ক্রীড়া খাতে সহযোগিতা, বিশেষ করে ফুটবলের বিকাশে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিষয়ে ব্রাজিল এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৮টি দেশের সঙ্গে একটি রূপরেখা চুক্তি সই করেছে। এবারের সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতার ওই রূপরেখা চুক্তি সই হবে। চুক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই চুক্তিতে কোন কোন খাতে সহযোগিতা হবে, তা চিহ্নিত করা হয়। পরে নির্দিষ্ট খাতের আওতায় প্রকল্প নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের কারিগরি সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তিতে কৃষি, জ্বালানি, পানিসম্পদ, বনায়ন, শিক্ষা, মৎস্যসম্পদ খাতের বিষয়গুলো রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়গুলোই মূলত প্রাধান্য পাবে। ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য তিন বছরের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে এ মুহূর্তে ২৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বড় অংশই ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ভোজ্যতেল, চিনি ও তুলার পেছনে ব্যয় হয়েছে। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এ সফরে ইথানল রপ্তানি, তুলার রপ্তানি বাড়ানো, পোলট্রি ও ফিশ ফিড বিক্রির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। সেই সঙ্গে রয়েছে গরুর মাংস রপ্তানির বিষয়টি।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওষুধ ও তৈরি পোশাক রপ্তানি, ইথানল আমদানি বা দেশে ইথানল উৎপাদনে সহায়তা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতি, বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও সামুদ্রিক পর্যটনে সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হবে।