কারও হাতে এলজি, কারও হাতে শটগান, নীরব দর্শক পুলিশ
- আপডেট সময় ০৩:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
- / ১৫৯ বার পড়া হয়েছে
গায়ে ছাই রঙের টি-শার্ট। পরনে কালো প্যান্ট। কোমরে ঝুলছে চাবি। মুখে মাস্ক। মাথায় হেলমেট। আর হাতে এলজি। দলবল নিয়ে ছুটছেন, করছেন গুলিও। ফিল্মি স্টাইলে তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিলেন। আশপাশে পুলিশও আছে। কিন্তু সবাই নীরব দর্শক। ১৫ মিনিটের এ তাণ্ডব দেখা গেছে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায়।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় একই চিত্র। মাথায় হেলমেট, মুখে মাস্ক ও হাতে শটগান নিয়ে ছুটছেন আরেকজন। তিনিও গুলি ছুড়ছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর। সেটিও মুরাদপুরে। প্রকাশ্যে এমন অস্ত্রবাজি যারা করেছেন, তারা আসলে কারা? গতকাল বিকেলে নগরের আলোচিত বিষয় ছিল এটি।
এদিকে বিকেলের পর থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল আহাজারি। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের বিস্তারিত পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। এটা নিয়ে কাজ করছি আমরা। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলা হবে।’
অস্ত্রধারীরা আসলে কারা
স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ছাই রঙের টিশার্ট পরে এলজি দিয়ে গুলি করা ব্যক্তির নাম মো. ফিরোজ। তিনি একসময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও ডাকাতি মামলার আসামি। পরে নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে দাবি করতে থাকেন। যুবলীগ নেতা হিসেবে নগরে বিভিন্ন ব্যানার ও বিলবোর্ডও সাঁটানো হয় তাঁর নামে। ‘রিচ কিডস’ নামে একটি কিশোর গ্যাংও পরিচালনা করেন তিনি। অর্ধশতাধিক কিশোর ও তরুণ সক্রিয় এ গ্রুপে। নগরের মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ষোলশহর ও পাঁচলাইশ এলাকায় সক্রিয় এ গ্রুপ। ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের রোগ নির্ণয় কেন্দ্র শেভরন থেকে ১১ লাখ টাকা লুট করে নেওয়ার ঘটনায় তাঁকে অস্ত্র, গুলিসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই রাতে তিন রাউন্ড গুলিভর্তি নাইন এমএম পিস্তলসহ আবারও গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১৮ সালের ২ মে নগরের শানশাইন গ্রামার স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় জেলে যান ফিরোজ। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। আর শটগান হাতে গুলি করা ব্যক্তির নাম-পরিচয় গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দর্শক ছিল পুলিশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে বেলা ২টা থেকে অবস্থান করে দখল নেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। খবর পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুরাদপুরে জড়ো হন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মুরাদপুরে যান। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। গুলি চালান তারা। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীর হাতে অস্ত্র ও ছোড়া দেখা গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরের মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। মুরাদপুর ও ষোলশহরের মাঝখানে রাস্তার এক পাশে অবস্থান ছিল তাদের। মাঝে মাঝে রাস্তায় এসে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও পুরো সময় দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। এ ছাড়া সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড় ও নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির বিভিন্ন অলিগলিতে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে যাওয়া শুরু করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ।
কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মো. জাবের সমকালকে বলেন, ‘আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে। আগে থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে দখলে নেয় ছাত্রলীগ। আমরা মুরাদপুরে অবস্থান নিই। বিনা উস্কানিতে অস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালায় তারা। এতে আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন।’
তবে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, যারা স্বেচ্ছায় রাজাকার হতে চায়, তাদের আজ প্রতিহত করা হয়েছে। এখানে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নেই।’