ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হলে জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাবে না: সারজিস আলম

নিউজ ডেস্ক:-
  • আপডেট সময় ১১:২২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৫২ বার পড়া হয়েছে

ফ্যাসিবাদীরা ভারতে বসে পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে! পাল্টা গণঅভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হলে আপনাদের জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করলে কোটি মানুষের সমাগমে পিষে ফেলব। এই বাংলাদেশ ১৬ বছর পর স্বাধীনতার নতুন মুখ দেখেছে। সেই মুখের দিকে কেউ নজর দেওয়ার চেষ্টা করলে তার জায়গা এই দেশে হবে না।

বুধবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘একতার বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যাওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়ে সারজিস বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতিহত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সব দল, মত ও ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত আন্দোলন ছিল। সামনে বিন্দুমাত্র বাধা এলে জনতার স্রোতে পিষে দিতে হবে। আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে।

আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৬ বছর ধরে যারা অত্যাচার-জুলুম করে আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, তারা বাংলার মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে প্রতিরোধ করতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টদের দোসররা ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তারা রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে।

সরকারের পতনের প্রাথমিক বিজয়কে স্থায়ী করতে না পারা পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহবান জানিয়ে হাসানাত বলেন, সাপ্রদায়িক স¤প্রীতির বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। এই দেশে সবার প্রাথমিক পরিচয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। এখানে কেউ সংখ্যালঘু নয়। এই দেশে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না।

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে খুনি হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। একটি সফল গণবিপ্লবের পর দেশের সংখ্যালঘু ভাইদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না। আগামীকাল কেউ ষড়যন্ত্র করতে এলে তাদের প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় (সাহস) বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে শেখ হাসিনার দোসরেরা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা কেউ সংখ্যালঘু নই, সবাই বাংলাদেশি। ষড়ন্ত্রের অপচেষ্টা হলে আমরা সবাই মিলে তা রুখে দেব।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে আমরা সপ্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছি। মুসলমান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, দেশে একটি সা¤প্রদায়িক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করতে দেব না। আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জীবন দিয়ে আমরা তা মোকাবিলা করব।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহবায়ক আখতার হোসেন বলেন, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। আমরা স¤প্রীতির বাংলাদেশ চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য থেকে কেউ আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। দেশে যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে যা করা দরকার, তা করতে আমরা প্রস্তুত থাকব।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রভাষক মাহাদী হাসান, সাবেক ছাত্র আলী আহসান জুনায়েদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শাহবাগ থেকে গণপদযাত্রা বের করা হয়। পদযাত্রাটি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়া-প্রার্থনা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হলে জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাবে না: সারজিস আলম

আপডেট সময় ১১:২২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪

ফ্যাসিবাদীরা ভারতে বসে পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে! পাল্টা গণঅভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হলে আপনাদের জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করলে কোটি মানুষের সমাগমে পিষে ফেলব। এই বাংলাদেশ ১৬ বছর পর স্বাধীনতার নতুন মুখ দেখেছে। সেই মুখের দিকে কেউ নজর দেওয়ার চেষ্টা করলে তার জায়গা এই দেশে হবে না।

বুধবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘একতার বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যাওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়ে সারজিস বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতিহত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সব দল, মত ও ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত আন্দোলন ছিল। সামনে বিন্দুমাত্র বাধা এলে জনতার স্রোতে পিষে দিতে হবে। আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে।

আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৬ বছর ধরে যারা অত্যাচার-জুলুম করে আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, তারা বাংলার মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে প্রতিরোধ করতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টদের দোসররা ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তারা রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে।

সরকারের পতনের প্রাথমিক বিজয়কে স্থায়ী করতে না পারা পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহবান জানিয়ে হাসানাত বলেন, সাপ্রদায়িক স¤প্রীতির বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। এই দেশে সবার প্রাথমিক পরিচয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। এখানে কেউ সংখ্যালঘু নয়। এই দেশে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না।

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে খুনি হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। একটি সফল গণবিপ্লবের পর দেশের সংখ্যালঘু ভাইদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না। আগামীকাল কেউ ষড়যন্ত্র করতে এলে তাদের প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় (সাহস) বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে শেখ হাসিনার দোসরেরা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা কেউ সংখ্যালঘু নই, সবাই বাংলাদেশি। ষড়ন্ত্রের অপচেষ্টা হলে আমরা সবাই মিলে তা রুখে দেব।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে আমরা সপ্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছি। মুসলমান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, দেশে একটি সা¤প্রদায়িক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করতে দেব না। আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জীবন দিয়ে আমরা তা মোকাবিলা করব।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহবায়ক আখতার হোসেন বলেন, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। আমরা স¤প্রীতির বাংলাদেশ চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য থেকে কেউ আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। দেশে যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে যা করা দরকার, তা করতে আমরা প্রস্তুত থাকব।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রভাষক মাহাদী হাসান, সাবেক ছাত্র আলী আহসান জুনায়েদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শাহবাগ থেকে গণপদযাত্রা বের করা হয়। পদযাত্রাটি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়া-প্রার্থনা করা হয়।